সৈয়দ হাসবি -
সবকিছুতেই ইলেকট্রিসিটি আছে, আমাদের শরীরেও, মানব দেহে বিদ্যুৎ না থাকলে ব্রেণের নিউরন চলাচল ও সম্ভব হতো না, আমাদের হৃদপিন্ড ও স্পন্দন হচ্ছে ইলেকট্রিক সিগনালের মাধ্যমেই।
আমাদের দেহের কোষ বিশেষভাবে তৈরি যা বিদ্যুৎ পরিবাহন করতে পারে, সকল কিছুই অনেক গুলো পরমাণু মিলে তৈরি হয়, আমাদের শরীর ও এরকম ই, আর পরমাণুতে থাকা ইলেক্ট্রন এর আদান প্রদান এর ফলে যে চার্জ উৎপন্ন হয় একেই বিদ্যুৎ বলা হয়।
শরীরের প্রতিটি কোষকেই একেকটি ব্যাটারি হিসেবেও তুলনা করা হয়, কোষের অভ্যন্তর নেগেটিভ চার্জযুক্ত এবং কোষের বাইরের আবরণ পজিটিভ চার্জ যুক্ত, তাই কোষের ভেতর ও বাহিরে ইলেকট্রন আদান প্রদান হয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, এক গবেষণায় বলা হয়েছে প্রতিটি কোষে ০.৭ ভোল্ট কারেন্ট থাকে, তাহলে সমস্ত দেহের প্রায় ৫০ ট্রিলিয়ন কোষে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ভোল্ট কারেন্ট থাকার কথা, যা একসাথে থাকেনা, সমস্ত দেহের কোষগুলোতে আলাদাভাবে, এবং দেহের শক্তি হিসেবে কাজ করে।
সকল পরমাণু নিউট্রাল চার্জ এ থাকতে চায়, আমাদের দেহে থাকা অনু পরমাণু গুলোও, এগুলোতে অতিরিক্ত ইলেকট্রন থাকলে সেগুলো সরিয়ে দিতে চায়, আর ইলেকট্রন কম থাকলে অন্য কোথাও থেকে গ্রহণ করতে চায়। প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে ইলেকট্রন কমছে কারণ অন্য কোথাও যায় যেমন আমাদের সংস্পর্শে আসা বস্তুতে আবার কখনো আমরা বেশি ইলেকট্রন গ্রহণ করছি অন্য বস্তু থেকে।
এই গ্রহন এবং ত্যাগের সময় যে বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় সেটা মাঝে মধ্যে আমরা অনুভব করতে পারি তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা বুঝা যায়না বা লক্ষণীয় হয়না।
যেমন যদি কেউ নাইলন এর কাপড় পরে থাকে তার দেহ সেই কাপড়ের সাথে ঘষা খেয়ে খেয়ে শরীরে অতিরিক্ত ইলেকট্রন জমা হবে, মাটিতে বা কোন পরিবাহীতে স্পর্শ করলে সেই অতিরিক্ত ইলেকট্রন সেখানে চলে যায়, তবে অনেক্ষন জমা হতে থাকলে হঠাৎ কোন পরিবাহী স্পর্শ করলে একসাথে যখন বেশি ইলেকট্রন সেখানে যাবে বেশি বিদ্যুৎ অনুভব হবে মানে শক লাগবে।
একজন ব্যাক্তি যার দেহে বেশি অতিরিক্ত ইলেকট্রন জমা আছে, আবার আরেকজন যার ইলেকট্রন কম দুইজন একে অপরকে স্পর্শ করলে তাদের একে অন্যের শরীরে ইলেক্ট্রণের আদান প্রদান বা চার্জের আদান প্রদান হবে আর সেটা তুলনামূলক বেশি হলে হালকা শক অনুভব হতে পারে।
যত বেশি ইলেকট্রন এর আদান প্রদান হবে শক অনুভব হবার সম্ভাবনা তত বেশি, আর ইলেকট্রন কত বেশি বা কম থাকবে দেহে সেটা নির্ভর করে কিরকম কাপড় পরা হয়(যেমন উল বা নাইলনের কাপড় হতে শরীর ইলেক্ট্রন গ্রহন করে), আবহাওয়ার উপর(বাতাসে বাস্প কম থাকলে শরীর থেকে চার্জ বেশি যেতে পারেনা তাই সেটা শরীরেই জমা থাকে), পায়ের তালু ছোট হলে বা জুতার তলা মোটা হলে মাটিতে তুলনামূলক কম যায়, চামড়ার উপর ও অনেকটা নির্ভর করে, তাছাড়া চুলের থিকনেস এবং শুষ্কতা, এবং হাটার স্টাইল ও কারণ যার হাটায় ঘর্ষন বেশি তার দেহে ইলেক্ট্রিক চার্জ ও তুলনামূলক বেশি উৎপন্ন হবে।
তাই হঠাৎ কোথাও হাত লাগলে শক অনুভব হতেই পারে ইলেক্ট্রন আদান প্রদান এর ফলে, এটা অস্বাভাবিক বা অতিপ্রাকৃতিক কিছু নয়।