মাঙ্কিপক্স কি? বিস্তারিত জানতে চাই। - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
404 বার দেখা হয়েছে
"জীববিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (9,280 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (9,280 পয়েন্ট)


বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষ না হতেই আরেক সংক্রামক ভাইরাস মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মাঙ্কিপক্স একটি ‘একেবারে বিরল ও স্বল্প পরিচিত’ রোগ, যা মাঙ্কিপক্স প্রজাতির ভাইরাসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ইঁদুর ও কাঠবিড়ালির মতো প্রাণীর মাধ্যমে সাধারণত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। গবেষণা বলছে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি বায়ুবাহিত এবং প্রায় চার দিন পর্যন্ত বাতাসে টিকে থাকতে পারে। এর অর্থ এই সময়কালে এটি সংক্রামকও হতে পারে।

৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয় নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আর্দ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার। এরপর একসময় মানবদেহেও সংক্রমণ ঘটায় এই ভাইরাসটি। সাধারণত হালকা ভাইরাল সংক্রমণের জন্য দায়ী এই ভাইরাস। ভাইরাসটি গুটিবসন্তের মতো ভাইরাল প্রজাতির সদস্য। এই প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ভেরিওলা ভাইরাস, ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস ও কাউপক্স ভাইরাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কঙ্গো প্রজাতি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতি নামক দুই প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। এই দুইয়ের মধ্যে কঙ্গো প্রজাতির চেয়ে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতির তীব্রতা তুলনামূলক কম। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে কঙ্গো প্রজাতিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশের বেশি। তবে বাচ্চাদের মৃত্যুর আশঙ্কা আরও বেশি। অন্যদিকে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার ১ শতাংশের মতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঠিক কোন প্রজাতির মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের দ্বারা রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তা সঠিকভাবে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সংস্থা।

ইতিমধ্যে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ মধ্যপ্রাচ্যেও এই রোগটি শনাক্ত হয়েছে। আফ্রিকার বাইরে ‘মাঙ্কিপক্সের’ এই অস্বাভাবিক বিস্তার বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রমতে, এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১১৫ জনের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে বা সন্দেহভাজন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশও রয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দেশে শিগগিরই এই ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। এই সংস্থাটি ইতিমধ্যে আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন আক্রান্ত দেশসহ অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা শুরু করেছে। জীবনঘাতী এই ভাইরাসের শনাক্তকরণ, নজরদারি ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য কাজ করছে এই সংস্থাটি।

করোনা মহামারির মতোই বিশ্বজুড়ে এই নতুন ভাইরাস নিয়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বাংলাদেশও এই উদ্বেগের বাইরে নয়, কারণ যেসব দেশে ইতিমধ্যে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ দেখা গেছে, সেসব দেশ থেকে প্রায় প্রতিদিন লোকজন আসছেন। এ জন্য মাঙ্কিপক্স নিয়ে ঢাকাসহ দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে যত দ্রুত সম্ভব সরকারের বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।


২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। আমদানি করা প্রাণীর দেহ থেকে দেশটিতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই সময় দেশটির ছয়টি প্রদেশের ৭১ জনের শরীরে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছিল। ১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১ দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পর নাইজেরিয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি এ রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। দেশটিতে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের দেহে উপসর্গ দেখা গেছে এবং ১৫ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চারটি মহাদেশের লোকজন কীভাবে মাঙ্কিপক্সের সংস্পর্শে এসেছেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বর্তমানে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হওয়া লোকজনের মধ্যে এমন অনেক পুরুষ আছেন, যাঁরা পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন। স্পেনের মাদ্রিদ অঞ্চলে কয়েকটি ঘটনায় এ ধরনের শারীরিক সম্পর্কের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠ ও গায়ে প্রচণ্ড ব্যথার মতো লক্ষণ। কাঁপুনি ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া দেহের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। সেই সঙ্গে মুখে ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা দিতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সেই ক্ষত। ফাটা বা অমসৃণ খসখসে ত্বক (যদিও তা দেখা যায় না), শ্বাসতন্ত্র অথবা চোখ, নাক ও মুখ, সংক্রমিত প্রাণীর কামড়, আক্রান্ত প্রাণী অথবা মানুষের রক্ত, শরীরের তরল বা পশম স্পর্শ করা, সংক্রমিত প্রাণীর মাংস সঠিকভাবে রান্না ছাড়া খাওয়া হলে, ফুসকুড়ি রয়েছে এমন কারও ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা অথবা গামছা স্পর্শ করা, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কারও ত্বকের ফোসকা অথবা খোসপাঁচড়া স্পর্শ করা অথবা সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি ও হাঁচির খুব কাছাকাছি যাওয়ার মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে।
এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ অথবা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। অতীতে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ রোধে গুটিবসন্তের টিকা ব্যবহার করা হতো বলে জানা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য ব্যবহৃত টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে শতকরা ৮৫ ভাগ কার্যকর। যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুরো দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য গুটিবসন্তের টিকার যথেষ্ট মজুত আছে। এক বিবৃতিতে মার্কিন সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, গুটিবসন্তের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রয়েছে; যা বিশেষ পরিস্থিতিতে মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

করোনা মহামারির মতোই বিশ্বজুড়ে এই নতুন ভাইরাস নিয়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বাংলাদেশও এই উদ্বেগের বাইরে নয়, কারণ যেসব দেশে ইতিমধ্যে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ দেখা গেছে, সেসব দেশ থেকে প্রায় প্রতিদিন লোকজন আসছেন। এ জন্য মাঙ্কিপক্স নিয়ে ঢাকাসহ দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে যত দ্রুত সম্ভব সরকারের বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশফেরত সব যাত্রীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কি না কিংবা মাঙ্কিপক্সের কোনো লক্ষণ তাঁর শরীরে আছে কি না এবং তিনি মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত কোনো দেশে ভ্রমণ করেছে কি না ইত্যাদি তথ্য জেনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তদারকি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মাঙ্কিপক্সের উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে বা শরীরে ফুসকুড়ি–জাতীয় কিছু হলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে আইসোলেশনে রাখা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু ‘মাঙ্কিপক্স’ মূলত গুটিবসন্ত বা চিকেনপক্স গোত্রের রোগ, তাই বেশির ভাগ রোগীই সুষম খাবারদাবার গ্রহণসহ পরিমিত বিশ্রাম নিলে চিকিৎসা ছাড়াই দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। যদিও এটি গুটিবসন্তের চেয়ে কম মারাত্মক, তবুও এই রোগটি করোনার মতো মহামারি আকারে ছড়ানোর আগেই আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই কেবল খুব সহজেই এই রোগটি মোকাবিলা করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।

ড. এ কে লুৎফুল কবির সহযোগী অধ্যাপক, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 622 বার দেখা হয়েছে
29 জানুয়ারি 2022 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Melody (6,010 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 205 বার দেখা হয়েছে
21 জুন 2022 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Nishat Tasnim (7,950 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 332 বার দেখা হয়েছে
20 জুন 2022 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Nishat Tasnim (7,950 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 847 বার দেখা হয়েছে
20 জুন 2022 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Nishat Tasnim (7,950 পয়েন্ট)

10,807 টি প্রশ্ন

18,512 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

510,821 জন সদস্য

78 জন অনলাইনে রয়েছে
23 জন সদস্য এবং 55 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

    1280 পয়েন্ট

  2. Dibbo_Nath

    370 পয়েন্ট

  3. Fatema Tasnim

    340 পয়েন্ট

  4. _Polas

    160 পয়েন্ট

  5. Arnab1804

    140 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মাছ মশা শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা মস্তিষ্ক ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...