Nishat Tasnim
ফুল কালো হয়। যেমন: কালো গোলাপ।
ফুলের মধ্যে রঙ ও গন্ধের জন্য গোলাপের জনপ্রিয়তা বরাবরই আকাশচুম্বী। ভারতীয় উপমহাদেশে মোগলদের হাত ধরে আসা বড় আকারের লাল বসরাই থেকে শুরু করে গোলাপি বা সাদা রঙের গোলাপই বেশি চোখে পড়ে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কালো গোলাপের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেক দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরাই কালো গোলাপ উৎপাদনের জন্য গবেষণা করেছেন; সফল হতে পারেননি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম তুরস্কের হালফেতি গোলাপ। প্রাকৃতিকভাবেই ওই প্রজাতির রঙ এতটাই গাঢ়, এখন একেই সবাই স্বপ্নের কালো গোলাপ বলতে শুরু করেছেন।
তুরস্কে ফোরাত বা ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব উপকূলে সানলুরফা প্রদেশের ফালফেতি জেলাটি এখন বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। গোলাপের এই জাতকে কেন্দ্র করে। সেখানকার বাসিন্দারাও বলছেন, ওই প্রজাতির গোলাপ খুবই বিরল। সাধারণত বসন্তে জেলার পুরনো আলফেতি গ্রামে 'কালো' গোলাপ ফুটতে শুরু করে। প্রথমদিকে এর রঙ থাকে গাঢ় লাল। কিন্তু গ্রীষ্ফ্ম যত এগিয়ে আসে এর রঙ ততই কালো হতে শুরু করে। একপর্যায়ে সত্যিই গাঢ় কালো রঙ ধারণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হালফেতির প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতা, উর্বর মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে দ্রবীভূত হাইড্রোজেনের আধিক্যের কারণে গোলাপ এখানে কালো রঙ ধারণ করে। তবে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে হালফেতি গোলাপ ক্রমেই বিপন্ন এক প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছে। ১৯৯০ সালের দিকে ওই অঞ্চলে ইউফ্রেটিস নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে পুরনো হালফেতির বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে আরও ১০ কিলোমিটার ভেতরে সরে যায়। ফলে চাষ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এখন হালফেতি গোলাপ রয়েছে চিরতরে বিলুপ্তির অপেক্ষায়। নতুন ফালফেতিতে কৃষকরা আবার বাগান করলেও গোলাপ প্রজাতিটি সেখানে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। উৎপাদনও হয়নি আশানুরূপ। তাই বিরল ও অপূর্ব সুন্দর এই গোলাপ প্রজাতিটি রক্ষায় এখন থেকেই সবাইকে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।