এটা তো এখন অনেকেরই জানা, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ বিপদ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে হিমালয়ের চূড়ার বরফ এবং উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের জমাটবাঁধা বরফ বা হিমশৈলী গলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই বরফগলা পানিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা (সি লেভেল) বেড়ে যাবে।
ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মাত্র ৪৫ সেন্টিমিটার বাড়লে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভূমি সমুদ্রের নিচে চলে যাবে। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলও।
প্রশ্ন হলো, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বলতে ঠিক কী বোঝায়? এই উচ্চতা কি সব সমুদ্রের জন্য একই সমান? যদি সমান হয়, তাহলে কেন জলবায়ু বিপর্যয়ে একেক দেশে একেক রকম প্রভাব পড়বে? আসলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সবখানে সমান হওয়া উচিত, কিন্তু সমান নয়। বিশ্বের সব মহাসাগর একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। তাই সাগরের পানির উপরিতলের উচ্চতা সবখানে সমান হওয়াই স্বাভাবিক।
কিন্তু এখানে অন্য কিছু উপাদান কাজ করে। যেমন মহাসাগর যত বড় হবে, তার পানির ওপর চাঁদের আকর্ষণশক্তি তত বেশি প্রযুক্ত হবে। ফলে সেখানে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আকারও বড় হবে। আবার যে সাগরের গভীরতা বেশি, তার পানি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণশক্তির টানে বেশি নিচে নেমে যাবে, ফলে সেই সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা কিছুটা কম হবে। আবার আবহাওয়ার ধরনও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় প্রভাব ফেলে। যদি কোনো মহাসাগরের ওপরের বায়ুর চাপ কমে যায়, তাহলে সেখানে সাগরপৃষ্ঠের পানি কিছুটা ফুলে উঠতে পারে। আবার পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রের পানিকে ঠেলে উঁচু করে পুব দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এমন নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সাগর-মহাসাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা সমান থাকে না, সামান্য হেরফের হয়। কিন্তু যখন বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, তখন আসলে গড় উচ্চতাকে বোঝানো হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জোয়ার-ভাটার বিভিন্ন পরিমাপ ও অন্যান্য উপাদান হিসেবে নিয়ে ১৯ বছরের গড় উচ্চতাকেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বলে ধরা হয়। আমরা যখন বলি, সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলের চাপ পারদস্তম্ভের ৭৬০ মিলিমিটার, তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের ওই গড় উচ্চতাকে বোঝানো হয়।
লেখক : আব্দুল কাইয়ূম