আমাদের আশেপাশে অনেক ব্যক্তিই আছে যাদের শরীর থেকে প্রায়ই দুর্গন্ধ আসে যা "Body Odor" হিসেবেও পরিচিত। শরীরে দুর্গন্ধ কম-বেশি সবারই হয় কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই দুর্গন্ধ বেশ তীব্র হয়ে থাকে আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এই দুর্গন্ধ খুব বেশি তীব্র হয় না।
সত্যিকারার্থে শরীর থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া একধরনের জটিল ব্যাপারই বটে। কারন এটি অনেকটা জেনেটিক্যালি তথা জিনগত, বয়স, ডায়েট ও হাইজিন (Hygiene) এর সাথে সম্পর্কিত।
কিন্তু এই দুর্গন্ধের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়?
অনেকেই মনে করেন যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা বজায় রাখে না তাদের শরীর থেকেই দুর্গন্ধ আসতে পারে। ব্যাপারটি আসলে সম্পূর্ণভাবে ঠিক নয়। এর পিছনে বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। আমরা জানি, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ঘামের সৃষ্টি হয়। তন্মধ্যে বগলের নিচ অন্যতম।
মানবদেহে অসংখ্য ঘর্মগ্রন্থি (Sweat Glands) বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। এই ঘর্মগ্রন্থিগুলো প্রধানত দু'ধরনের হয়ে থাকে। যথা- অ্যাক্রিন গ্রন্থি (Eccrine Glands) ও অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি (Apocrine Glands)।
অ্যাক্রিন গ্রন্থি সর্বত্র ত্বকের নিচে বিস্তৃতভাবে আছে। এই গ্রন্থি মূলত পানি ও লবন নিঃসরণ করে। যার কারনে ঘাম লবণাক্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে, অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি একজন ব্যক্তির বয়ঃসন্ধিকালে বগলের নিচে বিকশিত হয়। অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি থেকে যেই ঘাম নিঃসৃত হয় সেটি পরিপূর্ণভাবে প্রোটিন ও চর্বি মিশ্রিত থাকে। কিন্তু উক্ত দুটি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ঘাম গন্ধযুক্ত থাকে না।
তবে আপনি জানেন কি, মানবদেহের প্রতি সেন্টিমিটার জায়গায় হাজার হাজার ব্যাকটেরিয়ার বসবাস?
এই মাইক্রোঅর্গানিজম তথা ব্যাকটেরিয়াগুলো মূলত মাইক্রোকক্কি, স্ট্যাফাইলোকক্কি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ঘামের প্রোটিন ও চর্বিগুলোর ভাঙন ঘটায়। এতে করে ঘামে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। এমনকি সালফারযুক্ত কেমিক্যাল এর জন্য অনেকটাই দায়ী। এই সালফারযুক্ত কেমিক্যাল শরীর থেকে পেয়াজের রসের মতো দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। দেহের অভ্যন্তরীণ সালফারযুক্ত কেমিক্যাল কার্বক্সিলিক এসিডের সাথে মিশ্রিত হয়ে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে তা সরাসরি বগলের নিচ থেকে বায়ুর মাধ্যমে মানুষের নাকের সামনে প্রবাহিত হয় এবং একটি অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে।
মূলত উক্ত কারনগুলোর জন্যই ঘাম দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসে।
ক্রেডিট: Science Bee - বিজ্ঞান গ্রুপ