১৯৫০ এর দশকে এটা কল্পনাও করা যেতো না যে আমরা একসময় মহাকাশে পাড়ি জমাবো।
কিন্তু গত কয়েক দশকে আমরা দারুণ সব অগ্রগতি সাধন করেছি। আবিষ্কার করেছি বিজ্ঞানের অজানা বহু তথ্য। পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্তের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
এই সংযোগ শুধু পৃথিবীর মধ্যেই সীমিত থাকে নি। আমরা চলে গেছি সুদূর মহাকাশেও।
কিন্তু সব অগ্রগতিই কিছু না কিছু জিনিস পেছনে রেখে গেছে।
মহাকাশে আমরা গেছি, কিন্তু সেখানেও আমরা তৈরি করেছি আবর্জনা।
প্রতিবারই মহাকাশে যখন কোন যান পাঠানো হয়েছে বা স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে তখনই সেটা সেখানে রেখে এসেছে কিছু বর্জ্য। সেই স্তূপ ক্রমশই বড় হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন সময় হয়েছে সেসব পরিষ্কার করার।
আমাদের এই গ্রহের চারপাশে যে মহাকাশ তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অগণিত সব বর্জ্য।
এসব বর্জ্য সেখানে খুব দ্রুত গতিতে ছোটাছুটি করছে।
বিজ্ঞানীর বলছেন, এসব বর্জ্য ভবিষ্যতের যেকোন অভিযানের জন্যেও হুমকি হয়ে উঠেছে।
ব্রিটেনে সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ড. হিউ লুইস বলেছেন, এসব বর্জ্য বহু জিনিস থেকেই তৈরি হয়েছে। সেখানে চালানো যেকোন মিশন বা সেখানে পাঠানো যেকোন মহাকাশ যান শেষ পর্যন্ত বর্জ্যে পরিণত হতে পারে।
"অনেকেই মনে করছেন, এই মহাকাশের আবর্জনা ধারণ করার জন্যে যতো ক্ষমতা আছে ইতোমধ্যেই সেই সীমা পার হয়ে গেছে। এর ফলে ভবিষ্যতে অনেক সংঘর্ষ হতে পারে। আমরা মনে হয়, এই ধারণা প্রমাণ করার জন্যে তথ্যপ্রমাণ এখনও মানুষের হাতে এসে পৌঁছেনি। তারপরেও বলবো, মহাকাশের এই দূষণ এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে এখন তার একটু যত্ন করা উচিত," বলেন তিনি।
অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আমরা এই মহাকাশ দখল করার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি।
আর এই যুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়তই মহাকাশ দূষণ করে চলেছি।
এখন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে কিভাবে এসব আবর্জনা পরিষ্কার করা যায় সে বিষয়ে।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে এরকম বিশেষ একটি অভিযানে প্রথমে কে কাজটা শুরু করবে?
এখন দেখা যাক আমাদের পৃথিবীর কাছের মহাকাশে কি পরিমাণে দূষণ ঘটেছে।
বিজ্ঞানীরা বর্তমানে ১০ সেন্টিমিটারেরও বেশি প্রশস্থ ২২ হাজারেরও বেশি স্পেস জাঙ্কের ওপর নজর রাখছেন। এই আবর্জনার পরিমাণ প্রায় সাত হাজার টন।
যুক্তরাজ্যে সারি স্পেস সেন্টার আগামী বছরে এরকম একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
এটি হবে পরীক্ষামূলক। প্রথমে তারা একটি যান পাঠাবে মহাকাশে। তারপর ওই যান থেকে ছুড়ে ফেলা হবে বিশেষভাবে তৈরি কিছু বর্জ্য। এবং পরে সেখানে জাল ফেলে ওই বর্জ্যটি ধরার চেষ্টা করবে।
উদ্দেশ্য হচ্ছে- পৃথিবীর কক্ষপথে পড়ে থাকা একটি স্যাটেলাইট ধরার কাজ কতোটা সহজ বা কঠিন সেটি পরীক্ষা করে দেখা।
এরকম আরো কিছু পরীক্ষা চালাবেন সারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।
তার একটি হবে মহাকাশেই এই আবর্জনাকে ধ্বংস করে ফেলার পরীক্ষা। এই প্রকল্পেরই একজন বিজ্ঞানী ড. জেসান ফরশো বলছেন, "এই পরিচ্ছন্নতার অভিযান নিয়ে আমরা খুবই উত্তেজনা বোধ করছি।"
"এটা উদ্বোধন করা হবে আগামী বছর। এটা হবে এধরনের প্রথম একটি মিশন যেখানে মহাকাশের আবর্জনা পরিষ্কার করার প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখা হবে।"
এই যন্ত্রটি এখনও তৈরি হয়নি। তবে নির্মাণের কাজ চলছে।
এই মিশনে খরচ হবে ১৫ মিলিয়ন ইউরোর মতো। কিন্তু একেকটি মিশনে টার্গেট করা হবে একটি মাত্র বিশেষ বর্জ্যকে।
তাহলে এতো অর্থ খরচ করে এরকম একটি অভিযান চালানোর দরকার কি?
ড. জেসান ফরশো বলছেন, "মহাকাশের এই আবর্জনা বা দূষণকে আমি তুলনা করতে চাই বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে।"
তিনি বলেন, "এটা এমন এক ধরনের সমস্যা যেটার সমাধানে কেউ অর্থ খরচ করতে চায় না। তবে এটা করা অপরিহার্য্য। ধরুন আপনি হয়তো একশো মিলিয়ন ডলার খরচ করে একটি স্যাটেলাইট পাঠালেন, সেটি সামান্য একটি বর্জ্যের সাথে সংঘর্ষে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তখন আমাদের মনে হবে যে এসব আবর্জনা পরিষ্কারের জন্যে আমরা আরো আগে থেকেই কাজ শুরু করতে পারতাম।"
মহাকাশে এসব বর্জ্য কিভাবে তৈরি হয়, কি পরিমাণে ও কি ধরনের বর্জ্য আছে সেখানে, সেগুলো থাকলে অসুবিধা কি এবং এসব আবর্জনা কি আসলেই পরিষ্কার করা সম্ভব- এসব নিয়ে শুনুন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানী ড. অমিতাভ ঘোষের সাক্ষাৎকার।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু বর্জ্য পরিষ্কারের জন্যেই এই মিশনের কথা বলা হচ্ছে না। এসব পরিষ্কার করা এজন্যেও জরুরী যাতে ভবিষ্যতে কোন মহাকাশ যানের সাথে সংঘর্ষে আরো বর্জ্য তৈরি হতে না পারে সেজন্যেও।
আশঙ্কা হচ্ছে, বর্তমান হারে যদি মহাকাশ দূষণ চলতেই থাকে তাহলে তার বড়ো রকমের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে আমাদের এই পৃথিবীর ওপরেও।
(বিবিসি নিউজ)