তাই চলুন দেখে আসা যাক এসব নেতিবাচক চিন্তাগুলো মনে থেকে কীভাবে দূর করে দেয়া যায়:
১। সৃষ্টি করুন ‘দুশ্চিন্তা ঘণ্টা’
শুনতে আজব লাগলেও প্রতিদিন দিন শেষে আলাদা কিছু সময় রাখুন দুশ্চিন্তা করার জন্য। এতে করে, সারাদিনের কাজের ফাঁকে যখনই আপনার মাথায় এসব চিন্তা আসবে, তখনই আপনার মনে হবে যে, দিনশেষে একটা সময় আছে এসব নিয়ে চিন্তা করার।
এই ‘দুশ্চিন্তা ঘণ্টা’তে আপনি যে যে কারণে দুশ্চিন্তা করছেন, তার সবকিছুকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করুন এবং ‘দুশ্চিন্তা ঘণ্টা’ শেষ হবার সাথে সাথে দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করে দিন। তখন এমন কিছু করুন যাতে সম্পূর্ণ মনোযোগ সেদিকে চলে যায়।
২। যখনই অন্য খেয়াল মনে আসতে থাকবে, তখনই মনকে ফিরিয়ে আনুন
শুধুমাত্র নেতিবাচক না বরং কাজের ফাঁকে যেকোনো রকমের খেয়াল মনে আসলেই তাড়াতাড়ি তা ঝেড়ে ফেলে বাস্তবে ফিরে আসুন। কারণ এলোমেলো খেয়াল আসতে থাকলে আপনি টেরও পাবেন না যে আপনি কখন আবার খারাপ চিন্তা করা শুরু করেছেন।
৩। ধৈর্য ধরুন
এলোমেলো চিন্তাকে দূর করে দিয়ে বাস্তবে ফিরে আসাটা শুরুতে একটু কষ্টকর লাগলেও করতে করতে অভ্যাস হয়ে যাবে। এজন্য, যখনই আপনি বাস্তবে ফিরে আসতে যাবেন, এমন কোনো কাজ দিয়ে ফিরে আসুন যা আপনাকে পুরোপুরি ব্যস্ত করে দেয়। চাইলে কোন চিন্তাগুলো এখন মাথায় ঘুরছে তা একটা লিস্ট করে ‘দুশ্চিন্তা ঘণ্টা’-র জন্য রেখে দিন।
৪। Call a দুশ্চিন্তা, দুশ্চিন্তা
যখনই কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় আসবে, তাকে দুশ্চিন্তা বলে উড়িয়ে দিন। মনে করুন, আপনি আপনার কোনো এক বন্ধুর সামনে এমন কিছু বলে ফেলেছেন যা নিয়ে এখন অস্বস্তিতে ভুগছেন। নিজেকে বলুন যে, হয়ত কথাটা এমন কিছু ছিল না, আমিই হয়ত বেশি ভাবছি।
৫। ভালো লাগার কিছু জিনিস খাতায় টুকে রাখুন
যখনই কোনোকিছু ভাল লাগবে, তা কোথাও লিখে রাখুন। পরবর্তীতে মন খারাপ হলে চট করে তা দেখে নিন, মন আপনা আপনিই ভাল হয়ে যাবে।
নিজেকে বোঝান যে, আপনি কোনো জ্যোতিষী না
৬। নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে দূর করে দিতে পারে এমন কিছুর সংস্পর্শে থাকুন
কোনো বন্ধু, কিংবা পরিবারের কেউ, যার সাথে থাকলেই মন ভাল হয়ে যায় এমন কারো সাথে খারাপ চিন্তা মাথায় আসলেই কথা বলুন। আবার অনেক সময় অনেক সুগন্ধী কিংবা গান আমাদের পুরনো সুখকর স্মৃতি ফেরত নিয়ে আসে। এসব জিনিসের সাহায্য নিন।
৭। খারাপ চিন্তাগুলোকে চিনুন
কোন জিনিসটা নিয়ে আপনি বেশি ভাবছেন, কেন ভাবছেন তা বের করুন। এসব চিন্তা বেশিরভাগ সময়ই এমন হয়ে থাকে যে, এমন যদি হয় তবে অনেক খারাপ হবে কিংবা এমন কেন হল, নিশ্চয়ই অনেক খারাপ হয়েছে।
তাই নিজেকে বোঝান যে, আপনি কোনো জ্যোতিষী না। এসব অনুমান আপনার জন্য না। মনে রাখবেন, যা হয়, ভালোর জন্য হয় এবং যা হয়েছে, ভালোর জন্য হয়েছে। অনিশ্চয়তা আমাদের জীবনের একটা অংশ। একে গ্রহণ করতে শিখুন। একবার ভাবুন তো, এই অনিশ্চয়তা না থাকলে জীবনটা কেমন একঘেয়ে হয়ে যেত!
৮। ইতিবাচক মানুষগুলোর আশেপাশে থাকুন
সবসময় সবকিছু ইতিবাচকভাবে নেয়, হাসিখুশি থাকে এ ধরণের বন্ধু-বান্ধবগুলোর সাথে একটু ঘুরে আসুন, একটু সময় কাটান দেখবেন মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
৯। Be productive!
কোনো একটা শখ পালন করুন কিংবা একটু ক্যারিয়ারের দিকে ঝুঁকে যান। এতে করে আপনি সবসময় ব্যস্ততার মাঝে থাকবেন এবং এসব বাজে খেয়াল আপনার মাথায় আসার জায়গা পাবে না।
১০। কৃতজ্ঞ হোন
কৃতজ্ঞতা মানুষকে মহান করে তোলে। চিন্তা করুন, কোন জিনিসগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। এমনকি, আপনার জীবনের নেতিবাচক দিকগুলোকেও ইতিবাচকে রূপান্তর করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। মনে করুন, আপনার শিক্ষক আপনাকে পরীক্ষার মাঝে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ দিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে কষ্ট না পেয়ে বরং ভাবুন যে ঐ শিক্ষক আপনাকে মাল্টি টাস্কিং শিখাচ্ছেন, আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়াচ্ছেন এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হোন।
১১। কারো সহায়তা নিন
দুশ্চিন্তাগুলো মহামারী হয়ে গেলে, কোনো মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিন। মনে রাখবেন, মানসিক অসুস্থতা সবচেয়ে বড় অসুস্থতা এবং মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়া মানে এই না যে আপনি পাগল হয়ে গেছেন।
There is no health without mental health; mental health is too important to be left to the professionals alone, and mental health is everyone’s business.
– Vikram Patel (Indian scientist)