ক্যান্সার রোগীদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো কেমোথেরাপি (Chemotherapy) নামক চিকিৎসা পদ্ধতি। এখন প্রশ্ন হলো, কেমোথেরাপি কীভাবে চুল পড়িয়ে দেয়?
কেমোথেরাপি কী এবং এটা কীভাবে কাজ করে?
ক্যান্সার হলো এমন একটা রোগ, যেখানে শরীরের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই কোষগুলোকে ক্যান্সার কোষ বলা হয়। কেমোথেরাপি হলো এক ধরনের শক্তিশালী ওষুধ, যেটা এই দ্রুত বাড়তে থাকা ক্যান্সার কোষগুলোকে আক্রমণ করে এবং তাদের ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এই ওষুধগুলো কোষের ডিএনএ (DNA) বা বিভাজন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলো আর বাড়তে না পারে বা মরে যায়।
কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। কেমোথেরাপির ওষুধগুলো শুধু ক্যান্সার কোষগুলোকে আলাদা করে চিনতে পারে না। এগুলো শরীরের সব দ্রুত বাড়তে থাকা কোষের উপরই আক্রমণ করে। এবং আমাদের শরীরে কিছু স্বাভাবিক কোষ আছে, যেগুলো স্বাভাবিকভাবেই খুব দ্রুত বাড়ে—যেমন চুলের ফলিকল (Hair Follicles) কোষ, হজমতন্ত্রের কোষ, আর অস্থিমজ্জার কোষ।
চুলের ফলিকলের সঙ্গে কী সম্পর্ক?
চুলের ফলিকল হলো আমাদের ত্বকের ভিতরে ছোট ছোট গঠন, যেখান থেকে চুল গজায়। এই ফলিকলের কোষগুলো খুব দ্রুত বিভাজিত হয়, কারণ আমাদের চুল ক্রমাগত বাড়তে থাকে। গড়ে একজন মানুষের চুল মাসে প্রায় ১ সেন্টিমিটার বাড়ে, আর এজন্য ফলিকলের কোষগুলো সবসময় সক্রিয় থাকে। যেহেতু কেমোথেরাপি দ্রুত বিভাজনশীল কোষগুলোকে টার্গেট করে, তাই এই ওষুধ চুলের ফলিকলের কোষগুলোকেও আক্রমণ করে। ফলে ফলিকলের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চুল দুর্বল হয়ে যায়, এবং একসময় পড়ে যায়।
কেন সব চুল পড়ে না?
মজার ব্যাপার হলো, সব ক্যান্সার রোগীর চুল পড়ে না। এটা নির্ভর করে কেমোথেরাপির ধরন, ডোজ (Dose), আর রোগীর শরীরের উপর। কিছু কেমোথেরাপির ওষুধ, যেমন সাইক্লোফসফামাইড বা ডক্সোরুবিসিন, চুল পড়ার জন্য বেশি দায়ী। আবার কিছু ওষুধ শুধু চুল পাতলা করে, পুরোপুরি পড়িয়ে দেয় না। আর কিছু ক্ষেত্রে, রেডিয়েশন থেরাপি যদি মাথায় দেওয়া হয়, তাহলে শুধু সেই অংশের চুল পড়ে।
চুল পড়ার প্রক্রিয়া
১. কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে যাওয়া: কেমোথেরাপি চুলের ফলিকলের কোষগুলোর মাইটোসিস (Mitosis) প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। মাইটোসিস হলো কোষ বিভাজনের একটা ধাপ, যেটা চুল বাড়ার জন্য জরুরি।
২. চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়া: ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুলের গোড়া আর শক্ত থাকে না, ফলে চুল সহজেই খসে পড়ে।
৩. টেলোজেন ফেজে চলে যাওয়া: স্বাভাবিকভাবে চুলের একটা জীবনচক্র থাকে—অ্যানাজেন (বৃদ্ধি), ক্যাটাজেন (বিশ্রাম), আর টেলোজেন (পড়ে যাওয়া)। কেমোথেরাপি চুলকে সরাসরি টেলোজেন ফেজে ঠেলে দেয়, যার ফলে চুল পড়ে।
চুল কি আবার গজায়?
হ্যাঁ! ভালো খবর হলো, কেমোথেরাপি শেষ হলে চুল আবার গজাতে শুরু করে। সাধারণত চিকিৎসা শেষ হওয়ার ১-৩ মাসের মধ্যে ফলিকল আবার সক্রিয় হয়। তবে নতুন চুলের রঙ বা গঠন একটু ভিন্ন হতে পারে, যেমন কোঁকড়ানো চুল সোজা হয়ে যেতে পারে। এটা শরীরের প্রাকৃতিক পুনর্জনন প্রক্রিয়ার একটা অংশ।
ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা এখন অনেক এগিয়ে গেছে, এবং বিজ্ঞানীরা এমন ওষুধ খুঁজছেন যেগুলো শুধু ক্যান্সার কোষকে আক্রমণ করবে, সুস্থ কোষকে নয়।