পোষা প্রাণীর মালিকরা প্রায়শই দাবি করে যে তাদের গৃহপালিত পশুরা কাঁদছে। আবার অনেকেই দেখে থাকবেন যে গরুর চোখে পানি পরতে দেখা যায়। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন হচ্ছে পশুদের (গরু, ছাগল, হাতি) কি সত্যিই মানুষের মতো আবেগ আছে? তারা কি আমাদের মতোই আবেগের বসে কান্না করে? আসুন এই সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান কি বলে।
আপনি যদি কান্নাকে আবেগ প্রকাশ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন, যেমন দুঃখ বা আনন্দ, তাহলে উত্তর হল হ্যাঁ। পশুদেরও আবেগ আছে। তারাও কান্না করে। তবে এটাও সত্য যে তাদের মানুষের মতো এতোটা ইমোশন নেই।
একটা সময় চার্লস ডারউইনও ভেবেছিলেন বানর ও হাতি কাঁদে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে আমরাই একমাত্র প্রাণী যা সত্যিই কান্নায় ভেঙে পড়ে।
এইবার আসি নির্দিষ্টভাবে শুধু গরুর বেলায়। গরুর ইমোশন লেভেল কতটুকু?
মানুষের মতো এতটা প্রকট না হলেও গরু একেবারে বিবেকহীন প্রাণী নয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের জটিল আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে দেখা যায়। আবার আমরা অনেক সময়েই দেখি যে তাদের চোখ দিয়ে গর-গর করে অনবরত পানি পড়ছে।
গরু তার কান্না প্রকাশ করে উচ্চস্বরে ডাকাডাকির মাধ্যমে। গবেষণায় দেখা যায়, তার ভিন্ন ভিন্ন অনূভূতির জন্য একেকবার একেক রকম ভাবে ডাকাডাকি করে থাকে।
এমনকি যখন বিভিন্ন কসাই খানায় একটা গরুকে জ'বাই করার জন্য তাদের নেওয়া হয়, জবাই করার আগ মূহুর্তে তারা তখন তারা কসাইদের উদ্যেশ্য বুঝতে পারে। তারাও মৃত্যুকে উপলব্ধি করতে পারে। আর এই কারণেই জবা'ই করার পূর্ব মূহুর্তে একটা গরুকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। কারণ এই সময়ে গরুর শরীরে অতিতিক্ত স্ট্রেস হরমোন নির্গত হলে মাংসের গুনগত মান হ্রাস পায়। তাই কুরবানী, বিয়ে, এবং অন্যান্য সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের সময় যখন পশু কুরবানী করা হয় তখন এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরী।
আবার আপনারা যারা গবাদি পশু লালন-পালন একটা জিনিস হয়তো খেয়াল করেছেন যে যখন বাজার থেকে নতুন কোনো গরু কিংবা ছাগল ক্রয় করে গোয়ালে আনা হয় প্রথম কয়েকদিন তারা অনেকটা মনমরা অবস্থায় থাকে।প্রথম দুই-একদিন তারা প্রচুর ডাকা-ডাকি করতে থাকে এবং এদেরকে কান্না করতেও দেখা যায়। এর তাদের এমন আচরণের কারণ হচ্ছে মালিককে ছেড়ে একটা নতুন পরিবেশে তারা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা। নতুন একটা স্থানে তারা প্রথম কয়েকটা দিন অনেকটা বিচলিত অবস্থায় থাকে। তবে কয়েকটা দিন কেটে গেলে তারা নতুন স্থানে ঠিকই নিজেদের খাঁপ খাইয়ে নেয়।
তবে একটা কথা মাথায় রাখা জরুরী যে, গরুর চোখ দিয়ে পানি পরছে মানে এই নয় যে সব ক্ষেত্রেই তারা কান্না করছে। এই ব্যাপারে, স্মিথসোনিয়ার জাতীয় চিড়িয়াখানার সিনিয়র কিউরেটর ব্রায়ান অমরাল বলেছেন, প্রাণীরা অশ্রু তৈরি করে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেইশুধুমাত্র তাদের চোখকে লুব্রিকেট করার জন্য। তাছাড়া গরুর চোখ কোনোকিছুর দ্বারা আঘাত পেলে, গরু কৃমিজনিত সমস্যায় ভুগলে, চোখ ধূলাবালির সংস্পর্শে আশা, চোখে শক্ত কোনো কণা পরা, ভিটামিন ও মিনারেল এর ঘাটতির কারণে গরুসহ অন্যান্য পশুদের চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে পারে।
© Shah Reyajur Rahman Raj
Team Science Bee