কণ্ঠস্বর বা গলা বসে যাওয়া, কথা ফ্যাসফেসে হয়ে যাওয়া আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ স্বাস্থ্য-সমস্যা মনে হলেও আদতে তা না-ও হতে পারে। গলা ভাঙাকে অনেকেই খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু এই গলা ভাঙাই অনেক সময় মারাত্মক কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গলা বসা বা কণ্ঠস্বর ভাঙার কারণ হলো শ্বাসনালিতে সংক্রমণ। এমনকি সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা দীর্ঘক্ষণ জোরে কথা বললেও গলার স্বর ভাঙতে পারে। তবে দীর্ঘদিন এই সমস্যা হচ্ছে, কিছুতেই সারছে না, বিশেষ করে আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন, তবে সতর্ক হোন। ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসারে ভোকাল কর্ড বা এর স্নায়ু আক্রান্ত হয়ে গলা বসে যেতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায়ও অনেক সময় গলার স্বর বসে যায়। এ ছাড়া গলার কোনো অস্ত্রোপচারে ভোকাল কর্ড বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গলা বসে যেতে পারে।
সাধারণ গলা বসায় চিকিৎসা:
১. লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করাটা সবচেয়ে সাধারণ এবং একই সঙ্গে কার্যকর পদ্ধতি। দিনে অন্তত চারবার লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে। গলা ভাঙা উপশমে ভালো আরেকটি পদ্ধতি হলো গরম বাষ্প টানা। ফুটন্ত পানির বাষ্প যদি দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট মুখ ও গলা দিয়ে টানা হয়, তবে উপকার হবে।
২. ভাঙা গলায় হালকা গরম লেবুপানি ও আদা বেশ কার্যকর। শুকনো আদায় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে, যা গলার বসে যাওয়া স্বরকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারে।
৩. যাঁরা জোরে কথা বলেন, যাঁদের সর্বদা কণ্ঠ ব্যবহার করতে হয়, যেমন সংগীতশিল্পী, রাজনীতিবিদ—তাঁরা কিছুদিন কণ্ঠের বিশ্রাম নেবেন। এই বিশ্রামের ফলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ কমে আসবে।
তবে এমন সব চিকিৎসা অনেক সময় কাজে দেয় না। দিনের পর দিন ধরে গলার স্বর বসে থাকে। গলা দিয়ে কথা বের হতে চায় না। স্বর বদলে যায়। ফ্যাসফেসে আওয়াজ হয়। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ আরও বিপজ্জনক কোনো রোগের সম্মুখীন হন। তাই জেনে নিতে হবে বিপদচিহ্নগুলো।
বিপদচিহ্ন:
১. গলা একবার বসে যাওয়ার পর চার থেকে ছয় সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।
২. সাধারণভাবে ৫০ বছরের ওপরের যেকোনো রোগীর গলা যদি কোনো কারণ ছাড়া বসে যায়, তবে তা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। ধূমপায়ীরাও বিপদের মধ্যে আছেন।
৩. গলা বসার সঙ্গে দীর্ঘদিনের কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, ওজন হ্রাস বা অন্যান্য উপসর্গ যদি থাকে।
গলার যত্ন নিন কণ্ঠস্বরেরও যত্ন দরকার। প্রথমেই চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠান্ডা লেগে যদি গলা বসে যায়, তবে কথা বলা বন্ধ করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। এমনকি ফিসফিস করেও কথা বলবেন না তখন। ধূমপান গলার যেকোনো সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয় বা জটিল করে তোলে। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
Credit: Prothom Alo