পাহাড় যেভাবে তৈরি হলো :
বিজ্ঞানীদের ধারণা, পাহাড় সৃষ্টির আগে পৃথিবী অস্বাভাবিক উত্তপ্ত ছিল। পর্যায়ক্রমে তাপ বিকিরণের কারণে পৃথিবী ঠাণ্ডা হয়ে সংকুচিত হতে থাকে। ভূপৃষ্ঠের ভেতরের অতিরিক্ত চাপের কারণে তার কিছু অংশ ওপরের দিকে ভাঁজ হয়ে ফুলে উঠতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি হয়।ভূতত্ত্ববিদদের মতে, যে ভারী ভারী বৃহদাকার প্লেটগুলো পৃথিবীর ওপরের শক্ত স্তর সৃষ্টি করে, সেগুলোর নড়াচড়া আর সংঘর্ষের ফলেই উত্পত্তি ঘটে পর্বতমালার। দুটি প্লেট যখন পরস্পর ধাক্কা খায় তখন শক্তিশালী প্লেটটি অন্য প্লেটের নিচে গড়িয়ে চলে যায়। তখন ওপরের প্লেটটি বেঁকে গিয়ে পর্বত ও উঁচু উঁচু জায়গার জন্ম দেয়। নিচের স্তরটি ভূমির নিচে অগ্রসর হয়ে ভেতরের দিকে এক গভীর প্রসারণের জন্ম দেয়। এর মানে পর্বতের রয়েছে দুটি অংশ। ওপরে সবার জন্য দর্শনযোগ্য একটি অংশ থাকে। তেমনি নিচের দিকে গভীরে এর সমপরিমাণ বিস্তৃতি রয়েছে।
পর্বতগুলো ভূমির ওপরে ও নিম্নদেশে বিস্তৃত হয়ে পেরেকের মতো ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন প্লেটকে দৃঢ়ভাবে আটকে ধরে রাখে। ভূপৃষ্ঠের ওপরের অংশ বা ক্রাস্ট অবিরাম গতিশীল প্লেট নিয়ে গঠিত। পর্বতগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যই ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্তরকে ধরে রাখে। এর মাধ্যমে ভূকম্পন প্রতিরোধ করে অনেকাংশে। অথচ এই ক্রাস্টের রয়েছে গতিশীল গঠন। পাহাড়ের গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, মহাদেশগুলোর যে অঞ্চল পুরু, যেখানে সারি সারি পর্বতমালা আছে, সে স্থানে ভূপৃষ্ঠের শক্ত স্তর বা ক্রাস্ট ম্যান্টলের ভেতরে গভীরে ঢুকে যায়।
আধুনিক বিজ্ঞান এ বিষয়ে মতামত দিয়েছে এই সেদিন। কিন্তু এর হাজারো বছর আগে কোরআন এ বিষয়ে খবর দিয়েছে। কোরআনের একটি আয়াতে পাহাড়কে সরাসরি পেরেকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি জমিনকে করিনি বিছানাসদৃশ এবং পাহাড়গুলোকে পেরেকস্বরূপ?’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ৬-৭)
এমন কোনো পাহাড় নেই, ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে যার শিকড় নেই; বরং পাহাড়ের দৈর্ঘ্যের দিক থেকে প্রায় সাড়ে চার গুণ লম্বা অংশ মাটির অভ্যন্তরে আছে!
পাহাড় যে কারণে তৈরি হলো :
পৃথিবীর মোট স্থলভাগের প্রায় ২৭% জুড়ে আছে পাহাড়-পর্বত। বেশিরভাগ নদীর উৎপত্তি হয় পাহাড়-পর্বতে। সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে মেঘ হয়, তারপর তা পাহাড়ের গায়ে লেগে পানির ধারা শুরু হয়, যা বড় হতে হতে একসময় নদী হয়ে যায়। পাহাড় না থাকলে নদী থাকত না, নদী না থাকলে এত মাছ থাকত না, সেচের ব্যবস্থা থাকত না, থাকত না মাল পরিবহন, দূরে যাতায়াতের এত সহজ ব্যবস্থা। পাহাড়গুলো শীতকালে বরফ হিসেবে পানি জমিয়ে রাখে এবং গ্রীষ্ম, বসন্তকালে সেই বরফ গলে পানির ধারা নেমে আসে। যদি পাহাড় শীতকালে এভাবে বরফ জমিয়ে না রাখত, তাহলে অন্য ঋতুতে নদী-নালাগুলো শুকিয়ে যেত, শস্যক্ষেত, বনজঙ্গল শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যেত।পৃথিবীতে একসময় মানুষের মতো জটিল প্রাণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ছিল না। বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক পরিমাণে অক্সিজেন ছাড়ার জন্য যেসব ব্যাকটেরিয়া দরকার, তাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মলিবডেনাম ছিল না। যখন বড় বড় পর্বতগুলো তৈরি হলো, বিশেষ করে ৭৫০০ ফুটের বেশি উঁচু পর্বতগুলো, তখন সেই পর্বতগুলোর পৃষ্ঠ ক্ষয় থেকে যথেষ্ট পরিমাণে মলিবডেনাম বেরিয়ে এল এবং তা ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়াগুলো বিপুল পরিমাণে অক্সিজেন তৈরি করে বায়ুমণ্ডলে ২০% পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করল। এরপর থেকেই সম্ভব হলো জটিল বহুকোষী প্রাণের বিকাশ। যদি উঁচু পর্বত না থাকত, তাহলে বায়ুমণ্ডলে ২০% অক্সিজেন হতো না, কোনোদিন পৃথিবীতে মানুষ আসত না।
আল্লাহ تعالى পৃথিবীতে উঁচু পর্বত দিয়েছেন যেন বায়ুমণ্ডলে ২০% পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরি হয়, যার ফলে পৃথিবীতে উন্নত প্রাণের বিকাশ ঘটতে পারে।