কোথাও বেড়াতে গেলে কিংবা বিশেষ কোনো দিনে আমরা সুন্দর জামার সাথে সাথে সুগন্ধী ব্যবহার করে থাকি। সুগন্ধীর ক্ষেত্রে একেকজনের পছন্দ একেক রকম। তবে আমাদের অনেকেই অ্যালহোকলমুক্ত সুগন্ধী ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। বাজারে বর্তমানে অ্যালকোহলমুক্ত বিভিন্ন সুগন্ধী বের হলেও অনেকেই আতরের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়াও মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় দিনে পোষাকের সাথে আতর ব্যবহার করতে পছন্দ করেন! আজকে আমরা এমন একটি দামি গাছ সম্পর্কে জানব যেই গাছ থেকে অনেক দামি আতর এবং আগরবাতি প্রস্তুত করা হয়ে থাকে!
আগর গাছ, মোটামুটি সারাবিশ্বেই এই গাছটি আতর এবং আগরবাতি উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত। আবার একেক ভাষায় কিংবা ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে একে নানারকম নামও দেওয়া হয়েছে! আগর শব্দের আভিধানিক অর্থ উৎকৃষ্ট সুগন্ধীযুক্ত কাঠ। ইংরেজিতে এর নাম Aloe Wood, আরবিতে বলে উদ, হারবাল ইউনানি চিকিৎসায় এর নাম উদহিন্দ এবং আয়ুর্বেদিক ভাষায় এটি অগুরু নামে পরিচিত। বাংলা, আরবি এবং ফারসিসহ বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে অপভ্রংশ হয়ে আগর নামটির উৎপত্তি হয়েছে। আগর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম: Aquilaria malaccensis। এটি Thymelaeaceae পরিবারের অন্তর্গত। আগর গাছের আদি জন্মস্থান সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, তবে ধারণা করা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেইন ফরেস্টই আগর গাছের আদি জন্মস্থান! আগর গাছের কাঠ খুবই নরম হয়ে থাকে। এর পাতাগুলো অনেকটা বকুল গাছের পাতার মতো। আগর গাছের কল্যাণে আতর বর্তমানে বাংলাদেশের 'তরল সোনা' উপাধি লাভ করেছে।
বাংলাদেশে সিলেটে বর্তমানে আগর শিল্প বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। মোঘল আমলে সিলেটের আগর শিল্পের সুনার গোটা বিশ্বজুড়ে ছিল। তবে মোঘল আমলের পরে ধীরে ধীরে সেটা ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করে। বর্তমানে সুনামগঞ্জের ছাতকে সরকারিভাবে আগর শিল্প অব্যহত রয়েছে। এছাড়াও অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে আগর শিল্পের সম্প্রসারণে কাজ করে চলেছেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর, পাথারিয়া ও নিউ সমনবাগ অঞ্চল আগর চাষের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। বড়লেখা উপজেলায় ছোটো-বড়ো প্রায় ৩০০ টির মতো আগর আতর ফ্যাক্টরি রয়েছে!
গর্বের বিষয় হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিখ্যাত 'আল-হারামাইন' আগর আতরটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার একজন বাংলাদেশি 'মাহতাবুর রহমান' এবং এই আতর তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল যায় সিলেটের বড়লেখা উপজেলা থেকে! এই আতরটি বিশ্বের অন্যতম দামি আতর যার মূল্য হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ লাখ পর্যন্ত।
একটি উৎপাদনযোগ্য পূর্ণাঙ্গ আগর গাছ হতে ২০-২২ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে! বিশ্বে আগর শিল্পের প্রায় ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি বাজার মূল্য রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগর আতরের বেশ চাহিদা রয়েছে। মানের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের আগর কাঠকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়: ডবল সুপার, আগর প্রপার, কলাগাছি আগর, ডোম আগর ইত্যাদি। একটি জরিপে দেখা গেছে যে, অল্প পুঁজি বিনিয়োগে প্লান্টেশনের মতো লাভজনক ব্যবসা আর নেই! আগর উৎপাদন বেশ লাভজনক একটি ব্যবসা। মানের ওপর নির্ভর করে প্রতি তোলা আগরের মূল্য ৫-১৫ হাজার টাকা হতে পারে! এক কেজি কালো কাঠের মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকার মতো! মানের ওপর নির্ভর করে একটি আগরকাঠ সমৃদ্ধ আগর গাছের মূল্য ৫-২৫ লাখ টাকাও হতে পারে!
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন যে, আগর শিল্প বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হয়ে উঠতে পারে, যদি এই শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করা যায় এবং শিল্পকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা যায়।
-Hayat Mohammad Imran Arafat
| Team Science Bee