এসব নিয়ে নানা ভুল ধারণা আমাদের মধ্যে রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন বীর্য তৈরি হয় রক্ত থেকে। শুধু তাই নয়, এদের অনেকই মনে করেন, এক ফোঁটা বীর্য তৈরিতে প্রায় ৮০ ফোঁটা রক্তের প্রয়োজন হয়। আবার অনেকে মনে করেন, বীর্যের মধ্যে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ধাতু।
আসলে সত্যটা কি?
প্রতিটি মানুষের অণ্ডথলিতে সাধারণত দু'টো অণ্ডকোষ তাকে। এ অণ্ডকোষের ভিতর আবার অনেকগুলো পেঁচানো নলের মতো ক্ষুদ্রাঙ্গ জড়িয়ে থাকে, এগুলোকে সেমিনিফেরাস টিওবল বলে। এগুলোই আসলে বীর্য তৈরির মূল ফ্যাক্টরি। এখানে মাসে প্রায় দশ কোটি শুক্রাণু তৈরি হয়। এখন আসি বীর্য তৈরিতে কি কি উপাদানের প্রয়োজন হয়। অণ্ডকোষে বীর্য তৈরিতে যেসব উপাদান সাধারণত প্রয়োজন হয়, সেগুলো হলো Fructose (এক ধরনের শর্করা), জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-১২ এবং আরও কিছু রাসায়নিক পদার্থ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুক্রাণুর মূল উপাদান হলো- ২৩টি ক্রোমোজোম। রক্তকোষসহ মানবদেহের প্রতিটি কোষে যদিও থাকে ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোজোম। এ ক্রোমোজোমগুলোই মানুষের আসল অস্তিত্ব, এখানেই মানব তৈরির ব্লু প্রিন্ট অবস্থিত।
এই বিশালসংখ্যক শুক্রাণুগুলো আবার ছোট্ট আরেকটি নল দিয়ে মূত্রথলির নিচে সংযুক্ত অবস্থায় থাকা প্রোস্টেট এবং সেমিনাল ভেসিকুল নামক দু’টি গ্রন্থির সঙ্গে সংযুক্ত। যৌন সঙ্গম বা যৌন উত্তেজনার কালে শুক্রাণুগুলো প্রস্টেট গ্রন্থিথে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই এ গ্রন্থি দু’টো থেকে নিঃসৃত রসের সঙ্গে প্রথমে মিশ্রিত হয় এবং এ মিশ্রিত পদার্থই আসলে বীর্য। প্রোস্টেট থেকে মিশ্রিত রসের মধ্যে সাধারণত যেসব উপাদান থাকে সেগুলো হলো- জিঙ্ক, সাইট্রিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফেট এবং কিছু এনজাইম- যা শুক্রাণুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও চলাচল ক্ষমতা নিশ্চিত করে। সাধারণভাবে বলতে গেলে এক ফোঁটা বীর্যে প্রায় ৩ লাখ শুক্রাণুু থাকে। সন্তান উৎপাদনের জন্য যদিও ব্যবহৃত হয় মাত্র একটি শুক্রাণু। তাহলে শরীর কেন এত অযুতসংখ্যক শুক্রাণু তৈরি করে তা সত্যিই একটি ভাবনার বিষয়। যাই হোক, সংক্ষেপে এটাই হলো বীর্যের সঠিক পরিচয়।
এখন আসি প্রচলিত কিছু ধারণা নিয়ে। সমাজে একটি সংস্কার রয়েছে যে এক ফোঁটা বীর্য তৈরিতে প্রায় ৮০ ফোঁটা রক্তের প্রয়োজন হয়। এটা পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা। বীর্য এবং রক্ত গাঠনিক ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে পুরোপুরি আলাদা। যদি সত্যিই এক ফোঁটা বীর্য তৈরিতে ৮০ ফোঁটা রক্তের প্রয়োজন হতো, তবে সারা জীবনে যত ফোটা বীর্য তৈরি হয়, তাতে মানুষের শরীরে আর কোনো রক্তই থাকতো না। আবার, যারা মনে করেন, বীর্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ধাতু উপাদান থাকে, তাও সত্যি নয়। বীর্যে অতি অল্প পরিমাণ শর্করা ও কিছু ধাতু থাকে, যা কোনোক্রমেই শরীরের মধ্যে কোনো চাপ তৈরি করে না।
যাই হোক, বীর্যকে চিরকালই পুরুষের শক্তির আধার বলে মনে করা হয়েছে। এ ধারণা থেকে উৎপত্তি হয়েছে ‘বীর্যবান’ বা ‘বীর্যশালী পুরুষ’ শব্দগুলো ।
বর্তমানে জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, খাদ্য অভ্যাসে ও পরিবর্তন হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বেই পুরুষের বীর্যের সংখ্যা পূর্বের যুগের তুলনায় অনেকটা কমতির দিকে। সঠিক জীবন আচরণ ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আমরা এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি।
লেখক:
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
(চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ), জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার-১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। ফোন- ০১৭১২-২৯১৮৮৭