ফেসবুক ভিডিওতে এরা এতো খায় কিভাবে? - বিঞ্জ ইটিং - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
5,580 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (15,760 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (15,760 পয়েন্ট)

এখন ফেসবুকে স্ক্রল করলে প্রায়ই চোখে পড়ে অনেক ছেলেমেয়ে "চমচম" করে সামনে ৫-১০ কেজি খাবার সাবাড় করে ফেলে অথবা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কম সময়ে অনেক খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা। দেখতে দেখতে অনেকের কাছে বিষয়টা এখন স্বাভাবিক। কিন্তু আবার অনেকে ভাবি, এতো কম সময়ে এতো বেশি খাবার খায় কীভাবে?

অনেকে হয়তো বলবেন তারা সারাদিন না খেয়ে থাকে বলে খেতে পারে, অনেকে বলতে পারেন তাদের অভ্যাস আছে খাওয়ার বা তাদের হজমশক্তি একটু বেশি। তবে আমি যদি বলি তারা হতে পারে এক ধরনের রোগে আক্রান্ত! হ্যাঁ আপনি ঠিকই পড়েছেন, বিষয়টা স্পষ্ট করতে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

রোগটির নাম হল বিঞ্জ ইটিং ডিসঅর্ডার (বিইডি), যা এক ধরণের খাওয়ার ব্যাধি। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্ষুধার্ত না থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণ খাবার খেতে পারে। মানসিক চাপ বা অস্থিরতাকেই এ রোগের জন্য দায়ী করা হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে স্বল্প সময়ে বেশি খাওয়াতে সে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব করবে, খেতে তার ভালোই লাগবে কিন্তু পরে কেন এত খাবার খেয়ে নিল, এ নিয়ে আফসোস করে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো থাকবে। যেমন-
১. স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত খাওয়া।
২. অস্বস্তিকরভাবে পাকস্থলী পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া।
৩. ক্ষুধার্ত অনুভব না করেও প্রচুর পরিমাণে খাওয়া।
৪. বেশি পরিমাণে খাওয়াতে বিব্রত এবং লজ্জার অনুভূতির কারণে একা একা খাওয়া।
৫. কেন এতো বেশি খেলাম তা নিয়ে নিজের প্রতি অপরাধবোধ বা ঘৃণাবোধ কাজ করা।

এই আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই তাদের অতিরিক্ত খাওয়া, শরীরের আকৃতি এবং ওজন নিয়ে চরম অসুখী এবং হতাশাগ্রস্ত থাকে। বিইডি- এ কেন মানুষ আক্রান্ত হয়, কারণগুলো এখনও স্পষ্ট না, তবে এর পিছনে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর আছে, তা নিয়ে একটু কথা বলা যাক।

১. লিঙ্গঃ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বিইডি বেশি দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ৩.৬% মহিলারা তাদের জীবনের কোন না কোন সময়ে বিইডি-তে ভুগে, আর পুরুষরা ২.১%। এর পেছনে কিছু অন্তর্নিহিত জৈবিক কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

৩. মস্তিষ্কে পরিবর্তনঃ গবেষণা মতে, বিইডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন হতে পারে যার ফলে সে খাদ্যের প্রতি উচ্চ প্রতিক্রিয়া এবং নিজেকে কম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৪. শরীরের আকারঃ বিইডি-তে আক্রান্ত প্রায় ৫০% লোকের স্থূলতা থাকে। তাই ওজনে সমস্যা এমন রোগের গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হতে পারে।

৫. শরীরিক প্রতিচ্ছবিঃ বিইডি-তে আক্রান্তদের প্রায়ই একটি খুব নেতিবাচক শরীরিক গঠন থাকে। তাই শরীর নিয়ে অসন্তোষ, ডায়েটিং এবং অতিরিক্ত খাওয়া বিইডি-র সমস্যা বৃদ্ধিতে আরও বেশি ভুমিকা রাখে।

৬.মানসিক আঘাতঃ মানসিক চাপযুক্ত কিছু ঘটনা, যেমন অবমাননা, প্রিয়জনের মৃত্যু,পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয় বিইডি-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির কারণ। কম ওজনের কারণে শৈশবে বুলিং এর শিকারও এতে অবদান রাখতে পারে।

৭. অন্যান্য মানসিক অবস্থাঃ বিইডি-তে আক্রান্ত প্রায় ৮০% লোকের অন্তত যেকোন একটি মানসিক ব্যাধি যেমন ফোবিয়াস, বিষণ্ণতা, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) , বাইপোলার ডিসঅর্ডার, দুশ্চিন্তা থাকতে পারে।

এখন কথা হচ্ছে, যারা মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একটু বেশি খেয়ে থাকেন, সবাই কি এ রোগে আক্রান্ত?
-না। তাহলে আপনি এ রোগে আক্রান্ত তা কেমনে বুঝবেন, তাও বলে দেয়া উচিত। আপনি যদি টানা তিন মাসে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার এমন কম সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি খাবার খেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি বিইডি-তে আক্রান্ত বলাই যায়। সপ্তাহে ১-৩ বার এমন খাবার খেলে ব্যাপারটা মারাত্মক, আর যদি সপ্তাহে ১৪ বার বা তার বেশি হয়, তাহলে আপনি বিইডি- তে চরমভাবে আক্রান্ত।

বিইডি ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতার ঝুঁকির সাথে সাথে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সাথেও যুক্ত। এছাড়াও ঘুমের সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং জীবনের মান হ্রাস সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও এতে রয়েছে। তাহলে এখন আপনাকে এ রোগের সমাধানও দেয়া দরকার। বলে রাখি, এ রোগের বেশকিছু ঔষধ বর্তমানে পাওয়া যায়, তবে এখনও সবচেয়ে কার্যকর আচরণগত থেরাপি। এমন থেরাপি আপনাকে শেখায় কীভাবে আপনি অতিরিক্ত খাওয়ার চিন্তা বা নেগেটিভ সব চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করবেন।

সবচেয়ে ভালো হয়, বিইডি-এর লক্ষণ দেখা দিলে একজন ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ প্রথমে নির্ধারণ করা প্রয়োজন, আপনি আসলেই এ রোগে আক্রান্ত কিনা, বা রোগের কোন পর্যায়ে আছেন। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, বিইডি- থেকে কম সময়ে মুক্তি পেতে এবং খাবারের সাথে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার আশেপাশের মানুষের সাপোর্ট। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয় তবে বিইডি অনেক বছর স্থায়ী হতে পারে।

Tanjina Sultana Shahin | Team Science bee

#বিঞ্জ_ইটিং #bingeeating #bingeeatinghelp 

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
1 উত্তর 1,719 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 1,033 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 846 বার দেখা হয়েছে
+4 টি ভোট
2 টি উত্তর 302 বার দেখা হয়েছে
02 মার্চ 2021 "প্রাণিবিদ্যা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,490 পয়েন্ট)
+2 টি ভোট
3 টি উত্তর 847 বার দেখা হয়েছে
28 ফেব্রুয়ারি 2021 "প্রাণিবিদ্যা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,490 পয়েন্ট)

10,795 টি প্রশ্ন

18,501 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

482,113 জন সদস্য

90 জন অনলাইনে রয়েছে
9 জন সদস্য এবং 81 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

    680 পয়েন্ট

  2. Fatema Tasnim

    340 পয়েন্ট

  3. Dibbo_Nath

    280 পয়েন্ট

  4. _Polas

    140 পয়েন্ট

  5. Arnab1804

    140 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন
...