এন্টিম্যাটার এবং ডার্ক ম্যাটার কি? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+9 টি ভোট
856 বার দেখা হয়েছে
"পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (1,480 পয়েন্ট)

9 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (47,700 পয়েন্ট)
ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে এখানে দেখুন -

https://sciencebee.com.bd/qna/9696/dark-matter?show=9708#a9708
+1 টি ভোট
করেছেন (47,700 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)

অ্যান্টিম্যাটার হচ্ছে কণার প্রতিরুপী এক ধরনের বিপরীত কণা। সহজ ভাষায় বললে কণার বিপরীত চার্জযুক্ত মৌলিক কণিকা সমন্বয়ে গঠিত একধরনের পার্টিকেল। যার ভর এবং স্পিন অন্য একটি কণিকার সমান, কিন্তু যার তাড়িৎ আধান, ব্যারিয়ন সংখ্যা, লেপটন সংখ্যা প্রভৃতি অন্য কণিকাটির সমমানের অথচ বিপরীতধর্মী। যেমনঃ প্রতিপ্রোটন বা অ্যান্টিপ্রোটন হল প্রোটনের বিপরীত এবং পজিট্রন হলো অ্যান্টি ইলেক্ট্রন।

image

চিত্রঃ ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার সংঘর্ষ

প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সুইটজারল্যান্ডের সার্ন-এ একটি দারুণ আবিষ্কার হয়েছে। সেটা কী? সার্ন তো জনপ্রিয় ওই হিগস-বোসন বা গড (ড্যাম) পার্টিকল খোঁজার জন্য - এবার আবার কী খুঁজে পেল?? উৎসাহী হয়ে পড়ায় মন দিলাম। দেখি এবার এরা খুঁজে পেয়েছে "অ্যান্টিম্যাটার"। আরে বাঃ, যুগান্তকারী আবিষ্কার। ডিরাক মশাই জানতে পারলে খুশি হতেন! খুব একটা কথা বলতেন না নিশ্চিত, তবে একটা মুচকি হাসি তো দিতেন বটেই।

image

কিন্তু এই অ্যান্টিম্যাটারটা কী জিনিস? সেটা খায় না মাথায় দেয়? যাঁরা লেখাটা পড়ছেন, তাঁদের অনেকেরই ভাসা ভাসা ধারনা আছে নিশ্চয়। তাঁরা জানেন, এটা খায়ও না মাথাতেও মাখে না বরং মাথা টাথার মতো "ম্যাটার" এর সংস্পর্শে এলেই বিপদ ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।

দাঁড়ান, একটু গভীরে নামা যাক - কী বলেন??

অ্যান্টিম্যাটার জিনিসটা কী? আগে ম্যাটার কী, সেটা জানি। আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখি যেমন মানুষ, পশু গাড়ি, গাছ পালা ইত্যাদি প্রভৃতি সবই ম্যাটার। মানে বস্তু আর কী। এগুলো সবই তৈরী ঐ অণু দিয়ে। আর তাকে ভাঙলে কিছু মৌল পরমাণু বেরিয়ে আসবে। আর সেই পরমাণুকে বিদীর্ন করলে বেরোবে তিনটি মৌলিক কনা। অরুন বরুন আর কিরনমালা - মানে ওই ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন আর কি। ইলেকট্রন ঋনাত্মক, প্রোটন ধনাত্মক আর নিউট্রন - ব্যাটা একদম নিউট্রাল মানে চার্জ-বিহীন। এই তিন মাস্কেটিয়ার্স-কে নিয়ে এক একটা পরমাণু গঠিত, সে সংখ্যার রকমফের হতেই পারে। প্রোটন আর নিউট্রন জমিদারের মতো কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত আর ইলেকট্রন নর্তকীর মতো তার চারপাশে ঘুরে চলেছে কিছু কোয়ান্টাম নিয়মে - মানে নির্দিষ্ট কিছু শক্তির কক্ষপথ মেনে। যদি সেই পরমাণুকে বিভিন্ন শক্তিক্ষেত্রে রাখা হয়, তাহলে তার মধ্যের ঘূর্নায়মান ইলেকট্রন (আমরা এখানে সবচেয়ে সহজ পরমাণু হাইড্রোজেন কে নিয়ে কথা বলব। কারন তার বাইরের কক্ষপথে কেবল একটিই ইলেকট্রন বর্তমান) উত্তেজিত হয়ে সে উচ্চতর শক্তির কক্ষপথে চলে যায় আর যখন তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হয়, তখন সেই ইলেকট্রন নেমে আসে নিম্নতর শক্তিকক্ষে আর যে শক্তিটা ছেড়ে দেয় (ফোটন) সেটাই স্পেকট্রাম বা বর্ণালী হিসাবে স্পেক্ট্রোস্কোপে ধরা দেয় বিভিন্ন কম্পাঙ্কে!

 

 

quora

একেবারে সব যাচ্ছে না। ভাগ করে করে দিচ্ছি।

0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)
এ তো গেল সাধারন "ম্যাটার" তত্ত্ব। এবার আসি অ্যান্টিম্যাটারে। এবার ধারনা করুন এমন একটি মৌল যার পরমাণুতে আছে তিনটি ঠিক বিপরীত-ধর্মী কণা সমষ্টি। মানে ইলেকট্রনের জায়গায় পজিটিভ ইলেক্ট্রন বা পজিট্রন, আর প্রোটনের স্থানে অ্যান্টি প্রোটন। তাহলে কেমন হয়? ঠিক ধরেছেন, তাহলে ব্যাপারটা একটু গোলমেলে হয়ে পড়ে ঠিকই তবে এটাও যে সম্ভব সেটা রীতিমত অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল মরিস ডিরাক তাঁর বিখ্যাত "ডিরাক সমুদ্র" (Dirac Sea) থিয়োরীর মধ্যে দিয়ে। সেও হয়ে গেল নয় নয় করে প্রায় নব্বই বছর।

জটিল হয়ে গেল?? তা একটু হওয়ারই কথা। আসলে ব্যাপারটা সোজা ভাবে ব্যাখ্যা করা খুব মুশকিল। তবুও চেষ্টা করা যাক। তার জন্য ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে। এর ব্যাখ্যার মধ্যে মিশে আছে কোয়ান্টাম ধারনা, বিশেষ আপেক্ষিকতা এবং সাধারন আপেক্ষিকতা। এই তিনিটে জিনিস এতটাই দুরূহ যে সহজ কথায় বলতে গেলেই কঠিন হয়ে পড়ে, আর ভুল ব্যাখ্যা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় পুরোমাত্রায়। একে হয়ত সবেচেয়ে সোজা ভাবে বোঝানো যায় গাণিতিক তত্ত্ব দিয়ে। গনিতের আঁকিবুঁকি কেটে ব্যাখ্যা করার মধ্যে একটা অসুবিধা আছে। যখন স্টিফেন হকিং যখন তাঁর প্রথম বই বের করতে গিয়েছিলেন, “দ্য ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম” তখন সম্পাদক মহাশয় তাঁকে সাবধান করে দেন, এক একটি সমীকরণ মানেই, বই এর কাটতি অর্ধেকেরও কম। তাই যথাসম্ভব অগাণিতিক ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব এখানে, যাতে সাধারনের বোধগম্য হয়ে ওঠে বিষয়টি।

অষ্টাদশ শতকের শেষ সময়ে নিউটনিয়ান বলবিদ্যার থেকে বেশ কিছু জিনিস ব্যাখ্যা করা গেল না। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে কিরচফ এবং বোলজম্যান বের করলেন কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ মতবাদ, আর পরবর্তীকালে ম্যাক্সওয়েল বের করলেন তাঁর বিখ্যাত তড়িৎচুম্বক তত্ত্ব। এতদিন আমরা জেনে আসছিলাম যে নিউটনের কথা অনুযায়ী বস্তুর বেগ তার মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল, তা কোনোভাবেই নির্দেশতন্ত্র (reference frame)-র ওপর নির্ভর করে না। নদীতে স্রোতের বেগের দিকে নৌকা চালালে নৌকার বেগের সাথে নদীর গতিবেগ মিলে যাবে আর বিপরীতে চালালে সেটি বিযুক্ত হবে। কিন্ত ম্যাক্সওয়েল নিঁখুতভাবে প্রমান করে ছাড়লেন যেযে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ যে কোনো মাধ্যমে এমনকি মাধ্যম না থাকলেও তার মধ্য দিয়ে আলোর গতিবেগে প্রবাহমান - আবার নির্দেশতন্ত্র পরিবর্তন ঘটলে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। এ হেন ব্যাপারে তো নিউটনের বলবিদ্যা খাটে না, তাহলে উপায়??

ধরি মাছ না ছুঁই পানি ধরনের একটা প্রচেষ্টা করতে গেলেন কিছু বিজ্ঞানী। নিউটনকে কোনোভাবেই সরানো যাবে না, আর ম্যাক্সওয়েলকেও নস্যাৎ করার কোনো উপায় নেই। তাই, বিজ্ঞানীরা এবারে একটা নতুন জিনিসের পত্তন ঘটালেন - সর্বব্যাপী, স্থিতিস্থাপক এক অদ্ভুত মাধ্যম, ইথার। ওনারা বললেন, ধরে নিলেই হয় যে আমাদের চারপাশ ঈথারে ভরপুর, যা আমাদের পঞ্চেন্ত্রিয়ের দ্বারা অনুভূত নয়। এ এমন একটি মাধ্যম যার মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে বস্তুর দৈর্ঘ্য হয়ে পড়ে ছোট - আর সময় হয়ে যায় ধীর স্থির। ব্যাস - আর কী? মার দিয়া কেল্লা!! অংক সব মিলে গেল। কিন্তু এতে কি আর ফাঁকি আটকায়?? সেটা থেকেই গেল - যতদিন না আইনস্টাইন এসে হাল ধরলেন।

আইনস্টাইন এসে তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতা দিয়ে হাতে কলমে প্রমান করলেন, যে ইথার ফিথার একদম বাজে কথা। এরকম কিছুর অস্তিত্ব নেই কোথাও। যা ধ্রুব, তা হলো শুধু আলোর গতিবেগ। যাকে পরম গতি বলা যেতে পারে। আইনস্টাইনের এই বিশেষ আপেক্ষিকতা ব্যাপারটা অসামান্য কিছু যুক্তির ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তবে এটিকে "বিশেষ" বলা হয়, কারণ এ কেবলমাত্র ব্যাখ্যা করে যে পরস্পরের সাথে সমবেগে চলা দুটি নির্দেশতন্ত্রের মধ্যে অবস্থিত সবকিছুর মধ্যে পদার্থবিদ্যার নিয়মগুলি সমান ভাবে সিদ্ধ। বস্তুর ভর, দৈর্ঘ্য এবং সময় তিনটির কোনটিই ধ্রুব নয়। বস্তুর গতির সাথে এসবেরই পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিন্তু এটি ব্যাখ্যা করার পরও আইনষ্টাইনের মাথায় একটি নতুন চিন্তা দেখা দিল। যদি পরস্পরের সাথে সমবেগে চলমান দুটি নির্দেশাক্ষের ক্ষেত্রে পদার্থবিদ্যার সব তত্ত্ব খাটতে পারে তবে ভিন্ন ভিন্ন বেগ বিশিষ্ট নির্দেশাক্ষরা কি দোষ করল? সেখানে কি আলাদা নিয়ম? এবার চলে এল উচ্চতম গণিতের প্রশ্ন এবং নন- ইউক্লিডীয় জ্যামিতির ধারনা। এত দিনের জানা জ্যামিতির সমস্ত ধারনাকে হেলার সরিয়ে দিলেন তিনি। সেই নতুন জ্যামিতি দিয়েই ব্যাখ্যা করলেন এই মহাবিশ্বের নানা অজানা রহস্য। সে বড়ই গোলমেলে জিনিস, কিন্তু আশ্চর্য, আইনস্টাইনের ব্যাখ্যা মিলে গেল অনেক জ্যোতিষ্কের অদ্ভুত আচরণের সাথে। তাদের অনিয়মিত ঘোরাফেরার তাত্ত্বিক এবং গাণিতিক ব্যাখ্যা মিলল আইনস্টাইনের হাত ধরে - আর এটাই হলো খুব সংক্ষেপে সাধারন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব।
0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)
সাধারণ আপেক্ষিকতা তো ১৯১৬ সালের ঘটনা। বরং আমরা ১৯০০ সালে ফিরে যাই। সেখানে ম্যাক্স প্লাঙ্ক আবিষ্কার করেছেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব - তিনি বলছেন যে শক্তির প্রবাহ কিছুমাত্র নিরবিচ্ছিন্ন নয় -বরং সেগুলি কিছু প্যাকেট বা কোয়ান্টার আকারে বিচ্ছুরিত হতে থাকে। আলোকরশ্মির মধ্যে থাকা সেই শক্তির প্যাকেটকে বলা হয় ফোটন। আর এর ফলেই ব্যাখ্যা করা গেল কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ সম্বন্ধীয় যাবতীয় অসামঞ্জস্যের (Blackbody Radiation) - পদার্থবিদ্যায় সূচনা হলো এক নতুন তত্ত্ব। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। সনাতনী পদার্থবিদ্যার থেকে যার পার্থক্য একটি বিশেষ জায়গায় - যে এই বলবিদ্যা গ্র‍্যাভিটিকে অত পাত্তা দেয় না। এর কারবার পরমাণুর ভেতরে অবস্থিত কণার চলন বলন ব্যাখ্যাতে - বাইরের পৃথিবীর চর্মচক্ষে দেখা ঘটনার সাথে এর সম্পর্ক খুব একটা নেই। ভাবসাব দেখে সনাতনী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ আইনস্টাইনের ভুরু কুঁচকে গেল - শেষদিন অবধি সেটি আর সোজা হয়নি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় এত প্রোবাবিলিটি বা সম্ভবনার ছড়াছড়ি দেখে তিনি বিরক্ত হয়ে উঠইলেন আর কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে পরিহাস করে বললেন "ভগবান পাশা খেলেন না।" কিন্তু ভগবান বোধহয় পাশা হাতে নিয়েই কোথাও বসে মুচকি হেসেছিলেন।

কোয়ান্টাম তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে নানা বিজ্ঞানী অসাধারন সব আবিষ্কার করতে থাকলেন, রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল বের করলেন, পারমানবিক কাঠামো বের করলেন নীলস বোর, আবিষ্কার হলো রামন এফেক্ট ইত্যাদি। এসবের মাঝে কিছু নবীন গাণিতিক এবং পদার্থবিদ একটু অন্যরকম আবিষ্কারে মেতে রইলেন। আরউইন শ্রোডিংগার কোয়ান্টাম এর সাথে বিশেষ আপেক্ষিকতাকে মিশিয়ে আবিষ্কার করলেন ইলেকট্রন, প্রোটন, এবং সাব অ্যাটমিক কণার ক্ষেত্রে সময় সাপেক্ষ এবং সময় নিরপেক্ষতায় তরঙ্গায়িত চলন কেমন হতে পারে তার গাণিতিক ব্যাখা।যেমন সাধারন পদার্থের গতিবিদ্যায় F = MA আবিষ্কার করেছিলেন নিউটন, ঠিক সেরকমই আবিষ্কার করলেন শ্রোডিংগার। নিউটনের ক্ষেত্রে যেমন ছুটতে থাকা ছোকরা-কে দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু শ্রোডিংগারের ক্ষেত্রে আপনাকে বলতে হবে কী চাই? গতি মাপবেন না ছুটন্ত ছোঁড়া দেখবেন? যে কোনো একটি হবে বাপু। কারণ এসব কণা তরঙ্গের আকারে আলোর কাছাকাছি গতিবেগে দৌড়ায় আর তাই এসব ক্ষেত্রে সাধারণ বলবিদ্যার ব্যাখ্যা পৌঁছায় না। দেখা গেল, হাইজেনবার্গের “অনিশ্চয়তার নীতি” এর আর একটি বিশেষ গাণিতিক রূপ হলো শ্রোডিংগারের সমীকরণ। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা স্থিরভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো।
0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)

আর এই সময়েই রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করলেন পল ডিরাক। এই অসাধারন প্রতিভাধর বিজ্ঞানী ডিরাককে বলা চলে বিংশ শতকের সবচেয়ে অসামাজিক বিজ্ঞানী। তিনি কথা বলতেন মেপে এবং যেটুকু না বললেই নয় ততটুকু। কেমব্রিজে পড়ানোর সময় ছাত্ররা মজা করে তাঁর নামে এক সূচক বের করে দিয়েছিল। “ডিরাক ইউনিট” – “এক ডিরাক” মানে এক ঘন্টায় একটা কথা। এই দারুণ মেধাবী ছাত্রটি যখন নীলস বোরের কাছে গবেষণার জন্য যান, তখন বোর বুঝেছিলেন যে এ ছেলেটি জানে প্রচুর কিন্তু কথা বলে বড় কম। বিজ্ঞানীদের কবিতার প্রতি ঝোঁককে তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তিনি বলতেন, “বিজ্ঞানীর কাজ হলো প্রকৃতির জটিল ঘটনাকে সহজ করে ব্যাখ্যা করা, আর কবিদের কাজ হলো, সহজ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনার বিরাট জটিল ভাবে বিবরণ দেওয়া” (অধুনা কবিরা এটা পড়ে ডিরাক-কে ফুল ছুঁড়ে মারতেই পারেন, আমার কিছু করার নেই)।

image

ধান ভানতে শিবের গীত গাইলাম কি?? এবার তাহলে ডিরাকেই থাকব। হাজার হোক, উনি অ্যান্টম্যাটারের জনক।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা যত শক্তিশালী হতে লাগল, তত বেড়ে যেতে লাগল তার বিস্তৃতি। শ্রোডিংগার এবং ডিরাক দুজনেই কোয়ান্টামের গাণিতিক ব্যাখ্যার জন্য নোবেল পেলেন, একই বছরে। ডিরাক ততদিনে আবিষ্কার করে ফেলেছেন কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিক্স। এবার গাণিতিক ভাবে চারটি পৃথক কোয়ান্টাম সংখ্যা বা অবস্থা নির্নয় করা হলো। যার মধ্যে একটি তো অদ্ভুতস্য অদ্ভুত। তার নাম- স্পিন কোয়ান্টাম নাম্বার। দেখা গেল, বোসন বলে কণাটি (এ সবই ইলেক্ট্রনের বিভিন্ন কোয়ান্টাম অবস্থার নাম) যা বোস আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব মেনে চলে, তার স্পিন কোয়ান্টাম নাম্বার ভিন্ন অবস্থায় একই থাকে। আর এক হলো গিয়ে ফের্মিয়ন, যা কিনা ফের্মি - ডিরাক স্ট্যাটিস্টিকস মেনে চলতে থাকে, আর এর একটিকে পালটে দিলে তার চার্জই উলটে যায়!! কী সৃষ্টিছাড়া ব্যাপার ভাবুন দিকি। আপনাকে যদি তিনশ ষাট ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, আপনি কি রামবাবুর জায়গায় রহিমবাবু হয়ে পড়বেন? নিশ্চয়ই না? কিন্তু এ ব্যাটা হয়ে পড়ে। পাউলিং-এর এক্সক্লুশন প্রিন্সিপ্যাল ব্যাখ্যা করল যে দুটি ফের্মিয়ন, একটি পরমাণুতে পরস্পর একই শক্তি অবস্থায় থাকতে পারে না। এদিকে ডিরাক ততদিনে স্রোডিংগার সমীকরণ এবং ক্লেইন-গর্ডন সমীকরণ থেকে কিছু বিশেষ গাণিতিক সমাধানে উপনীত হয়েছেন। আসলে ক্লেইন-গর্ডনের সমীকরনে যে ভুলগুলি ছিল, সেগুলো শুধরে দিলেন তিনি, আর বেরিয়ে এল ডিরাক সমীকরণ। ডিরাকের অনেকদিন থেকেই মনে হচ্ছিল, যে আপেক্ষিকতাকে যেভাবে কোয়ান্টামে আরোপ করা হচ্ছে, ক্লেইন–গর্ডন তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। তাই তিনি সমীকরণ গুলো গভীর মনোযোগে দেখতে থাকলেন। আর স্কেলার ফাংশনের জায়গায় নিয়ে এলেন ম্যাট্রিস। আর এই নির্ভুল গাণিতিক তত্ত্বে এসে তিনি দেখতে পেলেন যে তাঁর সমীকরণ একটি অদ্ভুত ফল দেখাচ্ছে। স্থিতিশীল একটি ফের্মিয়নের ক্ষেত্রে এটি প্রযুক্ত হলে সমীকরণ থেকে তার একটি ধনাত্মক গতি শক্তি অবস্থার সমাধান বেরোচ্ছে আর একটি ঋনাত্মক। তার মানে এরকম কি হতে পারে যে ইলেক্ট্রন পজিটিভ?

0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)
গুলিয়ে যাবার আগে ব্যাপারাটা ঝালানো যাক আর একটু। কোয়ান্টাম একটা এমন ধারণা, যার সাথে বাইরের পৃথিবীর মানবচক্ষে দেখা ঘটনার কোনো মিল নেই। তাই একে উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা বেশ দুরূহ ব্যাপার। তবু, তর্কের খাতিরে ধরে নিন এমন একটা ঘর, যেখানে মেঝে থেকে সিলিং অবধি পুরোটাই ঋণাত্মক গতিশক্তি সম্পন্ন ইলেকট্রন দিয়ে পরিপূর্ন। সেখানে আর একটি ঋনাত্মক শক্তির ইলেকট্রন ধারনেরও জায়গা নেই। এই ঘরটিই হলো ডিরাক সমুদ্র (Dirac Sea)। এবার আর একটি পজিটিভ শক্তি সম্পন্ন ইলেক্ট্রন ঢুকতে গেলে তাকে অসীম পরিমাণ শক্তিক্ষয় করতে হবে, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। যে কোন ধনাত্মক গতিশক্তি সম্পন্ন ইলেক্ট্রনের এনার্জি আইনস্টাইনের স্পেশাল রিলেটিভিটি অণুযায়ী তার ভর এবং আলোর গতিবেগের বর্গের গুনফল বা তার থেকে বেশি (>mc2) আবার, ঋনাত্মক ফের্মিয়ন বা ইলেক্ট্রনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারাটা তাই কিন্তু বাকি সব নেগেটিভ (<- mc2) তাই একটি ঋনাত্মক শক্তির ইলেকট্রন বা ফের্মিয়ন ধনাত্মক ফের্মিয়নের ছেড়ে দেওয়া ফোটন খেয়ে যেই উচ্চতর শক্তিস্তরে উঠতে যাবে তখনই তার সাথে ধনাত্মকের দেখা হবে এবং তাদের মিলিত এনার্জি 2mc2 এর সমান হবে। আর তারা মুহুর্তে বিলীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ, নেগেটিভ শক্তি সম্পন্ন ইলেকট্রন সমুদ্রে উচ্চশক্তিস্তরে উন্নীত ইলেকট্রন যেন একটা গর্ত করে বেরিয়ে যায়। প্রথমে ডিরাক ভেবেছিলেন, যে এটি হয়ত প্রোটিন। কিন্ত প্রোটনের ভর তো ইলেকট্রনের থেকে বেশি। আর তাছাড়া, প্রোটন হলে তো পরমাণুটার অস্তিত্বই থাকে না। তাই দেখা গেল, এই ডিরাক সমুদ্রে ছেদ করে পালানো কণা আর কেউ না, ধনাত্মক ইলেকট্রন বা পজিট্রন। মানে ধরে নেওয়া যেতে পারে এমন একটি ইলেকট্রন যা সময়ের সারনী বেয়ে বিপরীতে চলেছে - কারণ শ্রোডিংগারের ফাংশনে সময়কেও মাত্রা ধরা আছে, আইনস্টাইনের স্পেশাল থিয়োরী অনুযায়ী। তাই বলা যায় ডিরাকের সমীকরণই প্রথম অ্যান্টিম্যাটারের ধারনাকে গাণিতিক এবং তাত্ত্বিক স্বীকৃতি দিল।
0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)

এর পরবর্তীকালে অ্যান্ডারসন একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাপারটিকে প্রমান করলেও, অ্যান্টিম্যাটার অনেকদিন অধরাই ছিল। এমনকি ডিরাকের সুখ দুঃখের বন্ধু কোয়ান্টামের সহ জনক হাইজেনবার্গও ব্যাপারটাকে "ফালতু" বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদিনে তা সত্যি ধরা পড়ল। বলা হত, যে প্রচন্ড তাপে, চাপে এবং চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে এই অ্যান্টিম্যাটাররা উৎপন্ন হয়েই নিমেষে ম্যাটারের সংস্পর্শে এসে ধ্বংস হয়ে যায়। আর প্রচুর এনার্জি উৎপন্ন করার সাথে সাথে গামা রশ্মি আর নিউট্রিনো ত্যাগ করে। এসব তাত্ত্বিক কচকচি সত্ত্বেও এই অ্যান্টিম্যাটার অধরাই থেকে গিয়েছিল মানুষের। যদিও, এইসব বৈশিষ্ট্য থেকেই সার্ন এর কণা পদার্থবিদরা হাইড্রোজেনের অ্যান্টিম্যাটারকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছেন।

image

আমাদের দুনিয়া বস্তুতান্ত্রিক। আর সেই বস্তুর প্রতি আমাদের মহাবিশ্বের একটা দুর্বলতা আছে। কিন্তু অ্যন্টিম্যাটারের প্রতি প্রকৃতির বিদ্বেষ অবাক করার মতো। যেখানে ডিরাকের সমীকরণ অনুযায়ী অ্যান্টিম্যাটার ভুরি ভুরি পাওয়ার কথা, সেখানে এদেরই সব থেকে কম পাওয়া যায়। কেন? প্রকৃতি কি নিজের ধ্বংসের কারণ নিজের আস্তিনেই লুকিয়ে রাখতে চান তুরুপের তাস হিসাবে? কিন্তু এতক্ষণ আমরা দেখলাম প্রকৃতির খামখেয়ালি আচরনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোনো জটিল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, শুধু তার যুক্তি আবিষ্কারের যা দেরী। তাহলে সেই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী? সেসব প্রশ্নের উত্তর আজও পাওয়া যায়নি। কেন শুধু ধরা পড়ল হাইড্রোজেন অ্যান্টিম্যাটার? বাকিদের অ্যান্টিম্যাটার কেন এখনও অধরা? হয়তো এই অসাধারণ আবিষ্কারই উত্তর দেবে এইসব প্রশ্নের, নয়ত আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হবে দ্বিতীয় ডিরাকের জন্য, যাঁর জিনিয়াস মাথা জন্ম দেবে আরো এক অসাধারণ সমীকরনের, যা দিয়ে ভেদ হবে আরো এক বিপুল রহস্যের।


  1. তথ্যসূত্র:
    Why Making Neutral Antimatter is Such A Big Deal!
  2. Antimatter - Wikipedia
0 টি ভোট
করেছেন (7,700 পয়েন্ট)

অ্যান্টিম্যাটার হচ্ছে কণার প্রতিরুপী এক ধরনের বিপরীত কণা। সহজ ভাষায় বললে কণার বিপরীত চার্জযুক্ত মৌলিক কণিকা সমন্বয়ে গঠিত একধরনের পার্টিকেল। যার ভর এবং স্পিন অন্য একটি কণিকার সমান, কিন্তু যার তাড়িৎ আধান, ব্যারিয়ন সংখ্যা, লেপটন সংখ্যা প্রভৃতি অন্য কণিকাটির সমমানের অথচ বিপরীতধর্মী।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 264 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 320 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
4 টি উত্তর 297 বার দেখা হয়েছে
28 জানুয়ারি 2022 "রসায়ন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Subrata Saha (15,210 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
1 উত্তর 320 বার দেখা হয়েছে
06 জুলাই 2022 "জ্যোতির্বিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Mahfuzur Rahman RM (9,390 পয়েন্ট)

10,775 টি প্রশ্ন

18,459 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,894 জন সদস্য

46 জন অনলাইনে রয়েছে
3 জন সদস্য এবং 43 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Nafis Hasan

    220 পয়েন্ট

  2. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  3. sobujalam

    110 পয়েন্ট

  4. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  5. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...