ময়নাতদন্ত কোন ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে কোন সন্দেহ তৈরি হলে বা কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে মূলত মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্যই ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম করা হয়।[১] ইংরেজিতে "পোস্ট-মর্টেম" শব্দটি ল্যাটিন থেকে পোস্টের জন্য এসেছে, যার অর্থ "পরে" এবং মর্টেমের অর্থ "মৃত্যু"। এটি প্রথম ১৮৫০ থেকে রেকর্ড করা হয়েছিল।[২]
শবব্যবচ্ছেদ, ১৯ শতক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
অভিধানবিজ্ঞান
ময়নাতদন্ত আরবি ময়না এবং সংস্কৃত তদন্ত মিলে একটি বিশেষণ পদ। অর্থ-অস্বাভাবিক বা আকস্মিক মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের উদ্দেশ্যে শবব্যবচ্ছেদ। ইংরেজিতে "পোস্ট-মর্টেম" শব্দটি ল্যাটিন থেকে পোস্টের জন্য এসেছে, যার অর্থ "পরে" এবং মর্টেমের অর্থ "মৃত্যু"। এটি প্রথম ১৮৫০ থেকে রেকর্ড করা হয়েছিল।[৩][৪] একে Autopsy বিদ্যাও বলা হয়। মৃতদেহ পরিচালনা ও ধোয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি Diener (ডায়নার), ডোম, মর্গ পরিচারক বা ময়নাতদন্তবিদ হিসাবে পরিচিত।
নামকরণ
অটোপসি (Autopsy) শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অটোপসিয়া থেকে। যার অর্থ মৃতদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা। ময়না শব্দটি আরবি বা ফার্সি বা উর্দু থেকে এসেছে, যার অর্থ ভালো করে খোঁজা বা অনুসন্ধান করা। ফলে ময়না তদন্ত মানে হলো ভালো করে তদন্ত করে দেখা। যেহেতু মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকরা এই কাজটি করে থাকেন, এ কারণেই এর নাম হয়েছে ময়না তদন্ত।[৫]
ময়নাতদন্তের ইতিহাস
সতেরশো শতক থেকেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পোস্টমর্টেমের রীতি চালু রয়েছে। তবে তখনকার তুলনায় এখন অনেক আধুনিকভাবে ময়নাতদন্ত করা হয়ে থাকে।[৫]
কখন, কি ধরণের পরীক্ষা করা হয়
মরদেহ থেকে ডিএনএ এনালাইসিস করা হয়। ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা, বিষ খাওয়ানো হয়েছে কিনা বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে কিনা, করোনা হয়েছে বিনা ইত্যাদি। এজন্য পাকস্থলী, লিভার, কিডনি কেমিকাল পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রে মহাখালীর ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথে কেমিক্যাল এনালাইসিস ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা মেডিকেলে প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও ডিএনএ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে।তাদের সবার পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর ফরেনসিক বিভাগ তার উপর ভিত্তি করে রিপোর্ট লিখে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়।[৬]
ময়নাতদন্তের পদ্ধতি
হত্যা, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনার মতো যেকোনো অপমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় প্রথমেই পুলিশ একটি সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। অর্থাৎ মৃতদেহ কী অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এরপর মৃত্যু সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ময়না তদন্ত করতে পাঠানো হয়। মর্গে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকরা সেই সুরতহাল প্রতিবেদন দেখে, প্রথমে মৃতদেহের বাহ্যিক অবস্থার বিশ্লেষণ করেন। সেখানে কোন আঘাত বা ক্ষত আছে কিনা, ত্বক ও জিহ্বার রঙ ইত্যাদি দেখে প্রথম প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এরপরে মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করে মস্তিষ্ক, ফুসফুস, লিভারসহ শরীরের ভেতরটা যাচাই করে দেখা হয়। ফলে শরীরের ভেতরে কোন আঘাত থাকলে, রক্তক্ষরণ বা বিষক্রিয়া থাকলে, সেটি চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন। কোথাও আঘাতের চিহ্ন থাকলে সেটি কীভাবে হয়েছে, তা ভালো করে যাচাই করা হয়। এই কাজটি করতে গিয়ে মৃতদেহের নানা অংশ কেটে দেখতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। এ সময় শরীরের নানা প্রত্যঙ্গও সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ আবার সেলাই করে আগের মতো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। তবে শরীরের অভ্যন্তরীণ কোন কোন অংশ কেটে আরো পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারে পাঠানো হতে পারে।
ময়নাতদন্ত থেকে কী জানা যায়
ময়না তদন্তে বেশ কয়েকটি বিষয় জানার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিষয় হলো মৃত্যু কীভাবে হয়েছে এবং কখন মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা, আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে কিনা, বিষ খাওয়ানো হয়েছে কিনা, রক্তক্ষরণের কোন ঘটনা আছে কিনা- ইত্যাদি বিষয়ও ময়না তদন্তে বেরিয়ে আসে।
কোন মৃত্যুর ময়না তদন্ত করা হয়
ফৌজদারি কার্যবিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, কোন মৃত্যুর ঘটনাগুলোয় ময়না তদন্ত করা হবে। হত্যাকাণ্ড, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, বিষপানে মৃত্যু, শরীরের যদি কোন আঘাতের দাগ থাকে, অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বলে সন্দেহের অবকাশ থাকলেই সেখানে মৃত্যুর কারণ জানার জন্য পোস্টমর্টেম করতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় প্রথমে পুলিশ একটি সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তা কী অবস্থায় মৃতদেহটি দেখেছেন, মৃতদেহের বিস্তারিত বর্ণনা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপর থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়রির পরে পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্ত করার জন্য পাঠিয়ে থাকে। তবে পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হলে,মানসিক হাসপাতালে মৃত্যু হলে,যৌতুকের জন্য মৃত্যু হলে অথবা কবর থেকে মৃতদের ওঠানোর প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এরপর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
তথ্য সূত্র ঃWikimedia