বাংলাদেশে গাড়ির ভেতর স্টিয়ারিং থাকে ডানদিকে। গাড়িরা রাস্তার বাম দিক ধরে চলে। ওদিকে পৃথিবীর অনেক দেশেই গাড়ি চলে ডানদিক ধরে, এদের স্টিয়ারিং থাকে বামদিকে। এই পার্থক্যের কারণ ব্যাখ্যায় ঐতিহাসিকরা দায়ী করেন ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের ইতিহাসকে।
রাস্তা এলো কোত্থেকে? এর কৃতিত্ব মূলতঃ রোমান সাম্রাজ্যকে দেওয়া হয়।
তারা রাস্তাঘাট বানিয়েছিলো ইউরোপে এবং সেসব রাস্তায় তখন চলতো ঘোড়া। আর পৃথিবীতে ডানহাতি লোক বেশি যেহেতু, তারা ঘোড়ায় উঠতো ঘোড়ার বামদিক থেকে। মনে করুন আজকের দিনের সাইকেলের কথা। ডানহাতিরা সাইকেলে চাপেন সাইকেলের বাম দিকে দাঁড়িয়ে, তাই না?
এই কাজ যদি করতে হয় সাইকেল আপনাকে রাস্তার বাম দিকেই চালাতে হবে। তাহলে রাস্তার পাশ থেকেই সাইকেলে (ঘোড়ায়) উঠতে পারবেন। নয়তো রোড ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে ঘোড়ায় চাপা? উঁহু! আরেকটা ঘোড়া উল্টোদিক থেকে এসে মেরে দেবে না? কাজেই ওরা চলতো রাস্তার বাম দিক ধরে। তাছাড়া বাম দিকে চলার সুবিধা আরও আছে।
এতে করে শত্রু এলে তলোয়ার বের করে সেঁধিয়ে দেওয়ার সুবিধে। বাম হাতটাকে তো রাখছেন রাস্তার বাইরের দিকে। বন্ধুর সাথে দেখা হলে হ্যান্ডশেক করতেও বাড়াতে পারছেন ডান হাত, ঘোড়ার লাগাম তখন বাঁ হাতে ধরে রাখাই নিয়ম।
আমেরিকান সভ্যতায় আবার ডানদিকে চলে বেশি আরাম। কেন? কারণ দেশটা বেশ বড়। একটা ঘোড়া না, রাস্তাগুলোয় সাধারণত চলতো ওয়াগন। চার বা ছয়টা ঘোড়া একত্রে ছুটতো, দু’লাইনে বাঁধা।
চার ঘোড়া সামলাতে হলে কোচোয়ান বসবে কোথায়? পেছনে বাঁদিকের ঘোড়ার বসতো সে। যেনো ডান হাত দিয়ে ডানদিকের সব ঘোড়াকে চাবুক কষে লাইনে রাখা যায়, সামনেরগুলোকেও। আর বাম দিকে বসে যদি ঘোড়া ছোটানো লাগে, তাহলে রাস্তার ডানে থাকা উত্তম। এতে করে উল্টোদিক থেকে আসা আরেকটা ওয়াগনের সাথে লেগে যাচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখা সহজ হচ্ছে।
বুঝতে সমস্যা হলে আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন আমাদের বাসগুলোর স্টিয়ারিং বামদিকে। কারণ ডানদিকের পুরো অংশে বাস ড্রাইভার ডানহাতে চাবুক চালান। বামদিকে বসে যদি আমাদের সাধারণ রাস্তায় বাস ছোটাতে হয়, তো অপরদিক থেকে ছুটে আসা গাড়িগুলোয় ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে না? কারণ, তারা তো ক্রস করবে ডানদিক ধরে।
তাই আমেরিকানরা ঠিক করলো ওরা গাড়ি চালাবে ডানদিক ধরে। তাহলে বামদিক ধরে অপোজিট সাইডের গাড়িগুলো ক্রস করবে। ড্রাইভার কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে কতখানি গ্যাপ রেখে চলা উচিৎ।
ফ্রান্সের ব্যাপারটা তাহলে ব্যাখ্যা করা যাক। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট দুনিয়া দখল শুরু করার আগে তাবৎ ইংল্যান্ড বামদিক ধরেই চলাফেরা করতো। কিন্তু নেপোলিয়ন বললেন, “না। ডানে চলো!” এটা তিনি কেন বললেন কেউ জানে না। হতে পারে ইংলিশ আইন মানবেন না তাই।
হতে পারে তার নিজস্ব কারণ আছে। তবে মোটকথা হলো, ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের তাবৎ কলোনি সেই থেকে চলা শুরু করলো ডানে। কিছু ব্যতিক্রম আছে অবশ্যই। যেমন ইংলিশরা ঘাড়ত্যাড়ামো ঠিকই করেছিলো। তারা বামেই চলতো সব সময়। গাড়ি চলা শুরু হলো যখন, এই চলাফেরার অভ্যাসটা ধরে রেখেই ঠিক করা হলো স্টিয়ারিং হুইলের অবস্থান।
ইংল্যান্ড যাদের কলোনি বানিয়েছিলো তারা সবাই এখনও ডানদিকে বসে স্টিয়ারিং ঘোরায়। ফ্রান্স যাদের কলোনি বানিয়েছিলো তারা এখন গাড়ির বামদিকে বসে স্টিয়ারিং ঘোরায়। কিছু ব্যতিক্রম আছে অবশ্য। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়াও তেমন লেফট হ্যান্ড ট্রাফিক নিয়মে চলে, কারণ আমরা ব্রিটিশ রুলের আন্ডারে ছিলাম স্বাধীনতার আগে। একারণে আমাদের গাড়িরা রাস্তায় থাকে বাম দিকে।
অনেকের ধারণা স্টিয়ারিং ডানে থাকা গাড়ি আর স্টিয়ারিং বামে থাকা গাড়ি স্রেফ মিরর ইমেজ। আসলে তা নয়। শুধু স্টিয়ারিংটাই সরিয়ে ডানে আনা হয়, কিন্তু প্যাডালগুলোর সিরিয়াল সব সময় অপরিবর্তিত থাকে। সিবিএ প্যাটার্ন, অর্থাৎ গাড়ির বাঁদিক থেকে প্রথমে ক্লাচ, তারপর ব্রেক, তারপর অ্যাকসিলারেটর প্যাডাল থাকে লেফট এবং রাইট – উভয় ড্রাইভের গাড়িতেই। ম্যানুয়াল গিয়ারের অবস্থানও থাকে সবটা এক। ১৩৫,২৪৬ থেকে ৫৩১,৬৪২ হয়ে যায় না ওরা।
©