বিজ্ঞান: বিজ্ঞান (ইংরেজি: Science) হচ্ছে বিশ্বের যাবতীয় ভৌত বিষয়াবলী পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, যাচাই, নিয়মসিদ্ধ, বিধিবদ্ধ ও গবেষণালদ্ধ পদ্ধতি যা জ্ঞানকে তৈরিপূর্বক সুসংগঠিত করার কেন্দ্রস্থল। ল্যাটিন শব্দ সায়েনটিয়া থেকে ইংরেজি সায়েন্স শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ বিশেষ জ্ঞান। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষ জ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তি বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানবিদ কিংবা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত হয়ে থাকেন।
প্রযুক্তি: প্রযুক্তি (Technology) বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রজাতিটি কেমন খাপ খাওয়াতে পারছে এবং তাকে কিভাবে ব্যবহার করছে তাও নির্ধারণ করে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল। অবশ্য অনেক প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন থেকেই আবার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অনেক জ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। মানব সমাজের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা যায়, "প্রযুক্তি হল কিছু প্রায়োগিক কৌশল যা মানুষ তার প্রতিবেশের উন্নয়নকার্যে ব্যবহার করে।" যেকোন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তা দক্ষভাবে ব্যবহারের ক্ষমতারকেও প্রযুক্তি বলা হয়।
কিছু আনুষঙ্গিক পার্থক্য রয়েছে এদের মধ্যেঃ
বুৎপত্তি অনুসারে বিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞান, প্রকৌশল হচ্ছে জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ, প্রযুক্তি হচ্ছে প্রকৌশলের ফলাফল।
বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য প্রকৃতির জ্ঞান আহরণ, এর প্রয়োগ বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত নয়। প্রকৌশল জ্ঞান আহরণের দিকে ব্রতী নয়, এর একমাত্র উদ্দেশ্য অর্জিত জ্ঞানকে ব্যবহারিক কাজে লাগানো। প্রযুক্তি মানুষের কাজে ব্যবহৃত হয় ও মানুষের জীবনকে সাচ্ছন্দ্যমণ্ডিত করে তোলে।
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রকৃতি সম্বন্ধে অগ্রীম ভবিষ্যৎবাণী করতে সক্ষম। প্রকৌশল বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোনো সমস্যা নিরসনের উপায় তৈরি করতে সক্ষম। প্রযুক্তি মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম।
বিজ্ঞান জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে, প্রকৃতি যে সকল নিয়মের মধ্য দিয়ে চলে, তা জানার মধ্যে খারাপের কিছু নেই। এটি শুধুই জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়া বিশেষ। প্রকৌশল বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা নিরসন করে থাকে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন করাই প্রকৌশলের কাজ। এখানেও ভাল বা খারাপের কোনো অবকাশ নেই। প্রযুক্তি হচ্ছে আধুনিক পণ্য বা ব্যবস্থা যা গড়ে ওঠে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে প্রকৌশলের মধ্য দিয়ে কাজে লাগিয়ে। প্রযুক্তি ভাল বা খারাপ হতে পারে। মানুষের কল্যাণের জন্য যেমন প্রযুক্তি রয়েছে, তেমনি রয়েছে মানুষের জন্য ক্ষতিকর প্রযুক্তি। আবার একই প্রযুক্তির ভাল ও খারাপ ব্যবহারও রয়েছে, যার দায় বর্তাবে একমাত্র ব্যবহারকারীর উপর।