'রক্তদান' শব্দটির সাথে আমরা সকলে পরিচিত। বিভিন্ন রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য একই ব্লাডগ্রুপের একজনের রক্ত সচরাচর অন্যজনকে দেওয়া হয়। আসুন শুরুতে রক্ত সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেই,
রক্ত একধরনের তরল যোজক কলা। রক্ত প্রধানত দেহে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবাহিত করে। রক্তের গ্রুপের প্রধানত দুটি ভাগ :
১. এবিও পদ্ধতি (এ, বি, এবি এবং ও)
২. আরএইচ ফ্যাক্টর (আরএইচ পজেটিভ এবং আরএইচ নেগেটিভ)।
এ রেসাস ফ্যাক্টরই ঠিক করে দেয় ব্লাড গ্রুপ পজেটিভ হবে না নেগেটিভ হবে। ব্লাড গ্রুপগুলো হলো : এ পজেটিভ, এ নেগেটিভ, বি পজেটিভ, বি নেগেটিভ, এবি পজেটিভ, এবি নেগেটিভ, ও পজেটিভ এবং ও নেগেটিভ। এটি গেলো রক্ত নিয়ে সাধারণ আলোচনা। রক্ত মানবদেহের পাশাপাশি প্রতিটি পশু-পাখির দেহে প্রবাহিত হয়। আমরা কি কখন ভেবে দেখেছি মানুষের শরীরে মানুষ বাদে কোন পশুর রক্ত দিলে কি হতে পারে? সেই রক্ত কি কাজ করবে? ধরি, একটি মানুষের শরীরে পশুর রক্ত পুশ করা হলো এমতাবস্থায় মানুষটি কি বেঁচে যাবে? চলুন তাহলে জেনে আসি এ ব্যাপারে বিস্তারিত :
পৃথিবীতে প্রথম সফল রক্ত সঞ্চালন হয়েছিলো পশুর দেহে। রিচার্ড লওয়ার নামে এক ব্রিটিশ চিকিৎসক ১৬৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে একদিন দেখতে পেলেন, একটি কুকুর রক্তক্ষরণ হয়ে প্রায় মারা যাচ্ছে। তিনি তখন ওই কুকুরটিকে বাঁচাতে অন্য একটি কুকুরের ধমনী থেকে সরাসরি রক্ত সঞ্চালন করেন। কুকুরটি প্রাণে বেঁচে যায়। এতে চিকিৎসকরাও ভেবে বসলেন, এভাবে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তখন তারা ফাউন্টেইন পেনকে সূঁচ হিসেবে ও সিলভার পাইপকে রক্ত সঞ্চালক হিসেবে ব্যবহার করে রক্ত সঞ্চালন শুরু করলেন। কিন্তু ভুল যা করলেন তা হলো, তারা জানতেন না যে, মানুষ ব্যতীত অন্য কোনো প্রজাতির প্রাণীর রক্ত মানুষের দেহে কার্যকর হবেনা। এই রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা একটি অবুঝ প্রাণীর রক্ত মানুষের শরীরে সঞ্চালন করতে শুরু করলেন। ফলস্বরূপ মানুষের মৃত্যু হতে লাগলো ! এই পদ্ধতির প্রয়োগ তখন বন্ধ হয়ে যায়।
১৬৬৭ সালে জিয়ান ব্যাপ্টিস্ট ডেনিস নামে এক চিকিৎসক ১৫ বছরের এক ছেলের দেহে ভেড়ার রক্ত ট্রান্সফার করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভেড়ার শরীর থেকে রক্ত দেয়ার পরও ওই ছেলেটি বেঁচে যায়। কিন্তু এরপর থেকে আর কখনোই কোনো মানুষের দেহে পশুর রক্ত কাজ করেনি। এভাবে কয়েকজন রোগী মারা যাবার পর চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যান। এরপর মানবদেহে অন্য প্রাণীর রক্ত প্রবেশ করার চর্চা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অবশেষে ১৯০১ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার নামে এক ব্যক্তি ব্লাড গ্রুপিং আবিষ্কার করেন। সেই থেকে আজ অবদি তার আবিষ্কার করা পদ্ধতিটি রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের একমাত্র নির্ধায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এসব গবেষণার ফলাফল হিসেবে আমরা খুব স্পষ্ট ধারণা পাই যে, মানবদেহে কোন পশুর রক্ত দেওয়া যাবে না,দিলে সেই রক্ত কাজ করবে না। মানুষের দেহে কেবল মানুষরই রক্ত দেওয়া যাবে এবং কেবল মানুষেরই রক্ত কাজ করবে।
লেখকঃ আনিকা আনতারা প্রধান