একটা সহজ প্রশ্ন, "কেমন আছেন আপনি?!"
উত্তরঃ "ভালো আছি"। আসলেই কি তাই? ভালো থাকা বলতে আমরা কি বুঝি? শুধুই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা, নীরোগ থাকা? আর আপনার মন, মস্তিষ্ক- সেগুলো কি ভালো আছে আদৌ?!
জানি, লেখা পড়ে হয়তো মনে হবে কিসের প্যাচাল শুরু করছি, মন নিয়ে ভাবার কি আছে?! কথা হচ্ছে, শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মন- মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবাটাও জরুরি।
১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘স্বাস্থ্য’–এর যে সংজ্ঞা দিয়েছিল, তা একটু মনে করা যাক- ‘কেবল নিরোগ থাকাটাই স্বাস্থ্য নয়; বরং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই স্বাস্থ্য।’ অথচ আমরা জেনে কিংবা না জেনে স্বাস্থ্য বলতে শুধুই এর আংশিক ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছি। ফলে আজ পর্যন্ত ‘স্বাস্থ্য’ শব্দটি সীমাবদ্ধ হয়ে আছে ‘শারীরিক’ অংশটুকুর মধ্যে। অক্টোবর ১০,২০২১, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। বলার বাকি রাখে না যে এই দিবস আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব, সচেতনতা, আমাদের করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরে। আর বিশেষ করে এই ঘরবন্দী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
কখন বুঝবেন যে আপনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন?
| আশাহীন থাকাঃ মেজর ডিপ্রেশনের এক অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে আশাহীন থাকা। মানুষ স্বভাবতই আশাবাদী থাকে তার কাজের জন্য, তার আগামী দিনগুলোর জন্য। কিন্তু এই নিরাশ হয়ে বসে থাকা, অনাগ্রহ দেখানো কখনোই সুস্থ মনের মানুষ করে থাকে না।
| ইচ্ছা হারানোঃ মানসিক অবসাদ আমাদের জীবন থেকে আনন্দের মুহুর্তগুলো সরিয়ে নিতে বিন্দুমাত্র সময় নেয় না।
| নিয়ন্ত্রণ হারানোঃ সামান্য বিষয় নিয়ে হুট করে রেগে যাওয়া আর পরক্ষণেই নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত বোধ করাটাও মানসিক ভাবে অসুস্থ হওয়ার লক্ষণ।
| উদ্বিগ্নতাঃ কোনো ঘটনায় কিংবা কাজে নার্ভাস ফীল করা, ক্লান্ত বোধ করা, কোনো কিছুতে অল্পতেই প্যানিক করা, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হয়ে আসা, হাজারো চিন্তা মাথায় এসে জমাট বাধা- এই সব কিছুই ডিপ্রেশনের অন্যতম লক্ষণ।
এত কিছুর মাঝেও একটা প্রশ্ন যে কি করে আমরা নিজদের মন ভালো রাখতে পারি? কিছু কমন টিপস যা আমাদের মন ভালো রাখতে সহায়তা করেঃ
১. অনুভূতি প্রকাশঃ চাপা কান্না কেউ শুনতে পায় না, তেমনি মনের চাপা কষ্টটাও কেউ বুঝতে পারে না। তাই, নিজের অনুভূতি, খারাপ লাগা, কি কারণে নিজেকে একা লাগছে তা কোনো একজনের সাথে শেয়ার করা উচিত, এতে মন হালকা হয়।
২. সক্রিয় থাকাঃ স্টুডেন্ট, কিংবা কর্মজীবী যেই হোন না কেন, নিজেদের কাজে সক্রিয় থাকাটা খুব জরুরি। কথায় বলে, "অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা", যখনই আপনি একা অলস সময় কাটাবেন তখনই দুশ্চিন্তা মাথায় এসে ভর করবে। তাই কাজে সক্রিয় থাকা খুব জরুরি, তবে তা নিজেকে অবহেলা করে নয়।
৩. ভালো খাবারঃ শরীর আর মন একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না, আবার মন ভালো না থাকলে শরীর ভালো থাকে না। তাই মন ভালো রাখার জন্য ভালো খাবার খাওয়া জরুরি, এতে শরীরও ভালোই থাকলো।
৪. নেশা পরিত্যাগঃ সবচেয়ে কমন একটা কেস হলো দুশ্চিন্তা কাটাতে নেশা করা, সেটা হতে পারে সিগারেট, বা অ্যালকোহল- যেকোনো কিছু। তবে একটা কথা, এই নেশাদ্রব্য কখনোই ভালো কোনো ফলাফল দেয় না। এই নেশা চরম পর্যায়ে গেলে ছাড়ার উপায় থাকে না, আবার না ছাড়লেও নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। তাই ডিপ্রেশনে থাকলে নেশাদ্রব্য নেওয়ার কথা মাথা থেকে এখুনি ঝেড়ে ফেলুন।
৫. বিরতিঃ অনেক সময় যান্ত্রিক শহরে আমরা হয়তো নিজেকে অনেক সময় খুঁজে পাই না। কাজের মধ্যে সারাদিন ডুবে থাকা, তারপর বাসায় ফিরে খেয়ে এক ঘুম। এভাবে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। কাজে বিরতি নিন, কোথাও ট্যুর দেওয়া যায় কিংবা তিন দিন বিরতি নিয়ে আশেপাশে পার্কে ঘুরাঘুরি করা যায় কিংবা নিজের পছন্দের কাজ (যেমনঃ বাগান করা, বই পড়া) করা যায়।
৬. নিজেকে গ্রহণ করতে শেখাঃ কে কত ভালো, কত দক্ষ সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা প্রত্যেকেই যেন একটা প্রতিযোগিতা লাগিয়ে দেই। এটা উচিত নয়। নিজের দক্ষতা বুঝে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আপনার গানের গলা ভালো না, কিন্তু আপনি চমৎকার বিতর্ক করতে পারেন। আপনাকে গান গাইতেই হবে এমন কোনো কথা নেই, আপনার ফিল্ড অনুসারে নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে যান। কারণ স্রোতে গা ভাসিয়ে কোনো লাভ নেই, পরবর্তীতে নিজেকেই পস্তাতে হয়৷
আর হ্যাঁ, একটা কথা মাথায় রাখবেন- "মন ভালো তো জগৎ ভালো"। তাই নিজের মন ভালো রাখার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে আগে।
লেখকঃ Metheela Farzana Melody | Science Bee