উত্তরটা হ্যাঁ আবার না ৷ মানে এখন সম্ভব না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হলেও হতে পারে ৷ সুদূর মানে আসলেই সুদূর ৷ আগে বলি এখন কেন তুষারপাত হয় না ৷ রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আসা বরফ শীতল বাতাস দক্ষিণে এসে হিমালয়ে আটকে যায় ৷ ফলে যতটুকু বাতাস আসে তাতে হাড় কাঁপুনে শীত পড়লেও তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নামে না, তাই তুষারপাতও হয় না ৷
এবার আসি 'হ্যাঁ' নিয়ে ৷ কয়েক বছর আগে ২০৩০ সালে 'ছোট তুষারযুগ' (Mini Ice Age) আসবে বলে একটা খবর ছড়িয়েছিল ৷ এই 'ছোট তুষারযুগ' হবার কারণ হিসেবে সৌরচক্রকে দায়ী করা হয় ৷ সূর্যের কার্যকলাপ ১১ বছরের চক্রে চলমান থাকে ৷ এই ১১ বছরে কার্যকলাপ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছালে তাকে সোলার মিনিমাম এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে পোঁছালে সোলার ম্যাক্সিমাম বলে ৷ বর্তমানে সূর্য ২৫ নম্বর চক্রে আছে যা ২০১৯ সাল থেকে সোলার মিনিমাম শেষ হবার পর শুরু হয়েছে, শেষ হবে এর ১১ বছর পর ২০৩০ সালে ৷ তখন হবে আরেকটি সোলার মিনিমাম ৷
এই মিনিমাম আর ম্যাক্সিমাম পর্যবেক্ষণ করা হয় সূর্য পর্যবেক্ষণ করে তাতে কতগুলো সৌরকলঙ্ক দেখা যাচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে ৷ সৌরকলঙ্ক যত বেশি দেখা যাবে সূর্য তত সক্রিয় ৷ ২০৩০ সোলার মিনিমামের পরে সূর্য যখন ২৬ নম্বর চক্রে যাবে তখন সৌরকলঙ্কের সংখ্যা গড়ের চেয়েও নেমে যাবে বলে গণনা করে বের করা হয়েছে ৷ একে 'গ্র্যান্ড সোলার মিনিমাম' বলা হচ্ছে ৷ এরপর ২০৫০ সালের মধ্যে সূর্যের কার্যকলাপ গড়ের চেয়েও নেমে যাওয়ায় পৃথিবী তাপ কম পাবে এবং ছোট তুষারযুগ হবে ৷
কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে ৷ ১৬৪৫ - ১৭১৫ সালে যে গ্র্যান্ড সোলার মিনিমাম হয়েছিল তা মন্ডার মিনিমাম নামে পরিচিত ৷ তখন গড়ে যেখানে এক চক্রে ৪০,০০০ এর মতো সৌরকলঙ্ক তৈরি হবার কথা, সেখানে মাত্র ৫০ টির মতো তৈরি হয়েছিল ৷ সে সময় তুষারযুগ এসেছিল ৷ তবে অনেকের মতে সূর্য যেখানে এত বড় সেখানে সোলার মিনিমামের ফলে পৃথিবীতে তাপমাত্রা কমলেও সেটা আশঙ্কাজনক হবে না ৷ অনেকের মতে এই মন্ডার মিনিমামের সময়ে তুষারযুগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সম্পৃক্ততা আছে ৷ অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত সালফার সূর্যের তাপ আটকে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে পারে ৷ সুতরাং ২০৩০ - ২০৫০ এর সোলার মিনিমাম যে বাংলাদেশে তুষারপাত ঘটাবে তার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি ৷ তখন সোলার মিনিমামের পাশাপাশি আর কী কী ঘটবে তা তো এখনই বলা যায় না, তাই 'কাছাকাছি' বলা হয়েছে ৷
বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে তুষারপাত ঘটবে তুষার যুগে ৷ তুষার যুগ বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা সত্য নয় ৷ পৃথিবীর দুই মেরুতে বরফের উপস্থিতিই হলো তুষার যুগ ৷ সুতরাং পৃথিবী বর্তমানে তুষার যুগেই আছে যার নাম কোয়ার্টারনারি গ্ল্যাসিয়েশন ৷ বর্তমানে গ্লেশিয়াল মিনিমাম চলছে ৷ পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে এখন মেরু বরফ গলে ক্রমাগত কমছে যা মানুষের কর্মকাণ্ডে ত্বরান্বিত হচ্ছে ৷ প্রায় ৫০,০০০ বছর পর পৃথিবী আবার গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমাম পর্যায়ে যাবে এবং মেরু বরফের পরিমাণ অনেক বেড়ে উত্তরে ইউরোপ ও কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমানা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে দক্ষিণ আমেরিকার অংশবিশেষ ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত চলে আসবে ৷
বাংলাদেশে বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা অনেক নেমে যাবে ৷ সে সময় গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমাম কতটুকু অগ্রসর হবে তার উপর বাংলাদেশে কতটুকু তুষারপাত হবে তা নির্ভর করবে ৷
ক্রেডিটঃ রাশিক আজমাইন