ধূমপান ছাড়ার ২০মিনিটের মধ্যেই শরীরে পরিবর্তন আসা শুরু হয়!
ধূমপান আমাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর, এমনকি মৃত্যুরও যে কারণ, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সব জেনেও আমরা ছেড়ে দেওয়ার সাহস করি না। ভাবি যে, শরীরে যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেল,এখন ছেড়ে দিয়ে কি লাভ আছে?
-হ্যাঁ অবশ্যই লাভ আছে। অনেকে মনে করে,ধূমপান ছেড়ে দিলে শরীর সুস্থ অবস্থায় পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে কিন্তু এমনটা মোটেও সত্য না। ধূমপান ছাড়ার কত কম সময়ের মধ্যে আপনার শরীর সুস্থ হওয়া শুরু করে,তা জেনে আপনি অবাক হবেন।চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ধূমপান ছাড়ার উপকারিতাগুলো প্রায় তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় বললেই চলে। ধূমপান ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার শরীরের অবস্থার উন্নতি হওয়া শুরু হয়। একজন ব্যক্তি ধূমপান বন্ধ করার সাথে সাথেই তার শরীর পূর্বের অবস্থায় নিম্নলিখিত উপায়ে ফিরে যায়-
| ১ঘন্টা পর
শেষ সিগারেট খাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই হৃদস্পন্দন হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রক্তচাপ কমতে শুরু করে এবং রক্ত সংবহন আরও উন্নত হতে শুরু করে।
| ১২ঘন্টা পর
সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রচুর পরিচিত টক্সিন থাকে ,এর মধ্যে একটি হলো কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস। এই গ্যাস উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ ক্ষতিকারক বা মারাত্মক হতে পারে যা অক্সিজেনকে ফুসফুস এবং রক্তে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করলে অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আর সিগারেট ছাড়ার মাত্র ১২ঘন্টা পরে, শরীর সিগারেট থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত কার্বন মনোক্সাইড পরিষ্কার করে। দেহের অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কার্বন মনোক্সাইড লেভেল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
| ১দিন পর
ধূমপান ছাড়ার মাত্র ১ দিন পরে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। ধূমপান ভাল কোলেস্টেরল হ্রাস করে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান রক্তচাপ বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধায় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় ।
ধূমপান ত্যাগের ১ দিনের মধ্যেই, একজন ব্যক্তির রক্তচাপ হ্রাস পেতে শুরু করে, এতে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এই স্বল্প সময়ে, একজন ব্যক্তির দেহে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে হৃদপিণ্ডকে স্বাস্থ্যকর রাখতে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং ব্যায়াম করতে সহজ হয়।
| ২দিন পর
ধূমপান গন্ধ এবং স্বাদের অনুভূতির জন্য দায়ী নার্ভ এন্ডিংসকে(nerve endings) ক্ষতি করে।ধূমপান ছাড়ার ২ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে,একজন ব্যক্তি আগের মতো নার্ভগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সব গন্ধ এবং স্বাদের অনুভূতি লক্ষ্য করতে পারেন।
| ৩দিন পর
ধূমপান ছাড়ার ৩দিন পরে, দেহে নিকোটিনের মাত্রা হ্রাস পায়। শরীর রিএডজাস্ট হওয়ার কারণে বেশিরভাগ লোকের এসময় বিরক্তিকর,গুরুতর মাথাব্যথা এবং পুনরায় ধুমপানের ইচ্ছে অনুভব করবেন।
| ১মাস পর
ধূমপান ছাড়ার ১মাসের মধ্যেই ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হতে শুরু করে। ফুসফুস সুস্থ এবং ফুসফুসের ক্ষমতার উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে কাশি এবং শ্বাসকষ্টও কমে যায়।
| ২-৩ মাস পর
ধূমপান ছাড়ার পরের কয়েক মাস ধরে রক্ত সঞ্চালন আরও উন্নত হতে থাকে।
| ৯ মাস পরে
ধূমপান ছাড়ার নয় মাস পর, ফুসফুসগুলো নিজেদেরকে উল্লেখযোগ্যভাবে সুস্থ করে তোলে। ফুসফুসের ভিতরে চুলের মতো কাঠামোগুলি সিলিয়া নামে পরিচিত, সিগারেটের ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়ায় এরা পুনরায় সুস্থ হয়ে উঠে। এই কাঠামোগুলি ফুসফুসের থেকে শ্লেষ্মা বাইরে বের করে দিয়ে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
| ১ বছর পর
ধূমপান ত্যাগ করার এক বছর পরে, একজন ব্যক্তির করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেকে কমে যায়। এই ঝুঁকিটি আরও কমতে থাকে, ফলে ঝুঁকির মাত্রা অর্ধেকেরও বেশি কমে যেতে পারে।
| ৫ বছর পর
সিগারেটে প্রচুর টক্সিন থাকে যা ধমনী এবং রক্তনালী সংকীর্ণ করে। এই একই টক্সিনগুলি রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনাও বাড়ায়।
ধূমপান ছাড়াই ৫ বছরের মধ্যেই, দেহ পুনরায় নিজেকে যথেষ্ট সুস্থ করে তুলে ধমনী এবং রক্তনালীগুলিকে আবার প্রশস্ত করা শুরু করে। এই প্রশস্তকরণ মানে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাওয়া।
| ১০ বছর পর
১০ বছর পরে, একজন ব্যক্তির ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একজন ধূমপায়ীর তুলনায় অর্ধেক কমে যায় । মুখ, গলা বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
| ১৫ বছর পর
ধূমপান ত্যাগ করার ১৫ বছর পরে, করোনারি হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা একজন অধূমপায়ীর মতো হয়ে যায়। একইভাবে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও অধূমপায়ীর মতো হয়ে যায়।
| ২০ বছর পর
২০ বছর পরে, ধূমপানজনিত কারণে ফুসফুসের রোগ এবং ক্যান্সার উভয়ই মৃত্যুর ঝুঁকি কমে এমন ব্যাক্তির মতো হয়ে যায় যে জীবনে কখনও ধূমপান করেনি। এছাড়াও অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পেয়ে একজন অধূমপায়ীর মতো হয়ে যায়।
তবে আর দেরি কেন? ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন আর কিছু পরিবর্তন আসতে যদিও একটু সময় লাগবে। সময় লাগলেও আপনি পুনরায় সুস্থ জীবন পাবেন। তাহলে কেন ধূমপান ছেড়ে দিবেন না? আর আজ থেকেই কেন নয়?
লেখকঃ Tanjina Sultana Shahin | Science Bee