কুয়াশা হলো ভূমির সংস্পর্শে থাকা মেঘমালা। মেঘকেও আংশিকভাবে কুয়াশা বিবেচনা করা যায়, মেঘের যে অংশটুকু মাটির ওপরে বাতাসে ভাসমান থাকে তা কুয়াশা হিসেবে বিবেচিত নয়, তবে মেঘের ভূমির উঁচু অংশের সংস্পর্শে থাকা মেঘকে কুয়াশা বলা হয়।
কুয়াশা আর ধোঁয়াশার মধ্যে পার্থক্য হল এদের ঘনত্বে, যা কিনা এদের ফলে সৃষ্ট দর্শনযোগ্যতার হ্রাস দ্বারা হিসাব করা হয়: কুয়াশার কারণে দর্শনযোগ্যতা ১ কিলোমিটারের কম হয়, যেখানে ধোঁয়াশা দর্শনযোগ্যতা ২ কিলোমিটারের বেশি হ্রাস করে না।
পৃথিবীর সর্বাধিক কুয়াশাচ্ছন্ন স্থান হল নিউফাউন্ডল্যান্ডের গ্রান্ড ব্যাংকস, যেখানে উত্তর দিক থেকে আসা শীতল লাব্রাডর প্রবাহ ও দক্ষিণ দিক থেকে আসা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ গালফ প্রবাহ মিলিত হয়। সর্বাধিক কুয়াশাচ্ছন্ন ভূমি অঞ্চলের মধ্যে আছে পয়েন্ট রেয়েস, ক্যালিফোর্নিয়া। এবন আর্জেন্টিনা, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডর , যেখানে বছরের ২০০ দিনই কুয়াশায় ঢাকা থাকে। এমনকি এমনিতে উষ্ণ দক্ষিণ ইউরোপের নিম্নভূমি ও উপত্যকা অঞ্চলে ঘন কুয়াশা পড়ে, বিশেষত শরৎ ও গ্রীষ্মে।
বাংলাদেশে এ বছর হাড় কাঁপানো শীতের পাশাপাশি ঘন কুয়াশাও বেশ দাপট দেখিয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এ বছর কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারেও নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা তিন হাজার মিটার বা তার কম হলে তাকে ‘পুওর ভিজিবিলিটি’ বলা হয়।
সাধারণত বিমানবন্দরে দৃষ্টিসীমা কমে গেলে বিমান চলাচল ব্যাহত হয় বলেও জানান তিনি।
‘তিন হাজার মিটার বা তার নিচে আসলেই আমরা এভিয়েশন ওয়ার্নিং দেই, দুই হাজার বা তার নিচে আসলে তখন বিমান নামতেও পারে না,’ বলেন তিনি।
কুয়াশা যেভাবে সৃষ্টি হয়?
আবহাওয়াবিদ হোসেন বলেন, ‘কুয়াশাকে আমরা ‘লো ক্লাউড’বলি।’
শীতের সময় তাপমাত্রা কম থাকে এবং মাটিতে থাকা আদ্রতা উপরে উঠে গিয়ে কুয়াশা তৈরি করে।
এছাড়া ‘অ্যাডভেকশন ফগ’ বা মাটির তুলনায় বাতাস উষ্ণ এবং আদ্রতা বেশি থাকার কারণে যে কুয়াশা তৈরি হয়ে ভেসে বেড়ায়- এ ধরণের কুয়াশা ভারত থেকে বাতাসের তোড়ে বাংলাদেশে চলে আসে বলেও জানান মিস্টার হোসেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, কুয়াশা তৈরির পেছনে বাতাসের আদ্রতা ও তাপমাত্রার পার্থক্য দায়ী থাকে। তবে এবার রাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার আগেই কুয়াশা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর বাতাস কম থাকার কারণে কুয়াশা সরে যেতে পারছে না।
‘কুয়াশা আইসের(বরফের) একটা অংশ। এটা আমাদের দেশে ছোট থাকে, অন্যান্য দেশে তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে সেটা বড় আকার ধারণ করে ঝড়ে পড়ে, যাকে স্নো বলে। আমাদের দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে বলে স্নো হয় না, তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতো ছোট ছোট ফোটা হয়ে ঝড়ে পড়ে,’ আলম বলেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং চীনেও কুয়াশা তৈরি হয়।
ক্রেডিট: একুশে টিভি