হিমোফিলিয়া কী?
হিমোফিলিয়া হলো একটি জেনেটিক রোগ, মানে এটা আমাদের জিনের মাধ্যমে বাবা-মা থেকে সন্তানের কাছে চলে আসে। এই রোগে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা ঠিকমতো কাজ করে না। সাধারণত, আমরা যখন কেটে যাই বা আঘাত পাই, তখন আমাদের রক্তের মধ্যে থাকা কিছু প্রোটিন (যাকে বলে ক্লটিং ফ্যাক্টর) রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যাতে রক্তপাত বন্ধ হয়। কিন্তু হিমোফিলিয়ায় এই ক্লটিং ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে কোনো একটি ঠিকঠাক কাজ করে না বা একেবারেই থাকে না। ফলে রক্তপাত বন্ধ হতে অনেক সময় লাগে, এমনকি ছোটখাটো কাটাছেঁড়াতেও প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞানের দিক থেকে এটা কীভাবে হয়?
আমাদের শরীরে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম আছে, যেগুলো আমাদের জিন বহন করে। হিমোফিলিয়া সাধারণত X ক্রোমোজোমের সঙ্গে জড়িত। X আর Y ক্রোমোজোম আমাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করে—ছেলেদের XY আর মেয়েদের XX থাকে। হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী জিনটা X ক্রোমোজোমে থাকে। যদি এই জিনে কোনো ত্রুটি (মিউটেশন) হয়, তাহলে হিমোফিলিয়া হয়।
ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায় কেননা তাদের শুধু একটা X ক্রোমোজোম থাকে। যদি সেই X-এ ত্রুটি থাকে, তাহলে সমস্যা হয়। মেয়েদের দুটো X থাকে, তাই একটায় ত্রুটি থাকলেও অন্যটা কাজ করতে পারে। এজন্য মেয়েরা সাধারণত শুধু বাহক (ক্যারিয়ার) হয়, আর ছেলেরা রোগটা পায়।
ক্লটিং ফ্যাক্টর কী?
রক্ত জমাট বাঁধার জন্য অনেকগুলো প্রোটিন একসঙ্গে কাজ করে, যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ফ্যাক্টর I, II, III এভাবে। হিমোফিলিয়ায় মূলত ফ্যাক্টর VIII (৮) বা ফ্যাক্টর IX (৯) এর সমস্যা হয়।
লক্ষণগুলো কী কী?
ছোট আঘাতে বা কাটায় অনেকক্ষণ রক্তপাত।
হাঁটু, কনুইয়ের মতো জয়েন্টে রক্ত জমে ব্যথা আর ফোলা।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা মাড়ি থেকে রক্ত বেরোনো।
গুরুতর ক্ষেত্রে শরীরের ভেতরে রক্তপাত হতে পারে, যেটা খুব বিপজ্জনক।
কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?
আধুনিক বিজ্ঞানে হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা অনেক উন্নত। ডাক্তাররা যে ফ্যাক্টরটা কম আছে, সেটা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে দেয়। এছাড়া জিন থেরাপির গবেষণা চলছে, যাতে ভবিষ্যতে এই রোগ পুরোপুরি সারানো যায়। তবে রোগীদের সাবধানে থাকতে হয়—যেমন খেলাধুলায় আঘাত এড়ানো, নিয়মিত চেকআপ করা।
মজার তথ্য: জানো, রাশিয়ার জার পরিবারে হিমোফিলিয়া ছিল। রানী ভিক্টোরিয়া এর বাহক ছিলেন, আর তার বংশের মাধ্যমে এটা ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য একে “রয়্যাল ডিজিজ”ও বলা হয়।