বজ্রপাত কীভাবে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সাহায্য করে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
257 বার দেখা হয়েছে
"পরিবেশ" বিভাগে করেছেন (20,400 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (20,400 পয়েন্ট)

 

বায়ু দূষণ আর প্রাসঙ্গিক জলবায়ু পরিবর্তন- মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমস্যার অন্যতম একটি। অপরিকল্পিত আর মাত্রা-অতিরিক্ত অনবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, লাগামহীন মিথেন ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাস আর উদ্বায়ী দূষক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ  পৃথিবীকে দিন দিন বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে, বসবাসরত জীবজগতকে করছে বিপন্ন। পাশাপাশি মানবসভ্যতার উপর বায়ু দূষণ এর পরিণতি বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মানবদেহে দূষণজনিত রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে আর দূষণজনিত কারণে অকালে ঝরে পড়ছে বহু নিরীহ প্রাণ। 

তবে, বায়ু দূষণের প্রতিরোধ ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছেন এক চৌকস গবেষকদল। গবেষকরা জানতে পেরেছেন,
বজ্রপাত আর এইদ্বারা সংঘটিত রাসায়নিক পরিবর্তন বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। 
পাশাপাশি বজ্রপাত বাতাসের দূষণের জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসগুলোকেও বায়ুমণ্ডলের বাইরে অপসারণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আসলে বিষয়টি গবেষকদের প্রথম নজরে আসে- আকাশে বজ্রঝড়ে আটকে পড়া এক বিমানের উপর পরীক্ষণ করার পর। গবেষকদের করা পরীক্ষার ফলাফলে লক্ষ্য করা যায়, পূর্বের তুলনায় বিমানের ভিতরকার বাতাসের উপাদানের গড় ঘনত্ব আর বাতাসের প্রকৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে- সর্বোপরি বিশুদ্ধতা সূচকে বিমানের বাতাসের মান বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর ঝড়-তাড়া করা সেই বিমানের নানাবিধ পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে , বজ্রপাতের দ্বারা সৃষ্ট অতি শক্তিশালী রাসায়নিক বিক্রিয়া সমূহ প্রচুর পরিমাণে বায়ু-বিশুদ্ধ কারী অক্সিডেন্টস বা ফ্রি রেডিকাল ধরনের রাসায়নিক তৈরি করতে পারে। কর্মরত বিজ্ঞানীরা "সাইন্স" অনলাইন সাময়িকীতে গত ২৯ এপ্রিল, ২০২১ এ উক্ত বিষয়ে একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন।সেখানে বলা হয়, বজ্রপাতের প্রবল শক্তিশালী বিক্রিয়াতে তৈরি হওয়া অক্সিড্যান্টগুলো মিথেনের মতো গ্রিন হাউস দূষকগুলোর সাথে বিক্রিয়া করে কম ক্ষতিকর বা পরিবেশ নিরপেক্ষ যৌগ তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া বাতাসকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আর, সৃষ্ট পরিবেশ নিরপেক্ষ উৎপাদ যৌগগুলো পানিতে দ্রবণীয় হয়ে সন্নিবেশ অণু তৈরি করে, যা সহজেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে পৃথিবীর পৃষ্ঠে চলে আসতে পারে।

গবেষকরা আগে থেকেই জানতেন, বজ্রপাতে সংঘটিত রাসায়নিক পরিবর্তন নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস উৎপাদন করে, যা হাইড্রোক্সিল র‌েডিকাল জাতীয় অক্সিডেন্ট তৈরি করতে পারে। কিন্তু, বিজ্ঞানীদের বজ্রপাত থেকে সরাসরি এতো বেশি পরিমাণে অক্সিডেন্টস তৈরির বিষয়টি সম্পর্কে জানা ছিল না।

তার আগে ২০১২ সালের মে এবং জুন মাসে , নাসার বিজ্ঞানীরা একটি অত্যাধুনিক জেটবিমানের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো, ওকলাহোমা এবং টেক্সাস শহরের বজ্রঝড়ের মেঘে দুটি ভিন্ন অক্সিডেন্টের পরিমাপ নির্ণয় করেছিলেন। একটি ছিল- হাইড্রোক্সিল র‌েডিকাল আর অন্যটি ছিল হাইড্রোপারক্সিল র‌েডিকাল। জেটবিমানের সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, বজ্রপাতের তীব্র তড়িৎ এবং মেঘের অন্যান্য বিদ্যুতায়িত অঞ্চল দ্বারা বায়ুমণ্ডলে উৎপাদিত হাইড্রোক্সিল র‌েডিকাল আর হাইড্রোপারক্সিল র‌েডিকাল অণুগুলোর সম্মিলিত ঘনত্ব বজ্রমেঘের কিছু কিছু স্থানে 1000 পার্টস পার ট্রিলিয়ন ( ppt) অংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বজ্রঝড়ের পূর্বে, বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোক্সিল র‌েডিকালের সর্বাধিক ঘনত্ব ট্রিলিয়ন প্রতি মাত্র অল্প কয়েক অংশ (50-70 ppt) লক্ষ্য করা যায় আর সর্বাধিক হাইড্রোপারক্সিল র‌েডিকাল ট্রিলিয়ন প্রতি 150 অংশ (150 ppt ) নির্ণয় করা হয়েছিল। তাহলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, বজ্রপাতের কারণে প্রচুর পরিমাণে বায়ু বিশোধক রেডিকাল উৎপাদ হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছে। 

বজ্রপাতের এরূপ ব্যাপকহারে বায়ু বিশোধক প্রস্তুতিকে পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া এবং বায়ুমণ্ডল বিষয়ক গবেষক "স্যার উইলিয়াম ব্রুন" এককথায় চরম আশ্চর্যের বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। পরবর্তীতে স্যারের করা ল্যাব পরীক্ষাগুলোতে প্রমাণিত হয়, বজ্রবিদ্যুৎ সত্যিই প্রচুর পরিমাণে অক্সিডেন্টস তৈরি করতে পারে, যা বিমানের অভ্যন্তরীণ বাতাসে বজ্রপাতের কারণেই অক্সিডেন্ট তৈরি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

বর্তমানে স্যার ব্রুন এবং সহযোগী বিজ্ঞানীদের একটি দল বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা করছেন। পাশাপাশি তাঁরা প্রাকৃতিক বজ্রপাতের এরূপ গুরুত্বপূর্ণ শক্তিকে ব্যবহার করে অথবা বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির সহায়তায় কীভাবে আরো কার্যকরভাবে বায়ু দূষণের প্রতিকার তথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করা যায় তা নিয়েও গঠনমূলক আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। 

Fahad Mannan
Team Science Bee

#science #bee #facts #lightning #air

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
3 টি উত্তর 658 বার দেখা হয়েছে
11 মার্চ 2021 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন মেহেদী হাসান (141,850 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 243 বার দেখা হয়েছে
01 জুলাই 2022 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md. Irfan Hakim (250 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 282 বার দেখা হয়েছে
19 জুন 2022 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Mila Hoque (1,260 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 482 বার দেখা হয়েছে
21 ডিসেম্বর 2021 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন বিলাস পাল (4,210 পয়েন্ট)

10,775 টি প্রশ্ন

18,459 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

266,117 জন সদস্য

82 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 81 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Nafis Hasan

    220 পয়েন্ট

  2. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  3. sobujalam

    110 পয়েন্ট

  4. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  5. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...