হাতির দাঁত থাকে ২৬টি, এর মধ্যে সাদা রঙের চকচকে দুটি বড় দাঁত বা গজদন্ত তার শুঁড়ের দুপাশ দিয়ে সুন্দরভাবে বের হয়ে থাকে। হাতির দাঁত বলতে আমরা সাধারণত এ দুটিকেই বুঝে থাকি। প্রশ্ন হলো, এ দাঁতগুলো কেন থাকে? সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য? সৌন্দর্য বাড়ায় বটে, কিন্তু আসলে বেঁচে থাকার জন্যই এ দুটি দাঁত দরকার। হাতির দাঁত দুটি বেশ শক্ত।
অন্য কোনো পশু আক্রমণ করলে হাতি এ দুটি দাঁত দিয়ে আত্মরক্ষা করে। বিপদে পড়লে তেড়ে যায়, গুঁতো দিয়ে অনায়াসে আক্রমণকারী হিংস্র কোনো পশুকে কুপোকাত করে। প্রয়োজন হলে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে আছাড় মারে। এভাবে দাঁত ও শুঁড় হাতিকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।
শুধু তা-ই নয়, হাতি এই দাঁত দিয়ে খাদ্য আহরণও করে। মাটি খুঁড়ে খাদ্য ও খনিজ পদার্থ বের করে খায়, গাছের ছাল ঘষে ঘষে তোলে, যা সে অনেক সময় খায়। শুঁড় দিয়ে গাছের ডালপালা ও লতাপাতা আহরণ করে। অন্য পশুরাও উপকার পায়। হয়তো হাতির মাটি খোঁড়ার ফলে অন্য পশুপাখি পানি ও খনিজ পদার্থ গ্রহণের সুবিধা পায়। তবে এই গজদন্তের কারণে হাতির বিপদও হয়। কারণ, পূর্ব দেশীয় সংস্কৃতিতে দেখা যায় হাতির দাঁতের বেশ চাহিদা।
অনেকে মনে করেন, হাতির দাঁতের তৈরি আংটি বা অন্যান্য গয়না তাঁদের সৌভাগ্য এনে দেয়। আবার হাতির দাঁতের তৈরি গয়না আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। তাই বিভিন্ন দেশে একশ্রেণির অপরাধী চক্র গজদন্ত সংগ্রহের জন্য হাতিকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এক হিসাব অনুযায়ী, এক কেজি গজদন্তের দাম বাজারে তিন হাজার ডলারেরও বেশি হয়ে থাকে। সব দেশেই অন্যান্য বন্য প্রাণীসহ হাতি হত্যা বেআইনি করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও গোপনে বিক্রির জন্য হাতি মেরে দাঁত সংগ্রহ করা হয়। কালোবাজারে বেশ চলে।
এ জন্যই কি অনেক হাতির গজদন্ত থাকে না?
এটা ঠিক যে দাঁত সংগ্রহের কারণে গজদন্তবিহীন হাতির সংখ্যা আজকাল বাড়ছে। কারণ, অপরাধী চক্র হয়তো হাতি হত্যা না করে শুধু দাঁত কেটে নেয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তো স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে দন্তহীন সব হাতির সংখ্যাই কমে যাওয়ার কথা। অথচ দেখা যায়, স্ত্রী-জাতীয় হাতিরই সাধারণত গজদন্ত গজায় কম। এ কারণে তাদের দাঁত থাকে না।
এ পার্থক্য কেন? এর একটি কারণ হয়তো এ–ই, দাঁতের জন্য যদি নির্বিচারে হাতি এবং সেই সঙ্গে স্ত্রী-জাতীয় হাতিও মেরে ফেলা হয়, তাহলে হাতির প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই আজকাল অনেক স্ত্রী-জাতীয় হাতির গজদন্ত দেখা যায় না। এতে একটি সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। অন্তত দাঁত না থাকায় ওই সব স্ত্রী-জাতীয় হাতি বেঁচে থাকে এবং হাতির বংশবিস্তার অব্যাহত রাখে।
তবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। দেখা গেছে, আফ্রিকার মোজাম্বিকে ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের সময় নির্বিচারে হাতি মেরে কালোবাজারে গজদন্ত চালান করা হয়েছে। এই সংঘাতের সময় সেখানে গজদন্তহীন স্ত্রী-জাতীয় হাতি ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫১ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি স্ত্রী-জাতীয় হাতি গজদন্তহীন হয়ে পড়েছে। অপরাধী চক্র আফ্রিকায় অনুমিত ৫ লাখ হাতির মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার হাতি হত্যা করে।
এশিয়ায় স্ত্রী-জাতীয় হাতির গজদন্ত খুব কম দেখা যায়। সে তুলনায় অবশ্য আফ্রিকায় স্ত্রী-জাতীয় হাতির গজদন্ত বেশি।
(collected)