রক্তের গ্রুপ কি কখনো পরিবর্তন হয় স্যার?
এমন প্রশ্ন জীবনে অনেক শুনেছি এবং উত্তর দিয়েছি "না, পরিবর্তন হয়না "। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন এর মত একটি ঘটনা আমি নিজের চোখেই দেখলাম। আর মনে মনে হাসলাম।
নাইট ডিউটি করতে গিয়ে আমার হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে এক রোগীর রক্তের অর্ডার দিতে গিয়ে বিষয় টি চোখে পড়ে। নার্স আমাকে বললেন "ডক্টর, ৪ নং বেড এর পেশেন্ট এর রক্তের গ্রুপ চেঞ্জ হয়েছে "
আমি বললাম, "কিভাবে? ভুল করে :) "
পরে সম্পূর্ণ কাহিনী শুনলাম পেশেন্ট এর মা এর কাছ থেকে। রক্ত ক্যান্সারের রোগীটি ৪ ব্যাগ O (+)ve রক্ত শরীরে দিয়েছে শান্তিনগর কোয়ান্টাম থেকে এনে। এবার যখন আবারও রক্ত নিয়ে আসার জন্য গেল তারা বললো রোগীর রক্তের সাথে তো ক্রস ম্যাচিং এ মিলেনা। রক্তের গ্রুপ আসে B (+)ve!!!! ইয়া আল্লাহ!! কত্ত বড় কথা। আমি নার্স এবং রোগীর মা কে বললাম, "পেশেন্ট যে ৪ ব্যাগ O(*)ve রক্ত দিয়েছে, সেই ব্লাড গ্রুপিং কোথায় করেছিল? সেই গ্রুপিং কি আদৌ ঠিক ছিল? আমার মনে হচ্ছে ঐ গ্রুপিং ভুল ছিল এবং আপনারা ভুল রক্ত দিয়েছেন বাচ্চাকে। আপনাদের কপাল ভালো যে O(+)ve দিয়েছেন, যাকে বলে সার্বজনীন দাতা গ্রুপ।
যাইহোক পেশেন্ট এর পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটাঘাটি করলাম এবং থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসলো।
রোগীর বয়স ১০ বছর। ২০১১ সালে তার স্কুলে ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং নামক এক "নাটক" অনুষ্ঠিত হয়। আমরা জানি ফ্রি জিনিস কখনোই ভালো না। যাইহোক, ২০১৭ এর ফেব্রুয়ারি তে রোগীর রক্তশূন্যতা চোখে পড়ে এবং ডাক্তার রোগ নির্ণয় করেন রক্তের ক্যান্সার (Acute lymphoblastic leukemia)। তারপর রোগীর শরীরে রক্ত দিতে বলা হয় এবং রোগীর লোকেরা বলেন যে তারা রক্তের গ্রুপ জানেন। সেই মোতাবেক রোগী ৪ ব্যাগ রক্ত পেয়েছে জুন পর্যন্ত। ৪ ব্যাগ ই শান্তিনগর কোয়ান্টাম থেকে ক্রয় করা এবং সেখানেই ক্রস ম্যাচিং ও করা!! আজকে পেশেন্ট এর লোক আবারও রক্তের জন্য ঐ কোয়ান্টামে গেলে তারা জানায় রক্তের গ্রুপ B (+)ve!!!!
রোগীর লোকজন অস্থির হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা শিশু হাসপাতালে গ্রুপিং করি, রিপোর্ট আসে B(+)ve। কনফার্ম হওয়ার জন্য পূনরায় করি, তা ও B(+)ve। এরপর স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয় একটি স্যাম্পল, সেটিও B (+)ve. তাহলে গলদ টা কোথায়? ঐ যে কথায় আছেনা "গোড়ায় গলদ "। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ কিংবা এলাকায় সেচ্ছাসেবী কিছু নন মেডিকেল পারসন দ্বারা ভুয়া গ্রুপিং প্রোগ্রাম করা হয় যেখানে আদৌ কোন সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ। আর দ্বিতীয় টি মারাত্মক ভুল, যেটি করেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। পরপর ৪ বার একটি পেশেন্ট এর রক্তের গ্রুপ এবং ক্রস ম্যাচিং এ ভুল!!! এ থেকে প্রমাণিত হয় যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আদৌ কোন ক্রস ম্যাচিং করে না। মানুষের সাথে প্রতারণা করে।
খারাপ জায়গায় ও ভালো মানুষ থাকে। যার প্রমাণ আজ কোয়ান্টাম এর যে লোক ক্রস ম্যাচিং টি করেছিল তিনি।
উপদেশ :
১) রক্তের গ্রুপ কখনো পরিবর্তিত হয়না, অযথা ঘাবড়াবেন না।
২) দয়া করে আপনার রক্তের গ্রুপ যেকোন মেডিকেল কলেজের সন্ধানী /মেডিসিন ক্লাব/রেড ক্রিসেন্ট থেকে করুন /ভালো কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। কখনোই ফ্রি গ্রুপিং ক্যাম্পের উপর ভরসা করবেন না।
৩) ডাক্তারদের বিশ্বাস করতে শিখুন।
সংগ্রহীতঃ- ডাঃ মোঃ মুনীবুর রহমান