মহাবিশ্বের এক তাত্ত্বিক ও অতি চমকপ্রদ বিষয় হল অদৃশ্য বস্তু বা ডার্ক ম্যাটার (Dark matter)।
এটার এই অদ্ভুত নামকরণের পিছনেও কারণ রয়েছে।
সাধারণ বস্তু (Ordinary matter) যেটা দিয়ে আমাদের এই দৃশ্যমান মহাবিশ্ব গঠিত, তাদেরকে আমরা সাধারণত খালি চোখে দেখতে পাই কিংবা না দেখতে পেলেও তার অস্তিত্ব আমরা বের করতে পারি। কিন্তু ডার্ক ম্যাটারের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণই ভিন্ন। সাধারণত কোন বস্তুর উপস্থিতি সনাক্তকরণের জন্য আমরা আলো (electromagnetic wave) ব্যবহার করে থাকি। কোন বস্তুর উপর আলো পড়লে তিন ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে: (১) ঐ বস্তু সমস্ত আলোই শোষণ করে নিতে পারে। যেহেতু বস্তুটি থেকে কোন আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের রেটিনায় পড়ছে না, তাই আমরা বস্তুটিকে কালো দেখি (২) ঐ বস্তু যদি কোন আলো শোষণ না করে সমস্ত আলোই প্রতিফলিত করে, তাহলে বস্তুটিকে আমরা সাদা দেখি (৩) ঐ বস্তুটি যদি সাতটি মৌলিক রঙের মধ্যে কিছু রঙ শোষণ করে বাকিগুলো প্রতিফলিত করে, তাহলে তার উপর ভিত্তি করে বস্তুটিকে আমরা বিভিন্ন রঙের দেখি।
সুতরাং কোন বস্তুর উপস্থিতি সনাক্তকরণের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গ অর্থাৎ আলোর সাথে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা।
এবার ডার্ক ম্যাটার (Dark matter) বা অদৃশ্য বস্তুর কথায় আসা যাক। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই মহাবিশ্বে এমন এক বস্তুর উপস্তিতি রয়েছে যা আলোর সাথে কোনো প্রকার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে না। অর্থাৎ এটার উপর আলো পড়লেও এটা কোন আলো শোষণ কিংবা প্রতিফলনের কোনটিই করে না। সুতরাং, এই বস্তুর উপস্থিতি আলোর সাহায্যে আমাদের কোনদিনও জানা সম্ভব নয়। তাইতো এর নামকরণ করা হয়েছে অদৃশ্য বস্তু বা ডার্ক ম্যাটার (Dark matter)। সাধারণ বস্তু (Ordinary matter) আর ডার্ক ম্যাটার (Dark matter)-এর মধ্যে এটাই হল বড় পার্থক্য।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড মডেলের (standard model of cosmology) ধারণা অনুযায়ী, সমগ্র মহাবিশ্বের মোট ভর-শক্তি (mass-energy)-এর 4.9% হল সাধারণ বস্তু (ordinary matter), 26.8% হল ডার্ক ম্যাটার (Dark matter) এবং বাকি 68.3% হল ডার্ক এনার্জি (Dark energy)।
এমনকি হয়ত আমাদের চারপাশে, হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে এই অদৃশ্য বস্তু বা ডার্ক ম্যাটার (Dark matter), অথচ তা আমাদের ধরা-ছোয়া কিংবা অবলোকনের সম্পূর্ণ বাইরে।
-------------------------------------------------
Ripan Biswas
Gaithersburg, Maryland
04/01/2020