Rh ফ্যাক্টর : কার্ল লেন্ডস্টেইনার এবং এ. এম উইনার ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে রেসাস বানর এর লোহিত কণিকায় এক ধরণের এন্টিজেন আবিষ্কার করেন । এই এন্টিজেনকে রেসাস এন্টিজেন বা রেসাস ফেক্টর বা Rh ফ্যাক্টর বলে ।পরবর্তীতে মানুষের লোহিত রক্ত কণিকাতেও এদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন ।
গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে প্রায় ৮৫% মানুষের লোহিত রক্ত কণিকায় আর এইচ ফ্যাক্টর বিদ্যমান থাকে ।যেসব মানুষের লোহিত রক্ত কণিকায়্ আরএইচ ফ্যাক্টর বিদ্যমান থাকে তাদের রক্তগ্রুপকে আরএইচ পজেটিভ এবং যেসব মানুষের লোহিত রক্ত কণিকায় আরএইচ ফ্যাক্টর অনুপস্থিত থাকে তাদের রক্তগ্রুপকে এরএইচ নেগেটিভ বলা হয় ।
যেমন : এ পজেটিভ, এ নেগেটিভ, বি পজেটিভ, ও পজেটিভ, এবি নেগেটিভ ইত্যাদি ।
প্রধানত দুই ক্ষেত্রে আরএইচ ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেমন:
১। আরএইচ নেগেটিভ রক্তগ্রুপ বিশিষ্ট কোন রোগীর দেহে আরএইচ পজেটিভ গ্রুপের রক্তের সঞ্চারণ ঘটালে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই রোগীর দেহের প্লাজমায় আরএইচ নেগেটিভ এন্টিবডি সৃষ্টি হয় । ঐ রোগী যদি পরবর্তীতে কখনও আরএইচ পজেটিভ গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করে তাহলে আরএইচ নেগেটিভ এন্টিবডির প্রভাবে গৃহীত রক্তের লোহিত কণিকাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে । এতে বিভিন্ন অসুবিধাসহ রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।অবশ্য গ্রহীতা যদি পরবর্তীতে আরএইচ পজেটিভ গ্রুপের রক্ত গ্রহণ না করে তবে রক্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে ।
২। আরএইচ নেগেটিভ রক্তগ্রুপ বিশিষ্ট মহিলার সাথে আরএইচ পজেটিভ রক্তগ্রুপের কোন পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে আরএইচ ফ্যাক্টর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে ।জেনেটিকভাবে আরএইচ পজেটিভ অবস্থা আরএইচ নেগেটিভ অবস্থার উপর প্রকট হওয়ায় এই দম্পত্তির প্রথম সন্তান আরএইচ পজেটিভ হবে । এই শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের রক্তে আরএইচ নেগেটিভ এন্টিবডি সৃষ্টি হবে ।প্রথমবার গর্ভধারণকালে আরএইচ নেগেটিভ এন্টিবডি যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত না হওয়ায় শিশুর কোন ক্ষতি হয় না এবং এই শিশু জীবিত থাকে ।কিন্তু দ্বিতীয় বা পরবর্তী সময়ে আরএইচ পজেটিভ সন্তান ধারণকালে পূর্বে উৎপাদিত মায়ের রক্তের আরএইচ নেগেটিভ এন্টিবডি অমরার মাধ্যমে ভ্রুণে প্রবেশ করে এবং ভ্রুণের লোহিত কণিকাগুলো ধ্বংস করতে থাকে । এতে ভ্রুণ বিনষ্ট হয়, গর্ভপাত ঘটে বা সদ্যজাত শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।এ অবস্থায় শিশু জীবিত থাকলেও তার দেহে প্রচন্ড রক্তাল্পতা এবং জন্মের পর জন্ডিস রোগ দেখা দেয় ।তাই বিয়ের আগে হবু বর কণের রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া উচিত এবং উভয়েরই একই আরএইচ ফ্যাক্টরভুক্ত হওয়া উচিত অর্থাৎ উভয়েরই আরএইচ পজেটিভ নয়তো উভয়েরই আরএইচ নেগেটিভ দম্পতি হওয়া উচিত ।
পরিশেষে বলা যায় রক্ত দান বা গ্রহণ করার সময় শুধু রক্তের গ্রুপই নয় রক্তের আরএইচ ফ্যাক্টর নির্ণয় এবং রক্তে জীবাণুর উপস্থিতি সম্বন্ধেও পরীক্ষা করা উচিত ।
- মাসুদ রানা