বালি বা পলি এবং জল অথবা বালি এবং বায়ুর মিশ্রনে উৎপন্ন একপ্রকার কোলয়েডীয় পদার্থ হলো চোরাবালি, বা ইংরেজিতে Quicksand। আপাতভাবে কঠিন মনে হলেও এর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করলে, বা এর উপর চাপ বৃদ্ধি করলে (যেমন হাঁটাহাঁটি করলে) এর স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়, এবং সান্দ্রতা হঠাৎ কমে তরলীকরণ ঘটে, আর আলোড়ণকারী বস্তুর (যেমন চলমান পা) চারিদিকে কোলয়েডের দানাগুলি ঘনীভূত হয়ে সান্দ্রতা প্রচন্ড বৃদ্ধি পায়, এবং মানুষ বা জীবজন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে না পেরে আটকা পড়ে যায়।
বেশিরভাগ সময়ে চোরাবালি দেখা যায় প্রাকৃতিক প্রস্রবণের কাছে, Alluvial Fan-এর কেন্দ্রে,নদীর চরে, বা সমুদ্রসৈকতে, কারণ এসব স্থানে বালির উপর দিয়ে জল প্রবাহিত হওয়ায় বালির ফাঁপা গঠন বজায় থাকে। মরুভূমিতেও চোরাবালি সৃষ্টি হতে পারে, তবে খুব বিরল ক্ষেত্রে, যেমন কিছু বালিয়াড়িতে বায়ুপ্রবাহের দিক বরাবর নিচের দিকে সৃষ্টি হতে পারে (অবশ্য সেক্ষেত্রে কয়েক সেন্টিমিটার মাত্র ফাঁপা জায়গা থাকে, সেই অংশের বায়ু বেরিয়ে যাবার পর ঘনসন্নিবিষ্ট বালি থাকে যার ফলে বেশি বিপদ হয় না)।
সাধারণ বালিতে, বালির দানাগুলি ঘনসন্নিবিষ্ট থেকে কঠিন গঠন সৃষ্টি করে, এবং দানাগুলির মধ্যবর্তী ফাঁকের 25%-30% বায়ু বা জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। কিন্তু যেহেতু বালিয়াড়ি গোলাকার না হয়ে লম্বাটে ধরনের হয়ে থাকে, তাই 30%-70% অংশ ফাঁপা থেকে যায় (অনেকটা তাসের ঘরের মত)। এখন, কোন আলোড়ন বা জলপ্রবাহের কারণে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হলে গঠনটি ভেঙে পড়ে বা চোরাবালি রূপে কাজ করে, কারণ সেক্ষেত্রে বালুকণাগুলির মধ্যেকার ঘর্ষন বল, বহিরাগত অতিরিক্ত বলকে প্রশমিত করতে ব্যর্থ হয়।
যেভাবে বিভিন্ন সিনেমায় দেখানো হয়, চোরাবালি আসলে অতটাও ভয়ঙ্কর হয় না। চোরাবালিতে আটকে পড়া মানুষ যত ছটফট করবে তত তার ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আর যদি ছটফট না করে স্থির থাকে, তখন সে ভেসে থাকবে (হ্যাঁ, সত্যিই ভেসে থাকবে কারণ মানবশরীরের আপেক্ষিক গুরুত্ব বালির তুলনায় কম)। তবে নিজের চেষ্টায় চোরাবালি থেকে উঠে আসা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে কারুর সাহায্য প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে লাইফগার্ডদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এজাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য, তাছাড়া কোস্ট গার্ডের এসকল দুর্যোগে উদ্ধার তৎপরতায় বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকে।
Anakshi