আমরা অনেকসময় অতিরিক্ত ব্যাস্ততার জন্য বা অলসতার জন্য গোসল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি! আর শীতকাল হলে তো কথাই নেই। কিন্তু কী হবে যদি আমরা এক বছর ধরে গোসল না করি? আজ সেটাই জানার চেষ্টা করবো।
বহুদিন ধরে আপনি গোসল বন্ধ করে দিলে আপনার ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে আরও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হবে। চুলকানি সৃষ্টি করার জন্য ব্যাকটেরিয়া এবং ময়লা একসাথে কাজ শুরু করার কারণে আপনার ত্বক চুলকানো শুরু হবে। এছাড়াও নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। নিচ সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
★সংক্রমণ:
প্রতিদিন আমরা আমাদের মোবাইল ফোন, ডোর হ্যান্ডেল এবং টয়লেট পরিষ্কার করে থাকি এতে আমাদের হাতে কত পরিমাণ ব্যাকটিরিয়া এবং জীবাণু থাকতে পারে তা কল্পনারও বাইরে। আপনি যদি নিজের শরীর নিয়মিত পরিষ্কার না করেন তাহলে এই জীবাণু এবং ব্যাকটিরিয়াগুলো আপনার হাত, নাক বা মুখের মাধ্যমে আপনার পাকস্থলীতে প্রবেশ করবে, এবং এর ফলে আপনি সর্দি, কাশি, জ্বর এমনকি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন!!!
★ছত্রাক সংক্রমণ:
ছত্রাক আপনার ত্বকে, আপনার মুখের ভিতরে এবং আপনার যৌনাঙ্গে বাস করতে পারে। শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং অতিরিক্ত ওজনের লোকদের ছত্রাকের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সুতরাং সেই অঞ্চলগুলি ভালভাবে পরিষ্কার করা আমাদের সুস্থ্যতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
★ত্বকের মৃত কোষ:
আপনি যখন গোসল করেন এবং আপনার ত্বক স্ক্রাব করেন, তখন ত্বকের নতুন কোষ বৃদ্ধির জন্য ত্বকের মৃত কোষগুলো ধুয়ে চলে যায়। কিন্তু আপনি যদি গোসল করা বন্ধ করে দেন তাহলে পুরো ৪ কেজি মৃত ত্বকের কোষ আপনার সমস্ত শরীরে জমা হবে।
★আপত্তিজনক শরীরের গন্ধ:
যদিও ঘামের কোনও গন্ধ নেই, তবে এটিতে উপস্থিত ব্যাকটিরিয়া এবং জীবাণু'র জন্য দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় । যদি কোনও ব্যক্তির দেহে দুর্গন্ধ থাকে তাহলে জীবাণুরা নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে নেয়।
এই অবস্থাটিকে ভোল্টারি ক্লান্তি বলা হয় যার অর্থ দীর্ঘসময় ধরে আপনার শরীরে দুর্গন্ধ স্থায়ী হওয়ার ফলে আপনি নিজের শরীর থেকে কোনও খারাপ গন্ধ লক্ষ্য করবেন না কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনার চারপাশের অন্যরা এই দুর্গন্ধ পাবে না।
★অপরিষ্কার যৌনাঙ্গ:
নিয়মিত গোসল না করলে আমাদের শরীরের যৌনাঙ্গে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে কারণ এটি আমাদের দেহের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ । যদি আমরা বহুদিন গোসল নাহ করি তাহলে আমাদের যৌনাঙ্গে শুধু খারাপ দুর্গন্ধ ই সৃষ্টি হবে না, সাথে সাথে এটি ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত এবং আরও খারাপ ঝুঁকিতে পড়বে । সেখানে জমে থাকা সমস্ত ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে চুলকানির সৃষ্টি হবে এবং অবিশ্বাস্যরকম অস্বস্তিকর কারণ হবে !!
★ব্রণ:
ব্রণ এবং পিম্পলগুলি আপনার মুখ থেকে আপনার শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে। অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়াগুলো আপনার ত্বকে তৈরি পিম্পলগুলির উপস্থিতির ফলে follicles এর প্রদাহ সৃষ্টি করবে!
প্রত্যেকের ত্বক আলাদা এবং প্রতিটি ব্যক্তির ত্বক ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ লাভ করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, শীতকালে আপনার ত্বক শুষ্ক থাকে , এক্ষেত্রে খুব বেশি গোসল করলে আপনার ত্বকে চরম শুষ্কতার সৃষ্টি হতে পারে। অপরদিকে গ্রীষ্মে প্রতিদিন গোসল করলে আপনার ত্বকে কখনোই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে নাহ।
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন অন্তত একবার গোসল করা আমাদের জন্য আবশ্যক!
আপনার ত্বক যদি খুব বেশি তৈলাক্ত হয় তাহলে আপনার একাধিকবার গোসল করার ইচ্ছা হতে পারে। কিন্তু খুব বেশি পরিমাণ গোসলের ফলে আপনার ত্বক থেকে "ভাল" ব্যাকটিরিয়াগুলিও চলে যেতে পারে!
শুধুমাত্র শরীরে যাতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি না হয় এই জন্যই যে নিয়মিত গোসল করবেন ব্যাপারটা এমন না!! প্রতিদিন গোসল করার ফলে আপনার শরীর ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত হওয়া থেকে এবং চুলকানি , প্রদাহ এবং অতিরিক্ত ব্রণ সৃষ্টি হওয়ার থেকে রক্ষা পাবে!
আবার খুব কম যেমন সপ্তাহে একদিন কিংবা দুইদিন পর পর গোসল করলে আপনার ত্বক ভাল এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা তৈরি করবে। আবার ত্বকে খুব বেশি খারাপ ব্যাকটেরিয়া ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকিও সৃষ্টি করে।
লেখকঃ Meherin Afrose Promity