চুল ঝরে পড়া সমস্যাটা নতুন কিছু নয়, আর চুল পড়ারও একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, চালচলনের উপরও এটা অনেকাংশে নির্ভর করে চুল ঝরে পড়ার পিছনে। আমাদের জেনে বা না জেনে এমন কিছু ভুল হয়ে যায় যার কারণে চুল ঝরে পড়া বৃদ্ধি পায়। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক এমন ৮টি কারণ যার ফলে ঝরে যেতে পারে আপনার চুল।
১. রেস্টিং ফেজ এর জন্য চুল ঝরে পড়া
আমাদের মাথায় যত চুল আছে তার সবগুলোরই কিন্তু গ্রোথ হয় না। প্রায় ৯০% এর মতো চুলের গ্রোথ হয় আর বাকি ১০% এর মতো চুল রেস্টিং ফেজ বা বিশ্রামে থাকে। এই চুলগুলোই সাধারণত ঝরে যায়। তবে এর জায়গায় আবার নতুন চুল গজায়। আর বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, প্রতিদিন ১০০টির মতো চুল পড়াটা স্বাভাবিক। আপনার চুল যদি ১০০টিরও বেশি ঝরতে থাকে তার মানে আপনার ১০% এর বেশি চুল রেস্টিং ফেজে চলে গিয়েছে। এর কারণ হতে পারে খাদ্য, জীবনধারা, দীর্ঘস্থায়ী অসুখ ইত্যাদির কারণে। এমনটা যদি হয় তাহলে আপনার একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা ট্রিকলোজিস্ট (Trichologist)-এর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
২. আপনার ডায়েট হেয়ার-ফ্রেন্ডলি নয়
খাদ্যাভ্যাসের উপর চুলের স্বাস্থ্য অনেকটা প্রভাবিত। আপনার খাদ্যাভ্যাস শুধুমাত্র আপনার ওজন এবং সাধারণ স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যই নয় কিন্তু! এটি আপনার চুলের উপরেও রাজত্ব করে থাকে। ভিটামিনের ঘাটতি এবং পুষ্টির অভাবে আপনার চুল পড়ে যেতে পারে বহুগুণে। চিনিযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার এবং রিফাইন্ড করা খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে আপনার চুল ও ঝরে যেতে পারে অতিরিক্ত পরিমানেই। তাই হেয়ার লক করার জন্য আজই আপনার ডায়েটে যোগ করুন প্রচুর প্রোটিন, ওমেগা ৩, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ খাবারসমূহ। এইসব খাবার আপনার চুলকে করবে স্ট্রং ও সিল্কি।
৩. ক্ষতিকর UV রশ্মি এর জন্য চুল ঝরে পড়া
সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি (UV) রশ্মি শুধুমাত্র আপনার ত্বকের ক্ষতিই করে না বরং এটি চুলেরও সমানভাবে ক্ষতি করে থাকে। ইউভি রে আপনার চুলকে ভঙ্গুর, দুর্বল এবং শুষ্ক করে দেয় যার কারণে চুল পড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তাই এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে চেষ্টা করুন সরাসরি সূর্যালোক থেকে দূরে থেকে। এছাড়া ব্যবহার করুন হ্যাট বা স্কার্ফ এবং ছাতাতো অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
৪. চুলে সঠিক পণ্য ব্যবহার না করা
চুল ঝরে পরার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো চুলে সঠিক পণ্য ব্যবহার না করা। ত্বকের মতো চুলেরও আলাদা আলাদা ধরন থাকে। যদি আপনার চুল শুষ্ক হয় আর আপনি ব্যবহার করেন এমন একটি শ্যাম্পু যা তৈলাক্ত চুলের জন্য তাহলে তো সমস্যা হবেই। তাই চেষ্টা করুন মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করারএবং ভালো ফলাফল পেতে চেষ্টা করুন তেল ও শ্যাম্পু কেনার আগে তাতে কী কী উপাদান আছে তা দেখে নেয়ার। আরো ভালো ফলাফলের জন্য একই লাইন থেকে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারগুলো ব্যবহার করুন। এগুলো একই উপাদান দিয়ে তৈরি এবং একে অপরের পরিপূরক।
৫. চুলে অতিরিক্ত হিট দেয়া ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা
কিছুদিন পর পরই চুল কালার করা অথবা চুলে অধিক পরিমাণে কেমিক্যালস ব্যবহার করা চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ। আরো একটি কারণ হলো চুল সবসময় হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকানো এবং স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা। এগুলো আপনার চুলকে ভঙ্গুর করে তোলে।
আর তাই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করার সময় এর কুলিং সুইচটা অন করে নেবেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ফ্যানের বাতাসে চুল শুকাতে পারেন, কারণ এতে আপনার চুল ভালো থাকবে। আর স্ট্রেইটনার ব্যবহারটা খেয়াল রাখবেন চুলে যেন সরাসরি না হয় এবং চুলে হিট প্রটেক্টিভ কিছু লাগানো যেন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৬. অতিরিক্ত টাইট করে চুল বাঁধার জন্য চুল ঝরে পড়া
হাই পনিটেইল বা খোঁপা দেখতে সুন্দর লাগলেও দীর্ঘক্ষণ বেধে রাখার ফলে আপনার চুলের গোড়া আলগা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় আর এতে চুল পড়ার হারও বেড়ে যায়। তাই একই হেয়ারস্টাইল প্রতিদিন না করে চেইঞ্জ করে বাধার চেষ্টা করুন এবং চুলে ঝুটি, খোঁপা ইত্যাদি করার সময় হালকাভাবে বাধার চেষ্টা করুন।
৭. মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এর জন্য চুল ঝরে পড়া
বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও চুল ঝরতে পারে। যদি আপনি কিছুদিনের মধ্যে অ্যান্টি-বায়োটিকের একটি নির্ধারিত কোর্স কমপ্লিট করে থাকেন অথবা গত কয়েক মাসের মধ্যে কোন ধরনের সার্জারি করে থাকেন তাহলে এগুলোর প্রভাবে আপনার চুল ঝরতে পারে। এটা সম্ভব যে কোন সার্জারির ফলে আপনার শরীরের উপর দিয়ে খুব ধকল গেছে বা যাচ্ছে তাহলে এটি হতে পারে চুল পরার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি। তাই এই ধরনের কিছু হয়ে থাকলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং খাবারে বেশি পরিমাণে প্রোটিন যোগ করুন।
৮. ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো
আমাদের অনেকেরই এই অভ্যাসটা আছে যে গোসল সেরে এসে ভেজা চুল আঁচড়ে নেয়া। কিন্তু এটা ঠিক নয় কারণ ভেজা চুল শুষ্ক চুলের চেয়ে অনেক বেশি বিচ্ছেদ প্রবণ। অল্প আঘাতেই গোড়া থেকে উঠে চলে আসে ভেজা চুল কারণ তখন চুলের গোড়া নরম থাকে।
তাই চুলের ভেজা অবস্থায় হাতের আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে জটগুলো যতটা সম্ভব ছাড়িয়ে নিন এবং নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছে চুল গুলো শুকিয়ে নিন। চুল পুরোপুরিভাবে শুকিয়ে যাওয়ার পর চুল আঁচড়াবেন, তার আগে নয়।
চুল ঝরে যাওয়ার কারণগুলোতো দেখে নিলেন, আসলে এগুলো আমরা সবাই কমবেশি জানি কিন্তু সেভাবে পাত্তা দেই না বা জেনেও ইচ্ছেমতো চুলের উপর অত্যাচার করি। কিন্তু যখন চুল ঝরে যেতে যেতে পাতলা হয়ে যায় অথবা অতিরিক্ত চুল পড়া শুরু হয় তখন আমাদের টনক নড়ে। যাই হোক এই ভুলগুলো যাতে আর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত কারণ চুলের সৌন্দর্যের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে আপাদমস্তক সৌন্দর্য।
ক্রেডিট: সাজগোজ