'ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' পরিভাষার মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে বোঝানো হয়। যদিও এই শিল্প বিপ্লব এমন সব শিল্পক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত, যেসব ক্ষেত্রকে সাধারণত মৌলিক কোনো উৎপাদনমূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। স্মার্ট শহর এগুলির মধ্যে একটি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব :
প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে বাষ্প শক্তি এবং বিদ্যুতের মতো আবিষ্কারের মাধ্যমে। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যাপক উৎপাদন এবং অ্যাসেম্বলি লাইনের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল ইলেকট্রনিক্স, আই.টি. সিস্টেম এবং অটোমেশনের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। তবে এই তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়েই পৃথিবী সাইবার ফিজিক্যাল সিস্টেম বা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এবং প্রযুক্তি :
সহজ কথায় বললে, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ বলতে উৎপাদন শিল্পে অটোমেশন এবং ডেটা এক্সচেঞ্জ বা তথ্য বিনিময়ের যে ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন বর্তমানে চলমান রয়েছে, তাকে বোঝানো হয়। যার মধ্যে রয়েছে :
ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি)
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট অফ থিংস (আইআইওটি)
সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম (সিপিএস)
স্মার্ট উৎপাদন প্রণালী
স্মার্ট কারখানা
ক্লাউড কম্পিউটিং
কগনিটিভ কম্পিউটিং
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই
এই অটোমেশনের মাধ্যমে এমন এক ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, যেখানে কারখানার মেশিনগুলি ওয়্যারলেস সংযোগ এবং সেন্সর দিয়ে যুক্ত থাকতে পারে। এতে করে সম্পূর্ণ উৎপাদন প্রক্রিয়া একসঙ্গে পর্যবেক্ষণ এবং তদারকি করা যায়। একই সঙ্গে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়াও সম্ভব হয়। ওয়্যারলেস সংযোগ এবং বিভিন্ন মেশিনের সঙ্গে ফাইভ-জি সংযোগ সম্পূর্ণ রূপে চালু হলে এই ব্যবস্থাটি আরো ব্যাপক ভাবে উন্নত হবে। যার ফলে বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে দ্রুত তথ্য এবং নির্দেশনার আদানপ্রদান সম্ভব হবে। এবং একই সঙ্গে সম্ভব হবে প্রায় রিয়েল টাইম যোগাযোগ স্থাপন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ‘ডিজিটাল টুইন’ প্রযুক্তির সাথেও সম্পর্কিত। এ ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে যেকোনো সিস্টেম স্থাপন, এর কর্মপদ্ধতি এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির ভার্চুয়াল সংস্করণ তৈরি করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে যেকোনো শিল্পের যেকোনো পর্যায়েই আগের তুলনায় সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান এবং সিদ্ধান্ত নিতে আগে থেকেই পরীক্ষা করে দেখা যাবে। এরপর এই ভার্চুয়াল কপিগুলি বাস্তবেও তৈরি করা যাবে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত করা যাবে। এর মাধ্যমে সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমগুলি একে অপরের সঙ্গে এবং সমান তালে মানুষের সাথেও যোগাযোগ ও সহযোগিতা করতে পারবে। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ এর মাধ্যমে একটি সংযুক্ত রিয়েল টাইম ডেটা এক্সচেঞ্জ এবং অটোমেশন প্রক্রিয়া তৈরি হবে।
এই অটোমেশনে শিল্পের নানান ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ার মধ্যে আন্তঃসংযোগ, তথ্যের স্বচ্ছতা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এর ফলে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন আরও দ্রুতগতিতে হতে থাকবে। পরস্পরের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে পারে, এমন সংযুক্ত সিস্টেমের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শিল্প উৎপাদন সম্ভব হবে। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও প্রক্রিয়াগুলি ট্র্যাক করার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতাও বাড়াবে এই প্রযুক্তি।
ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর উদাহরণ :
অফলাইন প্রোগ্রামিং-এর মতো বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ইতিমধ্যেই নানান ব্যবসার মডেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভার্চুয়াল সিমুলেশনের মাধ্যমে পণ্য ডিজাইন থেকে শুরু করে উৎপাদন এবং বাজারজাত করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াই এখন স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী মোটরগাড়ি উৎপাদন এবং বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট কারখানায় ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ কার্যকরভাবে প্রয়োগ করার উদাহরণ রয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন সংযুক্ত এবং সম্পর্কিত প্রযুক্তিতে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছে। ডিজিটাল উৎপাদন অনেক ধরনের প্রকল্প এবং শিল্পের কেস স্টাডির মাধ্যমে বিকাশের একটি মূল ক্ষেত্র। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রোটোটাইপিং, ইলেকট্রনিক্স এবং সেন্সর-এর মতো ক্ষেত্রগুলি এবং পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ :
ইতিমধ্যে ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ এর যুগে রোবট এবং স্মার্ট মেশিনের মাধ্যমে মানুষ আরও উন্নত ও স্মার্টভাবে কাজ করতে পারবে। ইউনিভার্সাল রোবটস-এর প্রধান টেকনোলজি অফিসার এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা এসবেন ওস্টারগার্ড ব্যাখ্যা করে বলেন, “ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ কারখানাকে এমন একটি স্থানে পরিণত করবে, যেখানে সৃজনশীল লোকেরা এসে কাজ করতে পারবে এবং শ্রমিক এবং তাদের গ্রাহকদের জন্য আরও পার্সোনালাইজড এবং মানবিক অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করবে।”
মানুষ এবং মেশিন একসাথে যে উপায়ে কাজ করে, তার সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কাজ করবে শিল্প ৫.০। অর্থাৎ প্রায় ৬০%- এরও বেশি উৎপাদন, রসদ ও সাপ্লাই চেইন, কৃষি-চাষাবাদ, খনি, তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রধান রোবোটিক্স অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে।
তথ্যসূত্র : সিটি টাচ