সম্প্রতি ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডরে প্রকাশিত হয়েছে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।
রাতে মোবাইল ফোন বা ট্যাব ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো, ফেসবুক চ্যাটিং কিংবা অনলাইনে ব্রাউজ করা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এর ক্ষতিকর দিকটিকে গুরুত্ব দেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গিগাওম প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, স্মার্টফোন স্ক্রিন থেকে নির্গত কৃত্রিম নীল আলো ঘুমের চক্র নষ্ট করে দেয় এবং স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। গবেষকেরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন যে শরীরে মেলাটোনিনের উত্পাদন প্রক্রিয়ায় স্মার্টফোন বা ট্যাব থেকে নির্গত নীল আলো এই প্রভাব তৈরি করে। মেলাটোনিন হচ্ছে আমাদের শরীরের ঘুম আনার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক। এ ছাড়া ক্যানসারের মতো রোগের বিস্তারে প্রতিরোধ গড়ে তোলে মেলাটোনিন।
সম্প্রতি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এক ভিডিও বার্তাও বলা হয়, নীল আলো আমাদের শরীরে এমন প্রভাব ফেলে যাতে শরীর রাতের বেলাতেও ধারণা করে নেয় সকাল হয়ে গেছে। তারা নিদ্রাহীনতার জন্য রাতের বেলা স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারকে দায়ী করেন।
গিগাওমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘুম চক্র পরিবর্তন করার পাশাপাশি রাতের বেলা মোবাইল বা অন্যান্য যন্ত্রের ব্যবহারে আরও বেশ কিছু ক্ষতি হতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে চোখের সমস্যা।
চোখের ক্ষতির জন্যও দায়ী করা যেতে পারে রাতের বেলা অতিরিক্ত সময় মোবাইলের ব্যবহার। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, রেটিনার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যাতে চোখের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শরীরের মেলাটোনিনের ঘাটতি দেখা গেলে শরীরে সহজেই রোগ বাসা বাধতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের গবেষকেরা বলছেন, মেলাটোনিনের ঘাটতিতে স্তন, গর্ভাশয় ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি হয়।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, নীল আলোর সামনে বেশি সময় থাকার ফলে মেজাজের ওপর প্রভাব পড়তে দেখা যায়। ইঁদুরের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মেলাটোনিনের মাত্রা কম হয়ে গেলে বিষণ্নতার মাত্রা বেড়ে যায়। মন ভালো থাকে না।
গবেষকেরা বলছেন, মেলাটোনিন যেহেতু ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাদের হৃপিন্ডের ছন্দের ওপর এর প্রভাব রয়েছে। হৃদযন্ত্রের ছন্দের পরিবর্তন দেখা দিলে তা শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। হৃদযন্ত্রের এই ছন্দ হচ্ছে দেহের অভ্যন্তরীণ জৈবিক ঘড়ি যা রাতের ঘুম আর দিনে জেগে থাকার বিষয়টি অনুভব করায়।
দেহঘড়ির ওপর প্রভাবের এই বিষয়টি অন্য গবেষণাও দেখা গেছে। এর আগে ২০১২ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা তাঁদের পরীক্ষায় দেখেছিলেন যে, রাতের বেলা জেগে কাজ করলে হৃদযন্ত্রের ছন্দে পরিবর্তন দেখা যায়।
যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টি বৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মায়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টি দেখা দিতে পারে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত চোখ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রেখে তা ব্যবহার করেন। তবে, অনেকের ক্ষেত্রে এ দূরত্ব মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার। সংবাদপত্র, বই বা কোনো কিছু পড়ার ক্ষেত্রে সাধারণত চোখ থেকে গগে ৪০ সেন্টিমিটার দূরত্ব থাকে। চোখের খুব কাছে রেখে অতিরিক্ত সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্ষীণদৃষ্টি সৃষ্টির জন্য যা ভূমিকা রাখতে সক্ষম। গবেষকেরা একে ‘এপিজেনেটিকস’-সংক্রান্ত বিষয় বলেন।
তাহলে কি আমরা রাতে একদম স্মার্টফোন চালাব না কিংবা টেলিভিশন বা কম্পিউটার চালাব না? যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা দীর্ঘক্ষণ ধরে স্মার্টফোনে চোখ না রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। দৈনিক কিছু সময় মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তাঁরা। স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের গবেষকেরা বলছেন, টিভি দেখা বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হবে। এক নাগাড়ে টিভি দেখা বা স্মার্টফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ তাঁদের। এ ছাড়া আলোর মাত্রা ঠিক রাখা বা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন তাঁরা।
Prothom Alo