হাইস্কুল লাইলে যখন তীব্র গরমের মধ্যেও মাঠে শিক্ষা সমাবেশ হতো তখন দেখতাম মাঝেমধ্যেই হুটহাট করে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। আর এরমধ্যে মেয়েদের সংখ্যাটাই বেশি। তখন অনেকেই ভাবতাম শিক্ষা সমাবেশ ফাঁকি দেওয়ার জন্যই হয়তো তারা ইচ্ছা করে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করছে। আবার অনেকসময় দেখেছি যে মাথায় খুব বড়োসড়ো আঘাত পেলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়।
আচ্ছা আমরা কি কোনোদিন ভেবে দেখেছি কেন মানুষ অজ্ঞান হয়??
এই প্রশ্নের উত্তরটা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে আমাদের চেতনা সম্পর্কে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা যাবি, যা সিদ্ধান্ত নেই, আমাদের সুখ-দুঃখ আবেগ অনুভূতি সবই নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিকের দ্বারা।সহজভাবে বলতে গেলে,আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের নিউরনগুলো একটির সাথে আরেকটি একত্রিত হয়ে আমাদের পুরো শরীর থেকে মস্তিকে সিগন্যাল পাঠায় এবং সেই অনুযায়ী আমাদের মস্তিস্ক যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অনেকটা এভাবেই উদ্রেক ঘটে আমাদের চেতনার।
তো এইবার আসা যাক অজ্ঞান হওয়া প্রসঙ্গে। ঠিক কি কারণে একজন মানুষ অজ্ঞান বা চেতনাহীন হয়ে পরে?
গবেষকদের মতে একজন মানুষের অজ্ঞান হওয়ার পিছনে প্রধানত ৪ টি ফ্যাক্টর কাজ করব। যথাঃ
১. নিম্নরক্তচাপ: শরীরে রক্তচাপ কমে গেলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়।
২. ডায়াবেটিক: অতিরিক্ত মুত্র ত্যাগ করলে শরীরে জলের পরিমান কমে যায়। ফলে অত্যাধিক সুগারে নার্ভ দূর্বল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়।
৩. হৃদরোগ: হার্টে সমস্যা থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন হয়না। ফলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়।
৪. ডিহাইড্রেশন এর কারণে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মূল কারণটি ঘটে মস্তিষ্কে।নিম্নরক্তচাপ,ডায়াবেটিস,হৃদরোগ,ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি কারনে যদি মস্তিস্কের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের শরীর অনেকসময় মস্তিস্কের সাথে যোগাযোগ হারায় আর এটাকেই আমরা জ্ঞান হারানো বা অজ্ঞান হওয়া বলি। আবার নার্ভ সিস্টেমের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি হলে কোনো কোনো সময় স্থায়ীভাবেও একজন মানুষ চেতনা হারাতে পারে আর সাধারন ভাষায় একে কোমায় চলে যাওয়া বলে। অস্থায়ীভাবে অজ্ঞান হওয়া মানে কিছুক্ষন পরে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যাক্তি তার জ্ঞান ফিরে পাবে। তবে শুধু চেতনা হারানোই না আমাদের স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেহের নির্দিষ্ট অংশ প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া, ব্রেইনডেথ এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।
আবার অনেকক্ষেত্রে ঔষধ প্রয়োগ করেও মানুষকে অজ্ঞান করা হয়। অইক্ষেত্রে ঔষধে এমন রাসায়নিক উপাদান থাকে যা মস্তিস্কের উপর ক্রিয়া করে মানুষকে চেতনাহীন করে দেয়। যেমনঃ অপারেশন এর আগে রোগীকে এনেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। আবার ল্যাবে কোনো প্রানীকে চেতনাহীন করতে ব্যবহৃত হয় ক্লোরোফরম।
সুতরাং মানুষ অজ্ঞান হয় কখন আর কেন তা আমরা এতক্ষণে নিশ্চই ক্লিয়ার??
শরুতেই বলেছিলাম তীব্র গরমের কারনে অনেকেই বিদ্যালয়ের মাঠ সমাবেশে অনেকেই জ্ঞান হারায়। এইবার আসি সেই ব্যাখ্যায়। তীব্র রোধ যখন আমদের মাথায় এসে পরে তখন অত্যাধিক তাপমাত্রার কারনে দেহের স্বাভাবিক রক্তচাপ বেড়ে/কমে যায়। তার উপরে আবার রয়েছে গরমের কারণে দেহে পানির ঘাটতি যার কারনে হতে পারে ডি-হাইড্রেশন। আর এসব কারণেই আমরা অনেক শিক্ষার্থীকে মাঠ সমাবেশে জ্ঞান হারাতে দেখি।
হাইস্কুলে থাকাকালীন দেখতাম মাঠ সমাবেশে কেউ অসুস্থতার দরুন জ্ঞান হারালে অনেকেই সেটা নিয়ে মজা করে। কিন্তু বিষয়টা মোটেও হাস্যকর না। পরিস্থিতি খারাপ হলে একজন মানুষের হিটস্ট্রোক থেকে মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং কারো শারীরিক দূর্বলতা নিয়ে কখোনই মজা করা উচিত না।