১.
মূল উত্তরের আগে একটু ইতিহাস ঘুরে আসে যাক। ফুলের ব্যবহারের ইতিহাসের নিদর্শন মেলে প্রাচীন মিশরীয় সময়ে। ১২০,০০০ বছর আগে প্রাচীন মিশরীয় কবরে পাথরের দেয়ালে ফুলের অঙ্কন পাওয়া গেছে। তখন ফারাওরা টেবিল সাজানোর জন্যও ফুলদানিতে ফুল রাখত। আবার যুদ্ধে যাওয়ার আগে তাদের যুদ্ধযান সাজাতে ব্যবহার করতো ফুল।
অন্যদিকে, মিশরীয় নারীরাও ফুল পছন্দ করত কারণ ফুল তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল যেহেতু ফুল আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হতো। এছাড়া তারা তাজা ফুল পূজা করতে ব্যবহার করতো। মিশরীয় নারীরাই প্রথম যারা তাজা ফুলের প্রতিকৃতি হিসাবে কৃত্রিম ফুল তৈরি করেছিলো।
মধ্যযুগে নারীরা ফুল পছন্দ করত তাদের ঘ্রাণের কারণে; সাজসজ্জার পরিবর্তে সুগন্ধি হিসাবে তারা ফুল ব্যবহার করতো। সেই সময়ে, গোসল প্রচলন ছিলো না, বলতে গেলে তখন গোসল এক ধরনের বিলাসিতা ছিল। সাধারণত নিয়মিত গোসল করত না কেউ, ফলে শরীরে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হতো। শরীরের গন্ধ কমানোর জন্য, নারীরা তাদের বিয়ের দিনে তাজা এবং সুন্দর গন্ধ পেতে সুগন্ধি ফুলের তোড়া ব্যবহার করতো।
ফুলের মানসিক প্রভাব অনেক বেশি নারীদের ওপর পুরষের তুলনায়। বর্তমান ব্যস্ত বিশ্বে আমাদের চাকরি-বাকরি, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, শখ-আগ্রহের মধ্যে সবসময়ই মনে হয় যে আমরা দৌড়ের ওপর আছি। এই ব্যাস্ত সময় যেকোনো নারীকে এক গুচ্ছ ফুল দিলে সে যে অনুভুতি অনুভব করবে তা হয়তো বেশিরভাগ পুরুষ করবে না। সেই এক গুচ্ছ ফুল জীবনটাকে উপভোগ করার কথা মনে করিয়ে দিবে।
২.
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন? দ্য স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ জার্সি দ্বারা প্রকাশিত এই সমীক্ষা অনুসারে, ফুল মানুষের, বিশেষ করে নারীদের সুখী আবেগ, স্মৃতি, সন্তুষ্টির অনুভূতি বৃদ্ধি এবং ভাল এবং স্বাস্থ্যকর সামাজিক আচরণের প্রচারের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করার একটি সহজ উপায় সরবরাহ করে। নারীরা প্রচীন কাল থেকে পুরুষের তুলনায় ফুল সম্পর্কৃত বিষয়ে বেশি জরিত ছিলো বিধায় তাদের মধ্যে পুরষের তুলনায় ফুল সম্পর্কৃত অনুভূতি তুলনামূলক বেশি কাজ করে।
দ্য স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ জার্সি করা গবেষণায় গবেষক দলটি ১০ মাস মেয়াদে মস্তিষ্কের সাথে ফুলের সম্পর্ক খোঁজ করেছে, ফুলের সংস্পর্শে থাকার সময় গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর আচরণগত এবং মানসিক প্রতিক্রিয়ার উপর ফোকাস করে। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই নারী ছিলেন, তবে কিছু নির্দিষ্ট গবেষণার ক্ষেত্রে, নারী এবং পুরুষ উভয়কেই মূল্যায়ন করা হয়েছিল। গবেষণার কিছু ফলাফল পয়েন্ট আকারে তুলে ধরলাম:
১. ফুলের বিভিন্ন রং ক্রোমোথেরাপি বা কালার থেরাপির মাধ্যমে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের থেরাপিতে আবেগ এবং সুখী চিন্তাকে উদ্দীপিত করতে রং ব্যবহার করা হয়।
২. ফুল সুখের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী সকল বয়সের বয়সের নারী পুরুষ ফুল পেয়ে আনন্দ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সত্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ হাসি প্রকাশ করেছিল। তবে ফুল পেয়ে নারীদের মধ্যে আনন্দ বেশি ফুটে উঠেছিলো।
৩. ফুলের দিকে তাকানো লং-টার্ম মুডের জন্যও উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ফুল গ্রহণ বা দেখার পরে কম ডিপ্রেসড, কম অ্যাংশাস এবং কম স্ট্রেসড অনুভূতি প্রকাশ করেছে।
৪. ফুল তাদের আরও ‘কানেকটেড’ করেছে। গবেষণার ফলাফলে এটিও বিশ্বাস করা হচ্ছে যে ফুল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। এই কারণেই আমাদের বাড়িতে ফুল রাখা উপকারী, বিশেষ করে যখন আমাদের অতিথি থাকে।
৫. ফুল পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য স্মৃতিশক্তির প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যখন বয়স্ক অংশগ্রহণকারীদের (৫৫+ বছর বয়সী), ফুল তাদের সাধারণভাবেই মুড ভালো করে দেয় এবং ফুল তাদের এপিসোডিক স্মৃতি উন্নতি কাজে প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে।
ফুল নারী জীবন, অনুভূতি এবং আবেগে সত্যিকারের এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা প্রকৃতপক্ষে সুখী অনুভব করাতে সক্ষম। এমনকি ইতিহাস জুড়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে নারীরা ফুল বেশি পছন্দ করে। তবে এই গবেষণায় দেখা গেছে যে পুরুষরাও ফুলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বিবর্তনের ধারা কারণে সেই অনুভূতিটা নারীদের মধ্যে বেশি, সেজন্য দেখা যায় তুলনামূলক নারীরা ফুল একটু বেশি পছন্দ করে।
রেফারেন্সঃ
J Haviland-Jones, H H Rosario, P Wilson, T R. McGuire, Evolutionary Psychology. 2005; 3(1)
DOI: 10.1177/147470490500300109
http://dx.doi.org/10.1177/147470490500300109
Huss E, Bar Yosef K, Zaccai M. Humans’ Relationship to Flowers as an Example of the Multiple Components of Embodied Aesthetics. Behavioral Sciences. 2018; 8(3):32. https://doi.org/10.3390/bs8030032
লেখা : Sabrina Badhon