Nishat Tasnim সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডের মতো উত্তর মেরুর দেশগুলোতে বছরের প্রায় ছয় মাস কখনোই সূর্য অস্ত যায় না। ওখানকার মুসলমানরা তাহলে কীভাবে রোজা রাখছেন? সম্প্রতি এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ার এক সাংবাদিক নরওয়ের সর্ব উত্তরের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ট্রোমসো যান। ওখানকার মুসলমানদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তিনি জানতে পারেন কীভাবে তারা মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে সিয়াম সাধনা করছেন।
ট্রোমসো শহরটি ভৌগলিকভাবে আর্কটিক সার্কেল বা সুমেরু বৃত্তের প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শহরের চারদিক বরাফাবৃত পর্বতমালা ও সমুদ্রের খাঁড়ি দিয়ে ঘেরা। প্রতি বছর মে মাসের শেষদিক থেকে শুরু করে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত শহরটির বাসিন্দারা ‘মিডনাইট সান’ বা ‘মধ্যরাতে সুর্য’ দেখার এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। সেখানকার অধিবাসীরা জানিয়েছেন, সুর্য এখানে কখনোই ডোবে না। ২৪ ঘন্টাই আকাশের মাঝখানে অবস্থান করে। তাই এ শহরে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হিসেব করে রোজা রাখা কখনোই সম্ভব নয়। এখানকার মুসলমানরা নিকটবর্তী এমন কোনো দেশের সঙ্গে সময় মিলিয়ে রোজা রাখেন যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। আবার সৌদি আরবের মক্কা নগরীর সময়ের সঙ্গে মিল রেখে দিনের হিসাব করেও রোজা রাখার নিয়ম রয়েছে। তবে সম্মিলিতভাবে আলোচনা করে সৌদি আরবের মক্কার সময়ের সঙ্গে মিল রেখেই তারা রোজা পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। মক্কায় যদি ভোর পাঁচটায় সূর্যোদয় হয় তাহলে ট্রোমসোর মুসলিমরাও নরওয়ের স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটা থেকেই দিনের সময় গণনা শুরু করবেন। মক্কার দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য খুবই ভারসাম্যপূর্ণ বলেই তারা এ নিয়মটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু রোজা নয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়ও তারা এভাবেই বিন্যস্ত করে পালন করছেন। এ তো গেল দিনের কথা। ট্রোমসোর মুসলমানদের এর আগেও অনেকবার রোজা রাখার জন্যে সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতার প্রমাণ দিতে হয়েছে।
শীতকালে তাদেরকে এর ঠিক উল্টো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। কারণ শীতকালে এখানে সারাক্ষণই রাত থাকে। সূর্যের দেখা মেলে না প্রায় ছয় মাস। তাই শীতকালের জন্যেও তারা মক্কার নিয়মই অনুসরণ করেন। গ্রীষ্মকালে যেমন সূর্য অস্ত যায় না তেমনি শীতকালে সূর্যোদয় হয় না। তাই মক্কার সময় অনুসরণ করাটাই তারা শ্রেয় মনে করেন।