জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটিকে অন্যভাবে বললে বলতে হবে "জিন এর ইঞ্জিনিয়ারিং"। এখন এই জিন বস্তুটি কী আসলে? অনেকেই জিন আর জ্বীন এর মধ্যে গুলিয়ে ফেলে। তাদের জন্যে বলি এই জিন জ্বীন নয়! এই জিন ইংরেজি gene থেকে এসেছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ঠিকঠাক বুঝতে হলে একটু আগে থেকে শুরু করতে হবে।
আমরা জানি আমাদের দেহ কোষ দিয়ে তৈরী। প্রতিটা কোষের ভিতরে আছে ক্রোমোসোম যা ধারণ করে ডিএনএ। ডিএনএ এর কাজ হলো তথ্য সংরক্ষণ করা।
তথ্য!! একটা কোষের আবার কী তথ্য দরকার! আমরা বুঝি আর না বুঝি, আমাদের প্রতিটা কোষ আসলে প্রতি মুহুর্তে হাজারো কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের জন্যে যে নির্দেশনা দরকার তা সরবরাহ করে ডিএনএ।
কোষের কাজ গুলো মূলত প্রোটিন নামক অণু সম্পাদন করে। প্রোটিন অনেকটা ন্যানোরোবোট এর মত আমাদের কোষের প্রতিটা কাজ করে। তো এই প্রোটিন কীভাবে তৈরী হয়?
প্রোটিন তৈরী হয় একের পর এক বিভিন্ন রকম এমাইনো এসিড যুক্ত হয়ে। এমাইনো এসিডের ক্রম আলাদা হলে প্রোটিনটা কাজ ও করবে আলাদা। আর ডিএনএ তে ঠিক এই তথ্য ই থাকে - কোন এমাইনো এসিডের পরে কোন এমাইনো এসিড বসে প্রোটিন তৈরী করবে।
ডিএনএ এর যে অংশ এরকম একটা পূর্ণাঙ্গ প্রোটিন তৈরী করার তথ্য ধারণ করে তাকেই বলে জিন। আমাদের প্রতি ডিএনএ তে মোট ২২০০০ জিন রয়েছে।
এখন আসি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রসঙ্গে। যদি কোনভাবে ডিএনএ এর এই তথ্য পাল্টানো হয়, তাহলে ফলশ্রুতিতে ভিন্ন এক প্রোটিন পাওয়া যাবে যা একদম ভিন্ন এক কাজ করবে। আবার চাইলে অন্য কোন প্রজাতির জিন এনে আরেক প্রজাতির ডিএনএ এর ভিতরে দিয়ে দেওয়াও সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বিটি বেগুন এর নাম বলা যায়। বিটি বেগুন এ বেগুন গাছের ডিএনএ তে একটা ব্যাক্টেরিয়ার জিন যুক্ত করা হয়। ফলে বেগুন গাছ নিজে থেকেই নতুন এক বিষ (প্রোটিন) তৈরী করা শুরু করে যা মানুষের কোন ক্ষতি না করলেও বেগুণের পোকার জন্যে প্রাণঘাতি।
এছাড়াও বিভিন্ন মজার কাজে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োগ করা যায়। যেমন জোনাকি এর আলো সৃষ্টিকারী জিন এক উদ্ভিদে সরবরাহ করার পরে সেই গাছ জোনাকীর মত আলো দেয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এরূপ বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা যেন ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু পুরো বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ একে ভালোভাবে মেনে নিচ্ছেনা। বিশ্বের অনেক দেশেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরী করা শষ্য নিষিদ্ধ এখনও।
MRIDUL