শিশুরা কি জন্মগতভাবে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
357 বার দেখা হয়েছে
"মনোবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (4,020 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (4,020 পয়েন্ট)
মানবশিশু জন্মগত বিশ্বাসী এটা আমরা জানি। কিন্তু মানব "শিশু জন্মগত ভাবে ঈশ্বরের প্রতিও বিশ্বাসী"- এটা আমার দাবী নয়, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন প্রফেসর জাস্টিন ল.ব্যারেটের দাবি। তিনি এবং তার সহযোগী নিকোলা নাইট এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর তাদের থিসিস পেপারের পরিশুদ্ধিত অংশ দিয়ে " Born believers" নামক বই এই প্রফেসর ব্যারেট প্রকাশ করেন (২০১২)।

 

এমন দাবির কারণ ও যুক্তি নিয়ে তিনি অক্সফোর্ডের এক ডকুমেন্টারিতে বেশ খোলামেলা আলোচনা করেন। সেখানে তিনি বলেন, উন্নয়নমুলক সাইকোলজি, ক্রস কালচার এবং অন্যান্য বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে প্রায় সমস্ত মানুষ, বেশির ভাগই আমরা বিশ্বাস করি যে এই সমস্ত কিছু, যা কিছু আমাদের চারপাশে আছে এগুলো কারো দ্বারা তৈরি ব্যতীত সম্ভব না। আর এই বিশ্বাস এমন না যে আমরা প্রকৃতি বা চারপাশ থেকে প্রভাবিত। যদি আমাদের পরিবেশ এবং অবস্থার পরিবর্তন করে দেয়া হতো শুরু থেকেই তারপরও আমরা এমন বিশ্বাসই নিয়ে বড় হতাম।

 

তিনি আরও বলেন, বাচ্চারা প্রায় ৩ বছর বয়স থেকেই যে সমস্ত সুপারন্যাচারাল অস্তিত্বে বিশ্বাস করে প্রায় বেশির ভাগ সংস্কৃতিতে প্রায় একই। যদিও প্রাপ্ত বয়স্করা মনে করে না তারা ওতোটাও বুদ্ধিমান। এবং এটা খুবই সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে আমার এবং নিকোলা নাইটের "মায়া" শিশুদের উপর করা স্টাডি থেকে। আমরা শুধু মাত্র ক্যাথেলিক সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কে মতামত চাইনি সেই সাথে সূর্য দেবতা, বন জঙ্গলের অতিপ্রাকৃত, এবং অন্যান্য মাইনর বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের ধারণা বড়দের মতো নয়। বরং তারা এই সব কিছুকে 'সুপার স্মার্ট' বলে আখ্যায়িত করেছে,যেনো তারা সব জানে! তারপর বয়স ৭ এর কাছাকাছি এসে তারা সব কিছুকে পৃথক করতে চেষ্টা করে যে কোনটি বেশি জানতে পারে,কোনটি কম জানতে পারে (এখানে বুঝানো হয়েছে বাচ্চারা চারপাশের প্রকৃতি জগতের বিভিন্ন উপাদানকে সবজান্তা বা সুপিরিয়র কিছু ভেবে থাকে)। এরপর তাদের মধ্যে ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে, না সেখানে সুপার পাওয়ারফুল ক্রিয়েটর কেউ আছে যে সব কিছু বানিয়েছেন। কিন্তু এইখানে আরো দেখা যায় শিশুরা এটা কখনো ধরে নেয় না এখানে একটাই প্রভু আছে বা খ্রিস্টান মতোবাদ যা বলে (যেহেতু ব্যারেট খ্রিস্টান তাই তিনি নিজ ধর্মের কথা বলেছেন)। তাদের প্রভুর প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত আছে শুধু সেখানে নিজ নিজ কালচারের বিশ্বাস পরে অভিভাবক স্থাপন করে দেয়। এই বিশ্বাস করার ভিত্তিটা তাদের মধ্যে অরো আগে থেকেই তৈরি হয়ে থাকে।

 

এইতো গেলো প্রফেসর ব্যারেটের বক্তব্য, এখন দেখি অন্যান্য গবেষণা ও রিসার্চ কি বলে।

 

Genius Science জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত, নিবন্ধটি এমন ফলাফল উপস্থাপন করে যা দেখায় যে অতিপ্রাকৃত বিষয়ে শিশুদের বিশ্বাস মূলত তাদের শিক্ষার ফলাফল। আরও, গবেষকরা যুক্তি দেন, "ধর্মীয় ধারণাগুলির এক্সপোজার শিশুদের বাস্তবতা এবং কল্পকাহিনীর মধ্যে পার্থক্যের উপর একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলে।" অন্য কথায়, গবেষণার অন্যতম সহ-লেখক ক্যাথলিন করিভিউ বলেছেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে শৈশবকালে ধর্মীয় ধারণার সংস্পর্শ শিশুদের "আসলে কী ঘটতে পারে সেই ধারণাকে" প্রভাবিত করতে পারে। তিনি আরও বলেছিলেন যে তার গবেষণা থেকে বোঝা যায় যে ব্যারেটের জন্মগত বিশ্বাসীদের থিসিস ভুল - যে শিশুদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি "জন্মগত পক্ষপাত" নেই।

ক্যাথিলিন করিভিউ ও তার সহকর্মীরা একটি কিন্ডারগার্টেনে ৬৬টি শিশুর উপর এক্সপেরিমেন্টাল শিক্ষা প্রদান করেন ৩টি বিষয়ের উপর। ১.ধর্মীয় ২.ঐতিহাসিক এবং ৩.মিস্ট্রি।  

 

সমস্ত বোর্ড জুড়ে, শিশুরা ভেবেছিল ঐতিহাসিক আখ্যানগুলি সত্য। যখন ধর্মীয় গল্পের কথা আসে, অনুমান করা যায় যে ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা সেগুলিকে সত্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে, যখন ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা তাদের কাল্পনিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে। করিভিউর কাছে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল, কীভাবে শিশুরা মিস্ট্রি গল্পকে শ্রেণীবদ্ধ করে: যখন ধর্মনিরপেক্ষ শিশুরা এটিকে ৮৭ শতাংশ রুপকথা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছিল, তখন ধর্মীয় শিশুরা প্রায় ৪০ শতাংশ সময় তা করেছিল।করিভিউ এটি পরামর্শ দেয় যে "ধর্মীয় শিশুদের আসলে কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা রয়েছে।" অন্য কথায়, তিনি বলেছিলেন, "ধর্মীয় এক্সপোজার এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যেভাবে শিশুরা বাস্তব এবং কাল্পনিকের মধ্যে সীমানা চিহ্নিত করে, যা অবিশ্বাসের সম্ভাবনা স্থগিত করার অনুমতি দেয়।"

অর্থাৎ এক কথায় ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা কল্পনা এবং বাস্তবতা আলাদা করতে অনেক ক্ষেত্রেই সক্ষম না।

এখন অনেকেই এজন্য ভাবতে পারেন যে, শিশুদের তাহলে ছোট থেকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া ক্ষতিকর বা অপ্রয়োজনীয়, এই নিয়ে করিভিউ আরও বলেন, "ভালো বা খারাপ নয়।ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তবসম্মত জ্ঞানও উচিত।"

 

এই নিয়ে ব্যারেটকে প্রশ্ন করা হলে তার প্রতিক্রিয়া ছিলো, "যদি এখানে আসল গল্পটি হয় যে অ-ধর্মীয় শিশুরা অদ্ভুত হয়।" ব্যারেট মনে করেন যে এটা উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে করিভিউ-এর গবেষণার জন্য গবেষণাটি ম্যাসাচুসেটসে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ-বিশ্বাসীদের সর্বোচ্চ ঘনত্ব রয়েছে। ব্যারেট ভাবছেন যে ধর্মনিরপেক্ষ শিশু করিভিউ পাওয়া গেছে তারা কি সত্যিই গড় আমেরিকান শিশুর প্রতিনিধি? "এই বাচ্চাদের [এই গবেষণায়] সম্ভবত একটি খুব অদ্ভুত উপায়ে বড় করা হচ্ছে, বেশিরভাগ বাচ্চাদের থেকে আলাদা।"

বাস্তবতাকে বিবেচনা করার জন্য কল্পনা একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ"

 

তবে ২জনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং যুক্তি ভিন্ন হলেও তারা উভয়েই একটি বিষয়ে নিশ্চিত যে, শিশুদের চিন্তা ধারার একটা বড় অংশ তার পরিবার, সংস্কৃতি এবং পারিপার্শ্বিকতার মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়।

 

নাদিয়া ইসলাম

Team Science Bee

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+2 টি ভোট
1 উত্তর 273 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
3 টি উত্তর 366 বার দেখা হয়েছে
11 অক্টোবর 2021 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rafy (130 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
1 উত্তর 254 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 276 বার দেখা হয়েছে
03 মে 2021 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Mohiuddin Alamgir Ka (7,980 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 389 বার দেখা হয়েছে

10,772 টি প্রশ্ন

18,455 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

262,991 জন সদস্য

74 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 72 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  2. AltaPitt1334

    100 পয়েন্ট

  3. MickiVandorn

    100 পয়েন্ট

  4. Donette38S82

    100 পয়েন্ট

  5. YolandaCarin

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা #science পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...