কী বোকার মতো প্রশ্ন, তাই না? বিশাল দেহ নিয়ে হাতি লাফালাফি করলে কি আস্ত থাকবে?
হ্যাঁ, কথাটা অনেকাংশে সত্য। তবে আসল ব্যাপার তা নয়। একটা পূর্ণবয়স্ক হাতির গড় ওজন প্রায় সাড়ে চার টন। এদের পাগুলো শুধু শক্ত কিছু বহন করার উপযুক্ত। শূন্যে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ে শরীরের ওজন বহন করার ক্ষমতা ওই চার পায়ের নেই।
ওপর থেকে পড়লে তার ঝাঁকুনি সামলানোর জন্য শরীরের হাড়ের গঠনপ্রকৃতি যে রকম থাকা উচিত, হাতির শারীরিক গঠন সে রকম নয়। তবে বাচ্চা হাতি যে লাফায় না, তা নয়। কখনো প্ররোচিত হলে বাচ্চা হাতিকে লাফাতে দেখা যায়। ষাটের দশকে একটা সিনেমা দেখেছিলাম, নাম হাতারি। আফ্রিকার ধূসর প্রান্তরে গন্ডার, হাতি, বানর ধরার মজার কাহিনি। সেখানে বাচ্চা হাতিদের নাচতে দেখা যায়। সেটা হলো প্রশিক্ষণ দেওয়া হাতি। কিন্তু সাধারণত হাতি লাফায় না। যদিও হাতি খুব দ্রুতগতিতে হাঁটে, যাকে দৌড়ানো বলা যেতে পারে। কিন্তু একসঙ্গে চার পা মাটির ওপরে ওঠে না, সব সময় দুটি বা অন্তত একটি পা পালাক্রমে মাটিতে থাকে। তার মানে ওরা লাফায় না। কেন?
কারণ হলো, জীবনধারণের জন্য হাতিদের লাফানোর প্রয়োজন হয় না। বাঘ, সিংহ লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়ায়। কারণ, এ গুণ না থাকলে তারা শিকার ধরতে পারত না। না খেয়ে মরতে হতো। হাতি তো বনে–জঙ্গলে লতাপাতা, কলাগাছ খেয়ে বাঁচে। এর জন্য লাফানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আর হরিণ লাফিয়ে লাফিয়ে ছোটে বাঘ-সিংহের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য। এ গুণ না থাকলে হরিণকুলের বংশ কবেই লোপ পেয়ে যেত। কিন্তু হাতির এমন কোনো ভয় নেই। কাজেই তাকে লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়ে পালাতেও হয় না। একমাত্র ১৪ টন ওজনের বাঘ যদি আক্রমণ করে, তাহলে হয়তো হাতিকে কাবু করতে পারবে। সে রকম আশঙ্কা প্রায় নেই। কারণ, একটি বড় ধরনের বাঘের গড় ওজন আধা টনের কম। আর থাকে একমাত্র মানুষ, যার হাতে হাতি মারা পড়তে পারে। প্রাণঘাতী শত্রুর অভাবের কারণেই মূলত হাতি লাফানোর গুণ থেকে বঞ্চিত।
তথ্যসূত্র : প্রথম আলো