ভাল না খারাপ সেটা কোন কোন কাজ একসাথে করছি তার উপর নির্ভর করে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের শরীর (মস্তিষ্ক সমেত) মাল্টিটাস্ক করতে অভ্যস্ত, যেমন নিঃশ্বাস, রক্ত চলাচল ঠিক রাখার সাথে দেখা, শোনা, তার সাথে হাঁটা/লাফানো/হাসা কত কাজই না একসঙ্গে করে!
কিন্তু তাও আমাদের দিল মাঁগে More! এই অতিরিক্ত মাল্টিটাস্কের ৪টে উদাহরণ দিলাম:
- কাজের কাজ: গান গাওয়ার সময় আমরা গানের কথা আর সুর মনে রাখি, সাথে বাদ্য বাজাই: যারা গান শিখেছে তাদের ক্ষেত্রে হার+মণি+আম, তবলা, একতারা, বাঁশি ইত্যাদি আর আমাদের মত বেসুরোদের (অসুর?) ক্ষেত্রে ঢাক-ঢোল, কাঁসা, টেবিল, অন্যের পিঠ, প্লাস্টিক, চিকচিকি -মানে হাতের কাছে যা থাকে। এতগুলো ঝক্কিকে মস্তিষ্ক বেশ সামলায় কিন্তু!
- পেশাদার: কল সেন্টার এজেন্ট গ্রাহকের সাথে কথা বলাকালীন, তার কথা শুনে উত্তর দেয়া ছাড়াও ঐসময় সফটওয়্যার সংক্রান্ত যাবতীয় করনীয় কাজ (কলের বিবরণ সহ লগ বানানো ইত্যাদি) করেন।
- অকাজের কাজ: রান্না করতে করতে টিভি দেখা, সবজি বোনানোর সময় জীবনসঙ্গীর সাথে ঝগড়া করা, টয়লেট করার সময় ফোনে সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর সাথে সোয়া-এক ঘণ্টা ধরে পুলকজাগানো যদিও বেদরকারি কথা বলা, টিভি সিরিয়াল দেখতে দেখতে বান্ধবীর সাথে সিরিয়ালটা কতটা ফালতু সে বিষয়ে চ্যাটিং, মোবাইলে/কম্পিউটারে ক্যোরা বা অন্য কিছু ঘাঁটতে ঘাঁটতে সিনেমা দেখা; গান চালিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে চোখে কালো চশমা পড়ে ঘুমনো; হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পারাপার (ফলে কখনো-সখনো জীবন পারাপার), গাড়িতে ওঠা-নামা করা। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যারা এইভাবে গান শোনেন, তারা সেই গানগুলো ৫০-৬০ বাস শুনলেও গানের সুর, বিশেষত কথা ঠিকমত মনে করতে পারেন না - কারণ মনটা সেদিকে সমানভাবে থাকে না।
- কুকাজের কাজ: নিত্যকর্ম সারার মাঝে সারাদিন ধরে অন্যেরা কে কী করছে তার উপর নজর রাখা, সাহায্য করার অন্য নয়, পরনিন্দার মহৎ উদ্দেশ্যে! অথবা এক হাতে বন্ধুক ধরে, পান চিবুতে চিবুতে আরেক হাতে লুঠের মাল গোনা!
সবরকমের কাজ আমাদের ব্রেনে একই প্রভাব ফেলে না বা ব্রেনকে একভাবে খাটায় না, ঠিক যেমন সব সফটওয়্যার একই জায়গা অথবা মেমরি নেয় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্ক করলে সব কাজই ঠিকমত করা যায়, যেমন গান করতে করতে কোনো কিছু বাজানো বা লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে নিজস্বী বা সেল্ফি তোলা।
অন্য ক্ষেত্রে যেসব কাজে বেশি মনোযোগের দরকার, সেই রকম একাধিক কাজ একসাথে করলে আমাদের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মস্তিষ্ক কোনো একটাতে বেশি মনোযোগ দেয় বলে অন্যটা/অন্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়/হতে পারে, যেমন আইল্যাশিং আর ভ্রূসজ্জা একসাথে করা, নেল পলিশের সময় নখ কাটা, সার্জারি করার সময় নাচা, কিম্বা খেতে খেতে লাফানো।
তাই (নিজবিবেচনার ভিত্তিতে) শুধুমাত্র দরকারি ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং করা উচিত।
ক্রেডিট: সুস্নাত মন্ডল (কোরা)