ব্ল্যাক হোল নিজে আসলে কখনো দেখা যায় না কারণ ওর Event Horizon সব আলো শুষে নেয়। Event Horizon কে ব্ল্যাক হোলের সীমানা হিসেবে ধরা হয় আর এই সীমানার ভিতরে কোনো আলো প্রবেশ করলে আলোকরশ্মি আর বের হতে পারে না। সহজ ভাবে বললে, Event Horizon এর মধ্যে কোনো আলো প্রবেশ করলেই সেই আলো আচমকা গায়েব হয়ে যায়। এজন্য সরাসরি কোনো ব্ল্যাক হোলের ছবি নেওয়া সম্ভব হয় না।
তবে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোলের ছায়া বা চারপাশের আলো কিরকম ভাবে আচরণ করছে সেটা দেখে ব্ল্যাক হোলকে চিহ্নিত করেন। অর্থাৎ যেহেতু ব্ল্যাক হোলে আলো প্রবেশ করলেই আলো গায়েব হয়ে যায়, তাই মহাবিশ্বে এরকম কোনো জায়গা পেলেই সেটাকে প্রাথমিক ভাবে ব্ল্যাক হোল হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়।
তাহলে কিভাবে ছবি বা ভিডিও করা হয় ব্ল্যাক হোলের? আসলে আমরা ব্ল্যাক হোলের যেসব ছবি দেখে থাকি সেগুলো ব্ল্যাক হোলের ছায়া থেকে নেওয়া যা করা হয় Event Horizon Telescope (EHT) এর মাধ্যমে। এটা আসলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকা বিশাল বিশাল রেডিও টেলিস্কোপের একটা নেটওয়ার্ক। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একসাথে ডেটা রেকর্ড করা হয় তারপর সেসব তথ্য একসাথে বিশ্লেষণ করে একটা বিশাল ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ তৈরি করা হয়।
২০১৯ সালে EHT প্রথমবার M87 গ্যালাক্সির ব্ল্যাক হোলের ছায়া ক্যাপচার করে। তারপর সেই ছবিকে বিভিন্ন ভাবে ম্যাগনিফাই করে ব্ল্যাক হোলের সম্ভাব্য একটি ছবি প্রকাশ করে। এই ছবিটাই তখন বিশ্বজুড়ে “ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি” হিসেবে পরিচিত হয়।
আর আমরা যেটাকে ব্ল্যাক হোলের বলি সেটা অনেকগুলো ছবির সিরিজ। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট টাইম সিকুয়েন্স অনুযায়ী তোলা অনেকগুলো ছবিকে একসাথে জোড়া দিয়ে বানানো হয়। ব্ল্যাক হোলের আশপাশে থাকা গ্যাস যেভাবে ঘুরছে তার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার সিমুলেশন আর রিয়েল অবজারভেশন মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা একধরনের ডায়নামিক ভিজ্যুয়াল তৈরি করেন যেটা দেখতে ভিডিওর মতো লাগে।
তাহলে এবার আসি সাউন্ডের বিষয়ে। শব্দ বা সাউন্ড পরিবহণ হতে একটি মাধ্যম প্রয়োজন। কিন্তু মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থানই ফাকা। তাই শব্দ উৎপন্ন হলেও চলতে পারে না। তবে বিজ্ঞানীরা "Sonification" নামক একটা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতে মহাকাশ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ডেটা (যেমন রেডিও ওয়েভ, এক্স-রে, আলোর ফ্লাকচুয়েশন, গ্যাসের কম্পন্ন) কে ধ্বনি বা সাউন্ডে রূপান্তর করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত কম্পনের ফ্রিকোয়েন্সি (frequency) মিলিয়ন গুণ বাড়িয়ে আমাদের কানের জন্য উপযোগী করা হয়।
২০০৩ সালে NASA-এর Chandra X-ray Observatory ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে থাকা গ্যাসের কম্পন শনাক্ত করে (Perseus Galaxy Cluster)। ওই কম্পন ছিল প্রতি সেকেন্ডে একবারের চেয়েও কম আমাদের কানে শোনা সম্ভব না। তাই এর ফ্রিকুয়েন্সিকে বাড়িয়ে তারপর আমাদের কানের শোনার জন্য উপযোগী করা হয়।
তথ্যসুত্রঃ