শিহরণ হওয়ার কারণ হচ্ছে মিসোফোনিয়া। মিসোফোনিয়া একপ্রকার স্নায়বিক সমস্যা, যার কারণে শ্রবণ উদ্দীপক বস্তুসমূহ মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে গোলমাল পাকিয়ে বসে। ঠিক কী কারণে মিসোফোনিয়া হয়, তা এখনও একটি রহস্য। তবে এটি যে শুধু কর্ণকুহর বিষয়ক সমস্যা নয়, তাতে বিশেষজ্ঞরা একমত। এই সমস্যা আংশিক শারীরিক ও আংশিক মানসিক। কেননা, নির্দিষ্ট কিছু আওয়াজ এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় মানুষের মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে এবং তাৎক্ষণিক শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অপ্রিয় সেই আওয়াজটির সম্মুখীন হলে মানুষ নিজের উপর প্রায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে। সুতরাং শরীর ও মন উভয়েই এই সমস্যার ধারক। মিসোফোনিয়া, সিলেকটিভ সাউন্ড সেনসিটিভিটি সিনড্রোম (Selective Sound Sensitivity Syndrome) নামেও পরিচিত। গবেষণায় এই দল আরও খুঁজে পায় যে, মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ মিসোফোনিয়ার উৎপত্তিস্থল। এই অংশটি হলো অ্যান্টেরিয়র ইনস্যুলার কর্টেক্স (Anterior Insular Cortex) বা AIC। এই অংশটি একইসাথে রাগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এবং হৃৎপিন্ড ও ফুসফুস থেকে আসা ইনপুটগুলোর সাথে অন্যান্য বহিরাগত ইনপুটকে একীভূত করতে সাহায্য করে। fMRI Scan ব্যবহার করে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ লক্ষ্য করে দেখা যায়, মিসোফোনিক মানুষদের ক্ষেত্রে ট্রিগার সাউন্ড ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এই AIC বেশি উত্তেজিত হয়। পাশাপাশি যে অংশগুলোতে দীর্ঘকালীন স্মৃতি সঞ্চিত থাকে এবং যেসব অংশ ভয় ও অন্যান্য অনুভূতির উৎপত্তিস্থল হিসেবে কাজ করে, সেগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ থেকেই বোঝা যায় মিসোফোনিকদের নির্দিষ্ট আওয়াজে তীব্র অস্বস্তি বা আতঙ্কের মতো অনুভূতিপ্রবণ প্রতিক্রিয়া দেখানোর কারণ। এছাড়াও গবেষকরা সমগ্র মস্তিষ্কের MRI করে দেখেন মিসোফোনিক ব্যক্তিদের স্নায়ুকোষে মায়েলিনের (Myelin) পরিমাণ বেশি থাকে। মায়েলিন এক ধরনের চর্বি জাতীয় পদার্থ, যা মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলোকে জড়িয়ে রাখে এবং ইনস্যুলেটর হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি কোষগুলোকে তড়িৎ অন্তরক করে রাখে, ঠিক যেভাবে বৈদ্যুতিক তার অন্তরীত করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, মস্তিষ্ক অসংখ্য স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত এবং এসব কোষের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন অনুভূতি এবং প্রতিক্রিয়া তড়িৎ সংকেত হিসেবে প্রেরিত হয়। অতিরিক্ত মায়েলিন মিসোফোনিয়ার অন্যতম কারণ নাকি এর ফলাফল, তা এখনও জানা যায়নি।
roarbangla