বরফ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার (৩৯.৩৭ ইঞ্চি) বাড়লে বাংলাদেশের ১৭-২০ শতাংশ স্থলভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্রণীত বাংলাদেশের জাতীয় কৌশলনীতির তথ্যানুসারে দেশের আড়াই কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। নাসার সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার ঘনত্ব ও সীমিত সম্পদের কারণে পরিবেশ-উদ্বাস্তুদের অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা কষ্টসাধ্য হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যাদের সম্পদ সীমিত, তাদের পক্ষে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কষ্টকর হবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়বে। উপকূলীয় অবকাঠামো সমুদ্রবন্দর, রাস্তাঘাট ও রেলসংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্দরসমূহের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাহত হবে। এর ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর ও রাষ্ট্রসমূহের মানুষকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা হ্রাস পাবে, যা রাষ্ট্রসমূহকে ভঙ্গুর করে তুলবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র, যেমন নিউ ইয়র্ক, সাংহাই, মুম্বাই এগুলো সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। এই অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিগুলো যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা সাময়িকভাবেও যদি এদের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়ে যাবে। উপকূলে অবস্থিত পর্যটনশিল্পের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। বাংলাদেশে যে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটছে, তা হয়তো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়। বরং বৃদ্ধির হার কতটা কমিয়ে রাখা যায়, সেটাই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। পাশাপাশি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যেসব নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে, তা মোকাবিলার জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ পদক্ষেপ দরকার। একই সঙ্গে এ জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উদ্যোগ। তাহলেই পৃথিবীর মানুষকে, ভবিষ্যৎকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।
লেখক : সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম