অশ্রু সাধারণত অক্ষিগোলকের বাইরের উপরের অংশে অবস্থিত ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি (Lacrimal Gland) থেকে উৎপন্ন হয়। গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক 'মার্ক ফেন্সকে' (Mark Fenske) বলেন যে মস্তিষ্কের আবেগপ্রবণ অঞ্চল, হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) ও ব্যাসাল গ্যাংগিলার (Basal Gangila) সাথে ব্রেইন্সটেম-এর (Brainstem) ল্যাক্রিমাল নিউক্লিয়াস যুক্ত। যখন আবেগ (যেমন ব্যাথা বা আনন্দ) অনুভূত হয় তখন ল্যাক্রিমাল অশ্রু উৎপাদন করে।
উল্লেখ্য ল্যাক্রিমাল কেবল আবেগের ফলেই অশ্রু উৎপাদন করে না। ল্যাক্রিমালকে আমরা একপ্রকার স্বয়ংক্রিয় পানি উৎপাদন ও সরবরাহকারী হিসেবে গণ্য করতে পারি। কারণ, প্রতি সেকেণ্ডেই ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি থেকে অশ্রু উৎপাদিত হয় যা প্রোটিনসমৃদ্ধ ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী (Antibacterial)। উৎপাদিত অশ্রু অক্ষিগোলক ও অক্ষিপটের মাঝে পিচ্ছিল স্তরের সৃষ্টি করে ফলে আমরা পলক ফেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মাইকেল ট্রিম্বেল (Michael Trimble) বলেন, “অশ্রু অক্ষিগোলককে আর্দ্র রাখতে প্রয়োজনীয়। এটি প্রোটিনযুক্ত এবং চোখকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় উপাদান ধারণ করে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।”
ল্যাক্রিমালে যখন অতিরিক্ত অশ্রু উৎপাদিত হয় তখন এই অতিরিক্ত অংশ নাসারন্ধ্রের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বাস্তবে ‘চোখের জল নাকের জল’ এক হয়ে যাওয়া ব্যাপারটা সত্য। তাদের উৎপত্তিস্থল এক, কেবল পথ আলাদা। নাকের ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহের এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা নাকের জন্যে ভালো বলে মনে করেন। তবে অতিরিক্ত কান্নার ফলে মাথাব্যাথা হতে পারে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কোনো কোনো গবেষক মনে করেন যে, অতিরিক্ত অশ্রু উৎপাদনের ফলে ল্যাক্রিমালে পানিশুন্যতা (Dehydration) হয়ে থাকে যার ফলে মাথাব্যাথা হয়। আবার অনেকে মনে করেন যে, অতিরিক্ত কান্নার ফলে পেশীগুলো কিছুসময়ের জন্য দৃঢ় হয়ে যায় এবং মাথাব্যাথা অনুভূত হয়।