মানুষ কষ্ট পায় কেন?
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কষ্ট পায় না, কষ্ট
তৈরি করে। কে কেমন কষ্ট তৈরি করবে, সেটা তার
বেড়ে ওঠার পরিবেশ, শিক্ষা
কোয়ালিটি অব ইনফরমেশন ও বিশ্বাসের ওপর
নির্ভর করে
মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিই নির্ধারণ করে তার কষ্ট।
যেমন কোনো ঘটনা কাউকে কতটা কষ্ট দেয়,
এর জন্য ঘটনা যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি
দায়ী ব্যক্তি কীভাবে ঘটনার মূল্যায়ন করছে তা।
ধরা যাক অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তার কথা।
অফিসের তিনজন কর্মী দেরি করে আসায়
ডেকে তিনজনকেই তিনি সতর্ক করলেন। একজন
বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে (বস তো এমনটা বলতেই
পারেন) নিয়ে কাজে মনোযোগ দিলেন।
দ্বিতীয়জন মন খারাপ করে বসে রইলেন (হঠাৎ দু-
এক দিনের জন্য বস আমাকে এভাবে অপমান
করলেন)। তৃতীয়জন হয়তো কিছুটা রাগে, কষ্টে
কেঁদে চোখের পানি মুছছেন। আর ভাবছেন, না,
এখানে কাজ করা যাবে না। তাহলে ব্যাপারটি কী
দাঁড়াল? ঘটনা বা কথা কিন্তু এক। কিন্তু তিনজন এটাকে
তিনভাবে নিলেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কষ্ট পায় না, কষ্ট
তৈরি করে। কে কেমন কষ্ট তৈরি করবে, সেটা তার
বেড়ে ওঠার পরিবেশ, শিক্ষা, কোয়ালিটি অব
ইনফরমেশন ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। মানুষ
শরীরে আঘাত পেতে পারে, কিন্তু মনে
কখনো আঘাত পায় না। মন আঘাত বা কষ্ট তৈরি করে।
গবেষকরা বলেন, মানুষ কোনো একটি ঘটনাকে
নেতিবাচক চিন্তা করে পাহাড় সমান কষ্ট তৈরি করে।
পৃথিবীতে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, তা কষ্ট তৈরি
করার ফলে।
মানুষ তাহলে কষ্ট তৈরি করে কেন? বিশেষজ্ঞরা
বলেন, মানুষ চায়, তার মনের মতো করে সবকিছু
হোক। কিন্তু এটা কখনই সম্ভব নয়। কারণ কোনো
কিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। নিজের সুখ, খুশি,
দুঃখ কারো ওপর নির্ভর করে না। করে নিজের
ওপর। সুখ, দুঃখ হচ্ছে ভেতরের অনুভূতি। বাইরের
কোনো ঘটনা এটা সৃষ্টি করতে পারে না। ঘটনা শুধু
প্রভাবিত করতে পারে। কারণ বস্তু, ব্যক্তি বা ঘটনা—
এগুলো প্রভাবক।
পৃথিবীতে যত মানুষ মারা যায়, তার ৭৫ শতাংশ কারণ
হচ্ছে নিরানন্দ। আর এ নেগেটিভ সাইকিক
ইমপ্রেশন নির্ভর করে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও
চিন্তাধারার ওপর। আপনার নীতি-নৈতিকতা যদি ঠিক থাকে,
তাহলে কে কী সমালোচনা করল, সেটা
মোটেও বাধা বা চিন্তার নয়। সবকিছুকে ইতিবাচক
দৃষ্টিতে দেখতে হবে। যার যেমন চিন্তাচেতনা,
তার সমালোচনা বা বক্তব্য ঠিক তেমনই হবে। রাগ
করা বা কষ্ট পাওয়া চরম বোকামি।
মানুষ কষ্ট পেলে কাঁদে কেন?
আমাদের ল্যাক্রিমাল গ্লান্ড থেকে যে নোনা রস
নির্গত হয় তাই কান্না। এটা একটি জৈবিক ক্রিয়া। কান্না তিন
প্রকার, বাসালঃ যা চোখ ভেজা থাকতে সাহায্য করে,
রিফ্লেক্সঃ যা পেঁয়াজ কাটার সময় বের হয় আর
ইমোশনালঃ যেটা শারীরিক-মানসিক ব্যাথার কারনে
বের হয়। এই ইমোশনাল কান্নার পেছনে প্রো-
ল্যাকটিন হরমোন কাজ করে যা যা শরীর ব্যাথা বা
কষ্ট পেলে উৎপন্ন করে। এটাই মূল কারন।
কিন্তু মজার কারন হলো, আমরা শিশুকালে আমাদের
দাবী দাওয়া বোঝাতে কেঁদে উঠি কারন তখন এটাই
আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম যতদিন
পর্যন্ত কথা বলতে না শিখি। কিন্তু তারপরও আমাদের
শরীর-মন সে কথা ভোলে না। সময়-অসময়ে
সে যোগাযোগের মাধ্যম বা রেসপন্স হিসেবে
বা এটেনশন কেড়ে নিতে কান্নাকে ব্যাবহার
করে।
Collected