এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে, চলুন একবার চট করে দেখে নেওয়া যাক যে মৌমাছি কিভাবে এই মধু তৈরি করে।
মৌমাছি ফুল বা গাছের থেকে যে নেকটার (nectar) সংগ্রহ করে তার মধ্যে মূলত উপস্থিত থাকে শর্করা বা সুগার, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান এবং জল। সুগারের মধ্যে প্রধান যে সুগারটি থাকে তা হলো সুক্রোজ। অর্থাৎ পাতি বাংলায়, আমাদের রান্না ঘরে থাকা চিনি। এখন, মৌমাছির কাজ হলো ফুলের এই নেকটারকে মধুতে পরিণত করা যা আমরা ব্যবহার করি। মৌমাছির সাধারণ স্টমাকের সাথে সাথে আরও একটি স্টমাক থাকে, যাকে বলা হয় হানি স্টমাক (Honey stomach)। এই হানি স্টমাক থেকে বিভিন্ন উৎসেচক (enzyme) নিঃসৃত হয়ে সুক্রোজকে ভেঙে গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজে পরিণত করে।
শ্রমিক মৌমাছি মধু থেকে নেকটার সংগ্রহ করে তা মধুতে পরিণত করে মৌচাকে ফিরে আসে এবং সংগৃহীত নেকটার নিজেদের স্টমাক থেকে উগরে (regurgitation) দেয় বাকি মৌমাছিদের উদেশ্য। এই পদ্ধতিতে যেটুকু সুগার সুক্রোজ হিসাবে ছিল, সেগুলোও গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে পরিণত হয়ে যায়।
এই অবস্থায় মধুতে ৭০% জল থাকে। কিন্তু মৌমাছি নিজেদের হানি কম্বের সাহায্যে অধিকাংশ জল বাষ্পীভূত করে দেয়। ঠিক যে ভাবে বাড়িতে সুগার সিরাপ বানানো হয় অনেকটা তাই। এর ফলে জলের পরিমান ৭০% থেকে কমে ১৭% এ পরিণত হয়। এই পরিমাণ জল এতটাই সামান্য যে তা ব্যাকটেরিয়া বা কোনো মাইক্রোবসের দেহে থাকা জলের পরিমাণের থেকেও কম। অর্থাৎ এই সামান্য পরিমাণ জলীয় উপাদান কোনো ছত্রাক বা ব্যাক্টররিয়ার বেঁচে থাকার জন্য বিন্দুমাত্র অনুকূল নয়।
মধু নষ্ট না হওয়ার দ্বিতীয় কারণটি হল মধুর pH। মধুর pH প্রায় ৪। অর্থাৎ মধু আম্লিক (acidic) এবং মধুতে উপস্থিত ফরমিক এসিড, সাইট্রিক এসিড এবং প্রধানত গ্লুকোনিক এসিড এই অম্লত্বের কারণ। এই স্বল্প pH বেশির ভাগ ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকাকে ব্যহত করে। এছাড়াও গ্লুকোনিক এসিড হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন করে। বলাই বাহুল্য তা মধুতে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হতে দেয় না।[1]
মধু পৃথিবীর খুব বিরল একটি দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস যার কোনো এক্সপায়ারি ডেট নেই। তাই, মধু কিনুন আর নিশ্চিন্তে যতদিন ইচ্ছে ব্যবহার করুন।
মজার বিষয় হলো, মিশরের পিরামিডে প্রায় তিন হাজার বছর আগের মধু পাওয়া গেছে, যা ঠিক প্রথম দিনের মতোই ভালো !