আমরা হয়তো অনেকেই জানি শব্দের তীব্রতা লেভেল পরিমাপ করা হয় ডেসিবলে স্কেলে । কোনো শব্দের তীব্রতা লেভেল মাত্রা যখন ৮৫ ডেসিবল ছাড়িয়ে যায় তখনই তা আমাদের কানের জন্য ক্ষতিকর হওয়া শুরু করে। আর সবচেয়ে আতঙ্গকের বিষয় হলো একটি হেডফোনে সাধারণত ১০০ ডেসিবল বা তার চেয়ে অধিক ডেসিবলের শব্দ উত্পন্ন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হেডফোনের ব্যবহার আমাদের কানের শ্রবনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং আমাদের শ্রবণ শক্তি নষ্ট করে দেয়। মূলত আমাদের কানের গঠন ও শোনার উপায় নির্ভর করে আমাদের কানের বাইরের দিকের অংশে। যার নাম পিনা। এই পিনা শব্দ সংগ্রহ করে এবং তা আমাদের মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। কানের ঠিক ক্যানেলের শেষের অংশে একটি পাতলা পর্দা রয়েছে, যাকে আমরা কানের পর্দা বলে থাকি। এর আসল নাম ইয়ার ড্রাম। এই ইয়ার ড্রামে শব্দের কম্পনগুলো এনার্জিতে রূপান্তরিত হয়। বেশি মাত্রায় হেডফোন বা ইয়ার ফোন ব্যবহার এবং এর তীব্রতা বেশি হলে এই ইয়ার ড্রামের কম্পন বেশি হয় ফলে ইয়ার ড্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আমাদের কানের ভেতরে আছে হেয়ার সেল নামক খুবই পাতলা এবং সুক্ষ এক ধরনের কোষ। যা দেখতে প্রায় চুলের মতো। যখন উচ্চমাত্রার কোনো শব্দ আমাদের কানে প্রবেশ করে তখন এটি মস্তিষ্কে সঙ্কেত পাঠায় এবং এই কোষ আক্রান্ত হতে থাকে । ফলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ক্রমাগত হেডফোন ব্যবহারের কারণে এরকমের ক্ষতি আরো বেশি হতে পারে। তাহলে কি আমরা হেডফোন বা ইয়ার ফোন ব্যবহার করবো না? যেহেতু এতে আমাদের কানের ক্ষতি হয় তাহলে এটি বানানো হয় কেন? আসলে প্রত্যেকটি জিনিস ব্যবহারের নিয়ম আছে। তেমনি হেডফোন ব্যবহারেও কিছু নিয়ম আছে যা আমাদের মেনে চলতে হবে। যে ডিভাইসে আমরা হেডফোন বা ইয়ার ফোন ব্যবহার করবো, সেই ডিভাইসের সর্বোচ্চ ভলিউমের ৪০ % কমিয়ে দিতে হবে। একটানা লম্বা সময় হেডফোন ব্যবহার একদমই করা যাবে না। সারাদিনে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা হেডফোন ব্যবহারকে সার্বজনিন ভাবে নিরাপদ বলে ধরা হয়। হেডফোন বা ইয়ার ফোন ব্যবহার করলে তা একটু বড় সাইজের হেডফোন ব্যবহার করতে হবে, কারণ বড় হেডফোন কান থেকে অনেক দূরে থাকে। এর ফলে সাধারণ হেডফোনের চেয়ে এতে ক্ষতি কম হয়। সাধারণ হেডফোন বলতে ইন ইয়ার ফোন অথাত্ যেগুলো একদমই কানের ভেতরে ঢুকে যায় সেগুলোর কথা বোঝানো হচ্ছে। আর বড় হেডফোন বলতে যেটা পুরো কান ঢেকে রাখে সেটার কথা বুঝানো হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে শব্দের তীব্রতার কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কান মানব আমাদের মানবদেহের অত্যন্ত মূল্যবান অঙ্গ। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন হওয়া উচিত। যদি কখনো আপনি মনে করেন আপনার শ্রবন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বা কানে শুনতে সমস্যা হচ্ছে তাহলে দেরি না করেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
লেখক : মহিউদ্দিন আল মামুন