২০২০ সালে Colossal Biosciences নামের একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত প্রাণীদের ডিএনএ ব্যবহার করে আবার তাদের নতুন করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। এরই ধারাবাহিকতায় তারা সম্প্রতি দাবি করে যে, তারা ১২৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া এক প্রজাতির নেকড়েকে আবার জন্ম দিতে পেরেছে। শুধু একটি নেকড়ে নয় বরং তিন-তিনটি জন্ম দিতে সক্ষম হয় তারা যেগুলো দিন দিন সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠছে। তাহলে এভাবে কি ডায়নোসরকেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
Colossal Biosciences যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছে সেটি হলো, বিলুপ্ত প্রাণীদের ফসিল বা প্রাপ্ত দেহ-খন্ডাবশেষ থেকে ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করা এবং সেই ডিএনএ কে CRISPR ও রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জিনোম এডিটিং করে একপ্রকার হাইব্রিড প্রাণীর জন্ম দেওয়া। কিন্তু এই হাইব্রিড প্রাণীটি হুবুহু বিলুপ্ত সেই প্রাণির মতো নাও হতে পারে কিন্তু দেখতে অনেকটা তাদের পূর্বপুরুষদের মতোই হবে এবং পুর্বপুরুষদের ইকোসিস্টেম লাভ করতে পারবে।
এখানে একটা জিনিস পরিষ্কার যে, বিলুপ্ত প্রাণিদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে তাদের ডিএনএ স্যাম্পল প্রয়োজন। তাই ডায়নোসরকে ফিরিয়ে আনতে ডায়নোসরের ডিএনএ লাগবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডায়নোসরের ফসিল থেকে ডায়নোসরের যেসব ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়েছে তাদের সব গুলোই অসম্পূর্ণ। অর্থাৎ তাদের প্রাপ্ত ডিএনএ এর মধ্যে ড্যামেজ আছে। কেননা সময়ের সাথে সাথে ডিএনএ ক্ষয় হতে থাকে।
বিজ্ঞানীদের মতে, কোনো প্রাণীর মারা যাওয়ার ১০ লক্ষ বা ১ মিলিয়ন বছরের মধ্যে যদি তাদের ডিএনএ স্যাম্পল পাওয়া যায় তাহলে সেই ডিএনএ স্যাম্পল থেকে সেই প্রাণী বা তার পুর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রাণী পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর বেশি হলে ডিএনএ অনেক ড্যামেজ হয়ে যায়, সেই ডিএনএ আর ভালো রকম কন্ডিশনে থাকে না। কিন্তু ডায়নোসররা বিলুপ্ত হয় প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে। এজন্য স্বাভাবিক ভাবেই প্রাপ্ত ডায়নসরের ডিএনএ থেকে ডায়নোসরকে বা তাদের পূর্বপুরুষকে আবার ফিরিয়ে আনার মতো কন্ডিশনে নেই। ডায়নোসরের ডিএনএ গুলো এখন প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তাই অন্তত এখনকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ডায়নোসরকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না এটা বলাই যায়।
আর অপরদিকে Colossal Biosciences যে নেকড়ে গুলোকে আবার জন্ম দিতে পেরেছে তারা বিলুপ্ত হয়েছিলো মাত্র পায় ১২৫০০ বছর আগে। তাই তাদের প্রাপ্ত ডিএনএ অনেকটা অক্ষত অবস্থাতেই পাওয়া গেছে। যদিও বা এটা নিয়ে অনেক কন্ট্রোভার্সি রয়েছে। অনেকেই বলছেন যে, এগুলোকে বিলুপ্ত সেই প্রজাতির প্রাণী বলা যায় না কারণ এই নেকড়ে গুলোতে বিলুপ্ত হওয়ার প্রজাতির মাত্র ২০ টি জিন রয়েছে যার মধ্যে ১৪ টি জিনই মডিফাই করা হয়েছে তাদের দেহের আকার, রঙ, মাসেলস ইত্যাদি পরিবর্তন করার জন্য। তাই আসল প্রজাতির সাথে এই প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের অনেক পার্থক্য রয়েছে।
আর এজন্যই Skoglund নামক এক আমেরিকান প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন যে, “একটি শিম্পাঞ্জি এর ডিএনএ-তে মানুষের মতো করে ২০ টি জিন মডিফাই করলে সেই শিম্পাঞ্জিকে কি মানুষ বলা যায় কিনা?” এছাড়াও বিলুপ্ত প্রাণীদের আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা কত টুকু যৌক্তিক এই নিয়েও অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। ডায়নোসরের মতো একটা প্রাণীকে পৃথিবীতে আনলে তারা মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে কিনা এটাও একটি বড় প্রশ্ন!
তথ্যসুত্রঃ
https://www.businessinsider.com/dire-wolf-brought-back-extinction-colossal-biosciences-2025-4
https://www.newyorker.com/magazine/2025/04/14/the-dire-wolf-is-back
https://www.syfy.com/syfy-wire/how-close-are-we-to-cloned-dinosaurs-the-science-behind-jurassic-park