অদৃশ্য বস্তু কী আবিষ্কার করা সম্ভব বর্তমান সময়ের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
414 বার দেখা হয়েছে
"প্রযুক্তি" বিভাগে করেছেন (5,380 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (5,060 পয়েন্ট)

ফুটবল বা ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলার সময় বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় স্ক্রিনে আলো ফেলে খেলা দেখানো হয়। খেলা হচ্ছে ইউরোপে, আর আমরা বাংলাদেশে বসে প্রজেক্টরের সাহায্যে তার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি বড় স্ক্রিনে। এবার মনে করুন, আপনি যে পর্দায় খেলা  দেখছেন, সেই পর্দার পেছনেই রয়েছে একটি রেললাইন, রেললাইন ধরে কিছুক্ষণ পরপরই ট্রেন যাওয়া-আসা করে। এখন কেউ যদি পর্দার পেছনে বসে একটি ট্রেন যাওয়ার দৃশ্য ভিডিও করে এবং সেই ভিডিওটার রিয়েল-টাইম এবং লাইভ দৃশ্য যদি প্রজেক্টরের সাহায্যে পর্দায় ফেলা হয়, তাহলে আপনি পর্দার ঠিক পেছনের দৃশ্যই পর্দার সামনে দেখতে পাবেন।

যদি পর্দায় ফেলা ভিডিওটির সাইজ এবং পজিশন এমনভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয় যে, আপনার অবস্থান থেকে ট্রেনটাকে যেমন দেখা যেতো, পর্দায়ও ঠিক তেমনই দেখা যাচ্ছে, তাহলে আপনার কাছে মনে হবে পর্দাটা সেখানে নেই, বরং আপনি সরাসরি ট্রেনটাকেই দেখতে পাচ্ছেন। অর্থাৎ, পর্দা এবং পর্দার পেছনে থাকা ক্যামেরাম্যান আপনার কাছে অদৃশ্য হয়ে গেলো! এবার, পর্দাটাকে আপনার গায়ের পোশাক হিসেবে পরিয়ে দিলে কেমন হবে?

ঠিক এই কাজটাই পরীক্ষামূলকভাবে করে দেখিয়েছেন জাপানি গবেষক ড. সুসুমু তাচি। এক্ষেত্রে ড. তাচি বিপরীতমুখী প্রতিফলনকারী  পদার্থ (Retro-reflective materials) ব্যবহার করেছেন। আমরা রাতের বেলায় গাড়ির আলোয় রাস্তার পাশে নাইট-ডিউটিতে কর্মরত শ্রমিকদের গায়ে কিংবা ট্রাফিক পুলিশের গায়ে পরিহিত পোশাকে এক ধরনের স্টিকার বা বেল্টের মতো অংশ চকচক করতে দেখি। সেটাও রেট্রো রিফ্লেকটিভ পদার্থ দিয়ে তৈরি। এধরনের পদার্থ আলোকে একটি নির্দিষ্ট দিকে বেশ দক্ষতার সাথে প্রতিফলিত করতে পারে। নিচের ভিডিওটা দেখলে ড. তাচির পদ্ধতিটি পুরোপুরি বোধগম্য হবে।

 

 

তবে এর সীমাবদ্ধতা হলো, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই এই পদ্ধতি কাজ করবে। দর্শকের অবস্থান বদলে গেলে কিংবা ক্যামেরার সাপেক্ষে দৃশ্যের দূরত্ব খুব বেশী পরিবর্তন হলে এই পদ্ধতিটা কার্যকারিতা হারায়। তবুও পদ্ধতিটা চমৎকার ও সম্ভাবনাময়, তাই নয় কি?

ড. তাচি মনে করেন, এই প্রযুক্তিটি নিছক মজা করার জন্য নয়। বরং চিকিৎসাবিদ্যায় এটাকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন ডাক্তার কোনো সার্জারী করার সময় তার নিজের হাতের দ্বারা রোগীর কোনো একটি অঙ্গের কিছু অংশ ঢাকা পড়ে যেতে পারে। ফলে ডাক্তার নিজের হাতের জন্যই রোগীর সেই অঙ্গটি ভালো করে দেখতে পান না। সূক্ষ্ম কোনো অপারেশনের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ড. তাচির পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা গেলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে সার্জন তার হাতের গ্লাভসের উপরেই দেখতে পাবেন, সেই হাতের অপর পাশে কী আছে। এছাড়াও গাড়িতে থাকা একজন চালক গাড়ির আশেপাশের কিছু অংশ দেখতে পান না। চালকের এমন ‘ব্লাইন্ড স্পট’ও এই প্রযুক্তির সাহায্যে দূর করা যেতে পারে। 

রেট্রো রিফ্লেকটিভ প্যানেল ব্যবহার করে অদৃশ্য হওয়ার খুব সুন্দর ও অনেকটাই বাস্তবসম্মত একটি দৃশ্য দেখানো হয়েছে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের দ্য অ্যাভেঞ্জারস  মুভিতে। সেখানে আমরা যে দানবাকার হেলিক্যারিয়ার দেখতে পাই, সেটিও ড. তাচির ব্যবহৃত পদ্ধতির মতো একই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলে। তবে সেটা করা হয় অনেকগুলো প্রজেক্টরের মাধ্যমে এবং আরও জটিলভাবে।

বেশ কয়েকটি প্রজেক্টর থেকে অনেকগুলো রেট্রোরিফ্লেকশন প্যানেলের উপর নিয়ন্ত্রিত আলো ফেলে নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলে দ্য অ্যাভেঞ্জারস মুভির বিশাল হেলিক্যারিয়ারটি; Image source: wikia.org

ফলস ইমেজ প্রজেকশন

যখন মোবাইলের পেছনের ক্যামেরা দিয়ে কোনো দৃশ্য ভিডিও করা হয়, তখন একইসময়ে ক্যামেরা মোবাইলের পিছনের দিকের দৃশ্য ধারণ করতে থাকে এবং সেটা মোবাইলের সামনের ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হতে থাকে। যদি কোনোভাবে মোবাইলের ক্যামেরাটা কোনো রুমের দরজার ভেতরের দিকে ও ডিসপ্লেটা দরজার ঠিক অপরপাশে বাইরের দিকে সেট করা যায় এবং এই অবস্থায় ক্যামেরা-ডিসপ্লে দুইটাই চালু রাখা যায়, তাহলে দরজা বন্ধ থাকলেও বাইরে থেকে দেখা যাবে রুমের ভেতর কী হচ্ছে। তখন মনে হবে দরজা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও দরজার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। ডিসপ্লেটা একদম পাতলা ও বর্ডারলেস হলে এবং ক্যামেরা ভালো মানের হলে, দরজার সেই অংশটা একদমই নেই মনে হবে। অর্থাৎ মনে হবে দরজার সে অংশটা দেখা যাচ্ছে না, বরং সে অংশের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে।

এখন এমন একটি পোশাকের কথা চিন্তা করুন, যেটার পুরোটা জুড়ে অনেক উচ্চ প্রযুক্তির অসংখ্য ছোট ছোট ক্যামেরা এবং একই সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, মাত্র কয়েক পিক্সেলের বহুসংখ্যক ডিসপ্লে লাগানো আছে। সেই পোশাকের পেছন দিকের ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও পোশাকের সামনের ক্ষুদ্র ডিসপ্লেগুলোতে দেখানো হলে আপনি সামনে থেকে পোশাকের উপর পোশাকের পেছনের দৃশ্য দেখতে পাবেন। কাজটা খুব ভালোভাবে করতে পারলে মনে হবে, আপনি পোশাকটার মধ্য দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন। অর্থাৎ পোশাকটা যেখানে আছে, সেখানে কিছুই নেই বলে মনে হবে।

একই কথা, সেই পোশাক পরিহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেহেতু সে পোশাকের ভেতরেই আছে, সুতরাং তাকেও দেখা যাবে না। অর্থাৎ একটু আগে যে মোবাইলের ক্যামেরা এবং ডিসপ্লের কথা বলা হলো, সেরকম কাজই হচ্ছে এখানে। পোশাকের পেছনে, ডানে-বায়ে, সবদিক থেকেই একই কথা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এটিও একটি সম্ভাব্য পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে কোনও কিছুকে অদৃশ্য করে ফেলা যেতে পারে।

 

 

হলিউডের বিখ্যাত নায়ক টম ক্রুজ অভিনীত মিশন ইমপসিবল: ঘোস্ট প্রটোকল মুভিতে এমনই একটি বিষয় দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। এতে একজন গার্ডের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ইথেন হান্ট এবং বেনজিকে ক্রেমলিনকে একটি সুরক্ষিত ও গোপন কক্ষে ঢুকতে দেখা যায়। তারা একটি বড় এবং উচ্চ প্রযুক্তির ডিসপ্লেকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে পেছনের দৃশ্যকে সে ডিসপ্লেতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আর নিজেরা গার্ডের চোখে অদৃশ্য রয়ে গিয়েছিলেন। তবে মুভিতে এটাও দেখা যায় যে, এই কাজটা করতে গেলে দর্শকের দৃষ্টিকেও মনিটরিং করতে হয়।

ফলে একজন দর্শকের চোখে অদৃশ্য হওয়ার কাজটা যতটা সহজে করা যায়, দর্শকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে কাজটা মোটেও ততটা সহজ থাকে না। কারণ একেকজন দর্শক টার্গেটের (যে ব্যক্তি বা বস্তুকে অদৃশ্য করতে হবে) পেছনে থাকা একেকটা বস্তুকে একেক কোণ থেকে এবং একেক দূরত্ব থেকে দেখবে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন ক্যামেরাকে সে অনুসারে পেছনের দৃশ্য ধারণ করতে হবে এবং ডিসপ্লের ভিন্ন ভিন্ন অংশকেও সে অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন কোণে ভিন্ন ভিন্ন ছবি ফুটিয়ে তুলতে হবে। ক্যামেরা ও ডিসপ্লের এই সমন্বয় করার এলগরিদমটা এতটাই জটিল ও কঠিন হবে যে, এই কাজটার জন্য মোটামুটি শক্তিশালী একটা সুপার কম্পিউটারই ব্যবহার করতে হবে!

অদৃশ্য হওয়ার জন্য এমন একটি পোশাক তৈরি করতে গেলে এবং তার আনুষঙ্গিক সিস্টেম দাঁড় করাতে গেলে কী কী করতে হবে এবং কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণাই করে ফেলেছেন ফ্র্যাংকো জ্যাম্বোনেলি এবং মার্কো মামেই নামক দুই গবেষক। তাদের গবেষণাপত্রে দেখা গেছে এমন একটি পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম তৈরি করতে প্রয়োজন কমপক্ষে ৫,০০,০০০ ইউরো!

বাস্তবে খরচটা এরচেয়ে অনেক বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এখানে বলে রাখা ভালো যে, তারা এই সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে যেসব উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাংশের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন, তার সবগুলোই বর্তমান বাজারে সহজপ্রাপ্য নয়। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষে একসময় সেগুলো যে সহজলভ্য হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।

এরকম একটি ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিডিএস আর্কিটেক্ট (GDS Architects Inc.) । তারা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের নিকটবর্তী ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে টাওয়ার ইনফিনিটি (Tower Infinity) নামক এক স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যেটাকে প্রযুক্তির সাহায্যে দৃষ্টির আড়াল করে রাখা যাবে!

টাওয়ার ইনফিনিটি দর্শকের চোখে কতটা দৃশ্যমান হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে (দৃশ্যগুলো কাল্পনিক); Image Credit: gdsarchitect.com

নকশা অনুসারে, টাওয়ারটির বাইরের দেয়ালজুড়ে বিভিন্ন কোণে থাকবে অসংখ্য উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা এবং LED ডিসপ্লে। একপাশের ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য অপর পাশের LED ডিসপ্লেতে দেখানো হবে। বাইরে থেকে একজন দর্শক যখন এই টাওয়ারের দিকে তাকাবেন, তখন তিনি টাওয়ারটির পেছনের দৃশ্য দেখতে পাবেন। ফলে এটিকে অনেকটাই অদৃশ্য বলে মনে হবে।

রচেস্টার ক্লোক

সম্প্রতি রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক খুব অল্প খরচে এবং খুব কার্যকরভাবে অদৃশ্য হওয়ার এক সম্ভাবনাময় উপায় আবিষ্কার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের এই কাজটাই কোনো কিছুকে অদৃশ্য করার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী, প্রয়োগসাধ্য ও বাস্তবসম্মত উপায়। তাদের কাজের ফর্মুলাটি খুবই সাধারণ। তারা দেখিয়েছেন, একটি বস্তু থেকে নির্গত বা প্রতিফলিত আলোকরশ্মিগুচ্ছকে দর্শকের চোখে সরাসরি পৌঁছানোর পূর্বে উপর্যুপরি কয়েকটি উত্তল লেন্সের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে দেওয়া হলে আলোকরশ্মিগুলোর গতিপথ কয়েকটা জায়গায় খুবই সংকীর্ণ হয়ে আসে। সেই সংকীর্ণ পথের আশেপাশের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে দর্শকের দৃষ্টির সাপেক্ষে অদৃশ্য স্থান তৈরি হয়। সেসব স্থানে কোনো বস্তু রাখা হলে দর্শকের চোখে তা ধরা পড়বে না।

 

 

এ প্রক্রিয়াটি এতই সহজসাধ্য ও সহজবোধ্য যে, কারো কাছে মোটামুটি শক্তিশালী কয়েকটি উত্তল লেন্স থাকলে এবং লেন্স ও প্রতিসরণ-সংক্রান্ত কিছু মূল ধারণা থাকলে, ঘরে বসেই সামান্য হিসাব-নিকাশ দ্বারা এটি পরীক্ষা করা সম্ভব।

তবে এর সীমাবদ্ধতা হলো, লেন্সের ঠিক পেছনে মাঝ (লেন্সের প্রধান অক্ষ) বরাবর রাখা কোনো কিছুকে অদৃশ্য করা যাবে না। তবে প্রধান অক্ষকে ঘিরে চারপাশের একটা নির্দিষ্ট স্থানজুড়ে অদৃশ্য স্থান তৈরি হবে। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় প্রধান অক্ষের উপর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর আশেপাশের যে স্থানটুকুকে অদৃশ্য করা যাবে, ত্রিমাত্রিকভাবে সেই স্থানটুকুর আকৃতি হবে অনেকটা ডোনাটের মতো।

মেটাম্যাটেরিয়াল

মেটা উপাদানগুলো একটু আজব ধরনের। প্রকৃতিতে যেসব উপাদান পাওয়া যায়, তাদের কিছু নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকে। এরা বিভিন্ন অবস্থায় একেক প্রকার শক্তির প্রভাবে একেক ধরনের আচরণ করে থাকে। যেমন কোনো অস্বচ্ছ মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণ ঘটবে না, এটি সেই অস্বচ্ছ বস্তু বা মাধ্যমের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। আবার সাধারণ তাপমাত্রায় তামার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হবে, এটিও একটি স্বাভাবিক ঘটনা বা তামার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।

কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষকরা গবেষণাগারে এমন কিছু পদার্থ তৈরি করেন, যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। যেসব বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিকভাবে সাধারণত কোনো বস্তু বা পদার্থে পাওয়া যায় না। কিন্তু এতে বিজ্ঞানের কোনো সূত্রের লঙ্ঘন হয় না। কেননা, গবেষকরা এসব উপাদান তৈরি করার জন্য প্রাকৃতিক উপাদানই ব্যবহার করেন। সেসব উপাদানের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেই কাজে লাগান। গবেষণাগারে তৈরি এরূপ কৃত্রিম উপাদানকেই মেটা-উপাদান (Metamaterials) বলা হয়। মেটা-উপাদান তৈরি করার সময় গবেষকরা এর মূল উপাদানগুলোকে এমনভাবে সমন্বিত করেন এবং তাদের গাঠনিক সজ্জাকে এমনভাবে নির্ধারণ করেন যেন, সেসব উপাদানে বিদ্যমান প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেই ব্যবহার করে নতুন কোনো বৈশিষ্ট্য লাভ করা যায়।

৪টি আয়নার সাহায্যে উৎস থেকে নির্গত আলোরশ্মির পথকে বারবার পরিবর্তন করে সবশেষে দর্শকের চোখে পড়তে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দর্শক খরগোশটিকে দেখতে পাবেন না। জাদুকররা এরকম কৌশল প্রায়ই ব্যবহার করে থাকেন; Image source: duke.edu

এর একটি চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে, অপটিকাল (Optical/Photonic Metamaterials) বা আলোকীয় মেটা-উপাদান। আমরা জানি, প্রকৃতিতে বিদ্যমান পদার্থগুলোর সাথে আলোর মিথস্ক্রিয়ার ফলে কয়েকটি প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ঘটনা ঘটে যেমন প্রতিফলন, প্রতিসরণ, বিচ্ছুরণ, আলোর শোষণ, বিক্ষেপণ ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা অদৃশ্য হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, শুধুমাত্র সাধারণ প্রতিসরণ বা প্রতিফলন ব্যবহার করে কাজটা করা অনেক কঠিন এবং ঝামেলাপূর্ণ। তাই তারা একটু ভিন্ন পথে হাঁটার চিন্তা করলেন।

একটি স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে আরেকটি ভিন্ন স্বচ্ছ মাধ্যমে আলো প্রবেশ করলে প্রতিসরণের ফলে আলোর দিক পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন কতটুকু হবে, তা জানা যায় মাধ্যম দুটোর প্রতিসরণাঙ্ক থেকে। প্রতিসরণাঙ্কের মান প্রাকৃতিকভাবে সর্বদাই ধনাত্মক হয়। কিন্তু গবেষকেরা এমন এক ধরনের আলোকীয় মেটা-উপাদান বানানোর চেষ্টা করছেন, যার প্রতিসরণাঙ্ক হবে ঋণাত্মক!

যদি এমন মেটা উপাদান তৈরি করা যায়, তাহলে বিজ্ঞানীরা উপযুক্ত হিসাব নিকাশের মাধ্যমে খুব সহজেই আলোর গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে আলোকরশ্মিকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পাশ দিয়ে বাঁকিয়ে দর্শকের চোখে পৌঁছে দিতে পারবেন। ফলে সেই ব্যক্তি বা বস্তুটিকে আর দেখা যাবে না। এভাবে মেটা উপাদান দিয়ে বিশেষ নকশার মাধ্যমে পোশাক তৈরি করা গেলে, সেই পোশাক পরিহিত মানুষটি সহজেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারবেন।

কোনো কিছুকে অদৃশ্য করার জন্য জাদুকরদের মতো আয়না ব্যবহার করার বদলে মেটা উপাদান ব্যবহার করলে কাজটা আরও সুচারুভাবে এবং বিস্তৃত পরিসরে করা যাবে; Image source: anu.edu.au

ইতোমধ্যে, ২০০৬ সালে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন আলোকীয় মেটা উপাদান তৈরি করেছেন, যেটা শুধুমাত্র মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের (আলোক তরঙ্গের মতোই, তবে অদৃশ্য তরঙ্গ) উপর কাজ করে। এই মেটা উপাদান দিয়ে একটি ক্ষুদ্র বস্তুকে মুড়িয়ে সেটাকে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের প্রতি অদৃশ্য করে দেখিয়েছেন তারা।

তবে দৃশ্যমান আলোকে প্রভাবিত করতে সক্ষম, এমন মেটা উপাদান তৈরি হতে আমাদেরকে আরও বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কেননা এই ধরনের গবেষণা এখনো পর্যন্ত একদম প্রাথমিক পর্যায়েই আছে। অদূর ভবিষ্যতের কোনো একদিন এই গবেষণা সাফল্যের মুখ দেখলে হয়তো বাস্তবে অদৃশ্য পোশাকের নমুনা দেখা যাবে। কিংবা হয়তো কখনোই দেখা যাবে না; কারণ পোশাকটা তো হবেই ‘অদৃশ্য’!

শেষকথা

অদৃশ্য হওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ না থাকলেও, এই বিষয়টাতে সম্ভবত সমরবিদদের আগ্রহই সবচেয়ে বেশি। মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনী ইতোমধ্যেই এমন প্রযুক্তি হাতে পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যেটা তাদের বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে অদৃশ্য হয়ে যেতে কিংবা শত্রুর চোখে কম দৃশ্যমান থাকতে সাহায্য করবে। খুব সম্ভবত যুদ্ধের প্রয়োজনেই কোনো একদিন এই প্রযুক্তি  আলোর মুখ দেখবে; মানবজাতির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনে। পরবর্তীতে সেই প্রযুক্তি মানুষের জন্য ব্যবহারোপযোগী করা হয়েছে।

হাইপারস্টেলথ নামক কানাডিয়ান এক কোম্পানি দাবি করছে যে, তারা ইতোমধ্যে অদৃশ্য হওয়ার প্রযুক্তি বা Cloaking Technology আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু এরকম আজগুবি দাবির স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ এবং সেই প্রযুক্তির তত্ত্ব সম্পর্কে কোনোরূপ ধারণা দিতে না পারায় সাইবার জগতে তাদের এই দাবি নিয়ে কেবল হাসি-তামাশাই চলছে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+5 টি ভোট
3 টি উত্তর 1,901 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 314 বার দেখা হয়েছে
+6 টি ভোট
1 উত্তর 498 বার দেখা হয়েছে

10,776 টি প্রশ্ন

18,469 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

271,468 জন সদস্য

56 জন অনলাইনে রয়েছে
3 জন সদস্য এবং 53 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Shariar Rafi

    420 পয়েন্ট

  2. Tazriyan

    190 পয়েন্ট

  3. Khandoker Farhan

    110 পয়েন্ট

  4. Eyasin

    110 পয়েন্ট

  5. LeathaMusgro

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...